Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরম সঙ্কটে উত্তরের পোল্ট্রিশিল্প: কেবলই ঠকছে খামারী ও ভোক্তারা

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রানী ক্ষেত ও গাম্বুরো রোগে মুরগীর মৃত্যু, ভ্যাকসিনের অকার্যকারীতা, পোল্ট্রি চিকেন ও ফিডের যখন তখন মুল্যবৃদ্ধি সেইসাথে মুরগী ও ডিম বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় ফড়িয়া চক্রের দৌরাত্মের সমস্যায় ধুঁকছে উত্তরের পোল্ট্রি খাত। সংখ্যায় আনুমানিক ৮০ থেকে ১ লক্ষ বড় মাঝারী ও ছোট পোল্ট্রি খামার মালিকরা এখন চরম সংকটকাল পার করছে।
জানা গেছে, প্রায় দুই থেকে আড়াই দশক ধরে নানা সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করে মোটামুটি ভাবে বগুড়া সহ উত্তরের ১৬ জেলায় এখন লক্ষাধিক পোল্ট্রি খামারগুলো আমাদের খাদ্য চাহিদার আমিষের যোগান দিচ্ছে। পোল্ট্রি খাতে উৎপাদিত ব্রয়লার জাতের গোশত উৎপাদক মুরগী ও সোনালী জাতের ডিম উৎপাদক মুরগীর কারণেই বাজারে গরু ও খাসির গোশতের কেজি এখনও হাজার ছাড়িয়ে যায়নি বলে মনে করেণ পোল্ট্রি খামারীরা । দেশীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এখন গার্মেন্টস এর পরেই পোল্ট্রি খাতের অবস্থান।
আবার উত্তরাঞ্চলেই পোল্ট্রি কর্মকান্ডের বিশাল ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। অথচ আড়াই শতক পরেও সাংবাৎরিক মুরগীর মড়ক রোধ করা সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে তথ্য দিয়ে বগুড়া পোল্ট্রি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৃহৎ খামারী মোখলেছুর রহমান মুখতার জানান, বৈরী প্রকৃতির কারণে এবার খরার সময় অতিবৃষ্টি জনীত কারণে বগুড়া সহ উত্তরের অধিকাংশ জেলাতেই সম্প্রতি ‘রানী ক্ষেত ও গাম্বুরো’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে তার নিজের খামারেই মুরগী মরেছে ১০ হাজার। তিনি নিয়ম মেনেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছেন কিন্তু ভ্যাকসিনের অকার্যকারিতাই ঠেকানো যায়নি মুরগীর মৃত্যু।
তিনি দাবী করেণ, মুরগীর মড়ক ঠেকাতে ও ভ্যাকসিন ব্যবসায় অসাধুতা রোধে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা কোনো ভুমিকায় রাকছেননা।
এব্যাপারে বগুড়ার জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগীয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন , মুলত খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র গুলোতে ভালো ফ্রিজিং ব্যবস্থার অভাবেই সেই সাথে আমদানী পর্ব থেকে ধাপে ধাপে ভ্যাকসিন গুলো কুচরা বিক্রয় কেন্দ্র গুলোতে আসার পথেই যতাযথ ভাবে ‘কুল চেইন’ পদ্ধতি অনুসরণ না করা কারণে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা থাকেনা । যা পোল্ট্রি খাতে মড়কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
এদিকে এসংক্রান্ত বিষয়ে পোল্ট্রি মালিকদের অভিযোগ অনুসন্ধান কালে দেখা যায়, বর্তমানে পোল্ট্রি চিক ( বাচ্চা), ফিড ও ভ্যাকসিন ব্যবসার সিংহভাগ চলে গেছে নামী দামী বহুজাতিক কোম্পানীর নিয়ন্ত্রনে। ফলে তারা ইচ্ছামত পোল্ট্রি চিক ভ্যাকসিন ও ফিডের দাম বাড়িয়ে থাকে।
এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ছোট বড় ও মাঝারী ডিলার, ফিড ও ভ্যাকসিন ব্যবসায়ীদের শুরুতে লোভনীয় অফার বিভিন্ন প্রতিশ্রæতি দিয়ে নিজেদের ব্যবসার জালে ফাঁসিয়ে দেয় বড় বড় কোম্পানীগুলো । পরে গুন মানের প্রশ্ন তুললে বা ব্যবসা বন্ধ বা পরিবর্তন করতে চাইলে মামলা মোকর্দমায় ফাঁসানো হয়। বগুড়ার একজন বড় ফিড ডিলার জানালেন, তিনি একটি ফিড কোম্পানীর বৈধ পাওনা ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে তার ডিলারশিপ বাতিল করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ টাকা পাওনা দাবী করে কোর্টে মামলা করা হয়েছে। কোম্পানী কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মর্জি মাফিক ব্যবসা চালাতে রাজী থাকলে মামলা তুলে নেওয়া হবে।
বগুড়ার সাবগ্রাম এলাকার পুরাতন পোল্ট্রি খামারী ও ফিড ব্যবসায়ী শাম্মী পোল্ট্রি খামার মালিক সায়েদুর রহমান সম্প্রতি কয়েকটি ফিড কোম্পানীর মামলার চাপে হতাশায় বুগতে ভুগতে আত্ম হত্যা করেছেন । তার পরিবার এখন দুচোখে অন্ধকার দেখছে।
বগুড়ার প্রবীণ পেল্ট্রি ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ জানা , শত প্রতিকুলতার মধ্যেও তারা হাজার মুরগী ও ডিম উৎপাদনের পরে তা’ বাজারজাত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফড়িয়া চক্রের হাতে। কারণ উত্তরাঞ্চলে পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা এখণ লক্ষাধিক হলেও ফড়িয়ার সংখ্যা হাতে গোনা কজন মাত্র। ফলে ফড়িয়ারা সিন্ডিকেড করে গোশতের মুরগী ও ডিমের বাজার ওঠা নামা করে এতে খামারী বা ভোক্তারা ঠকলেও লাববান হয় ফড়িয়ারাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ