দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত মুছে ফেলার দৃষ্টান্তপূর্ণ দাবি জানিয়েছেন ফ্রান্সের আড়াইশ রাজনীতিবিদ। তারা একটি পিটিশন ইস্যুর মাধ্যমে এই দাবি জানিয়েছেন। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ও অবিবেচক এই রাজনীতিবিদরা বলেছেন, ওই আয়াতগুলিতে নাকি ইহুদী-খ্রীষ্টানদের হত্যা ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আয়াত মুছে ফেলার এহেন দাবি এই মহাগ্রন্থ এবং তার অনুসারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যপী পরিচালিত গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। কোরআনের আন্তরিক ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকমাত্রই জানেন, এতে এমন আয়াত বা আয়াতসমূহ নেই যার শানে নজুল নেই। ফ্রান্সের ওই রাজনীতিবিদদের যদি শানে নুজুলসহ তাদের কথিত আয়াতগুলো পড়তেন, তাহলে উপযুক্ত উত্তর পেয়ে যেতেন। পবিত্র কোরআনে এমন কোনো আয়াত ও শব্দ নেই যা অপ্রয়োজনীয় ও পরিহারযোগ্য। এ কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ্ব নবী সা. এর প্রতি নাজিল হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষনা করেছেন ‘এটা সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা খোদাভিরু লোকদের জন্য পথ প্রদর্শক।’ তিনি এ ঘোষনাও করেছেন ‘নিশ্চয় আমি এই স্মারক (কোরআন) নাজিল করেছি এবং আমিই এর হেফাজত করবো।’
নাজিল হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোরআনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কম হয়নি। এর বিকৃতি-বিনাশের জন্য ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী মহলসমূহ চেষ্টার কোনো ত্রæটি করেনি। আল্লাহর রহমতে কোরআনের কোনো বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়নি। ফ্রান্সের কথিত রাজনীতিবিদরা যে দাবি করেছেন তা অন্যায্য ও উদ্দেশ্যমূলক। বিশ্বের মুসলমানরা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। অবশ্যই আল্লাহ তার গ্রন্থের শ্রেষ্টতম হেফাজতকারী।
ফ্রান্সের গ্রান্ড মসজিদ বু বকরের প্রধান ইমামের মতে, এ দাবি অন্যায় ও হাস্যকর। এটি এ দেশে বিভিন্ন জাতি ও স¤্রদায়ের মানুষের সহাবস্থানের জন্য ক্ষতিকর। বু বদু মসজিদের ইমাম বলেছেন, এটা স্থুল ও হাস্যকর অভিযোগ। আমি নিশ্চিত, যারা পিটিশনটি ইস্যু করেছেন তারা আয়াতগুলোর যে অনুবাদ ও ব্যাখ্যা পড়েছেন তা যথাযথ নাও হতে পারে। অথবা ধর্মীয় টেক্সট পাঠের সঙ্গে অপরিচিতি তাদের উত্তেজিত করেছে। তারা যদি কোরআনের আয়াতগুলোকে হিংসাত্মক বলেন, তাহলে ইঞ্জিলসহ অন্যসব পবিত্র গ্রন্থকেও হিংসাত্মক বলতে হবে।
কোরআন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে পবিত্র ও অনুসরণীয় গ্রন্থ। এ গ্রন্থ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা কারোই উচিত নয়, শোভন নয়। এতে এই গ্রন্থের অনুসারীরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হতে পারে। রাজনীতিবিদ হিসাবে এটা আগেই তাদের বোধের মধ্যে আসা দরকার ছিল। সম্ভবত ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ তাদের ঔচিত্যবোধ জাগরণের অন্তরায় হয়েছে। ফ্রান্স বিশ্বের সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে পরিণত ও খ্যাত। এখানে বিভিন্ন জাতি-ধর্মের লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে সদ্ভাব ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে এবং যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পরিপালন করে আসছে। ফ্রান্সে উত্তর আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশের বিপুল সংখ্যায় মুসলমান বসবাস করে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে সংখ্যায় যেখানে মুসলমানরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ট সম্প্রদায়। এতদিন পাশাপাশি ও এক সঙ্গে বসবাস করার সুবাদে সেখানকার মুসলমানদের সম্পর্কে খ্রীষ্টান ও অন্যদের ভালো ধারণাই থাকার কথা। কথিত রাজনীতিকদের উদ্ভট দাবিতে এর ব্যতিক্রমই লক্ষ্য করা গেছে। এটা দুর্ভাগ্য জনক।
অথচ এই ফ্রান্সের ডা. মরিস বুকাইলি পবিত্র কোরআনের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে এক মুহূর্ত দ্বিধা বা বিলম্ব করেন নি। ঘটানাটি চমৎকার। তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিঁতেরাও (১৯৮১-১৯৯৫)। সে সময় মিশরের কাছে ফেরাউনের মমি নিয়ে গবেষণা করার আগ্রহ প্রকাশ করে ফ্রান্স। মিশর রাজি হয়ে মমি পাঠায় ফ্রান্সে। যারা গবেষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের প্রধান ছিলেন ডা. মরিস বুকাইলি। ফেরাউনের মমিকৃত লাশ পরীক্ষার পর দেখা যায়, তাতে লবনের অংশ আছে এবং তা প্রমাণ করে পানিতে ডুবেই তার মৃত্যু হয়েছে। ডা. মরিস বুকাইলির মনে প্রশ্ন জাগে, কীভাবে তিন হাজার বছর পর লাশ অক্ষত থাকলো? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই তিনি সংস্পর্শে আসেন কোরআনের। তিনি পাঠ করেন কোরআনের এই আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি তোমার দেহ, যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য তা নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।’ তার দৃষ্টি খুলে যায়। কোরআনের সত্যতা সম্পর্কে মনে কোনো সন্দেহ থাকে না। তিনি উচ্চকণ্ঠে ঘোষনা করেন: ‘কোরআন মহাসত্য। আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কোরআনে বিশ্বাসী।’ এরপর তিনি একটি মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটির নাম ‘বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান।’ তার এ গ্রন্থ বিশ্বের বিজ্ঞানীদের অবাক করে দেয়। বহুল পঠিত গ্রন্থটি বিশ্বের ৫০ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলায়ও এর একাধিক অনুবাদ হয়েছে।
ফ্রান্সের কথিত রাজনীতিবিদরা যদি কোরআন ভালোভাবে পাঠ করতেন, জানতেন ফেরাউনের মমির রহস্য উন্মোচনের কাহিনী এবং ডা. মরিস বুকাইলির গ্রন্থটিও সেই সাথে পড়তেন। তাহলে কোরআনের সত্যতা উপলব্ধি করতে পারতেন। তাহলে আর তাদের পক্ষে কোরআনের আয়াতগুলো মুছে ফেলার দাবি তোলার মাধ্যমে অকাটমূর্খতা প্রদর্শন করা সম্ভব হতো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।