পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : বাংলাদেশ ভারতের ভয়াবহ পানি আগ্রাসনের শিকার হয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এক সময়ের নদী মাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো অস্তিত্ব হারাতে হারাতে এখন নদীশূন্য দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শত শত নদ নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। যেগুলো আছে তার অবস্থা শীর্ন খালের মতো। এক সময়ের খরস্রোতা নৌকা বজরা চলা নদী এখন নালা ডোবায় পরিণত। কোনটি বর্ষা মৌসুম এলে জানান দেয় নদীর অস্তিত্ব। বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তি হলো হিমালয়, গারো পাহাড়, নাগাল্যান্ডের পাহাড়, লুসাই পাহাড়, খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেপাল ভারত হয়ে বাংলাদেশে মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে গেছে। অভিন্ন ৫৭টি নদীর মধ্যে ৫৪টি এসেছে ভারত হয়ে। এসব নদীগুলো আর্ন্তজাতিক নদী হিসাবে স্বীকৃত। আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী যেকোন আর্ন্তজাতিক নদীর উপর তীরবর্তী রাষ্ট্রের অধিকার সমঅংশীদারিত্বের নীতির উপর নির্ভরশীল। ১৮৫১ সালের ভিয়েনা সম্মেলনে যা স্বীকৃত। আজ প্রতিবেশী দেশ ভারত সকল রীতি ভঙ্গ করে অভিন্ন নদীগুলোর উপর শত সহ¯্র বাঁধ ব্যারেজ আর নদী সদৃশ্য খালের মাধ্যমে আগ্রাসন চালিয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে পানি শূন্য করার মরণ খেলায় মত্ত। ইতোমধ্যে ভারতের পানি জল্লাদরা অভিন্ন নদীগুলোর উপর প্রায় চার হাজার বাঁধ দিয়েছে। গঙ্গার উপর চারশো বাঁধ ব্যারেজ হাজার হাজার মাইল খাল খনন করার পরও আরো ১৬টি বাঁধ দেবার পরিকল্পনা নিয়েছে। এমনিতে গঙ্গার উৎসমুখ থেকে পথে পথে বিভিন্ন স্থাপনার পর সর্বশেষ বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মালদায় ফারাক্কা ব্যারেজ আর তিস্তা নদীর উপর শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবা ব্যারেজ দিয়ে এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ, পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ব্রহ্মপুত্র, সুরমার পানি আগ্রাসনের ফলে সারা দেশের পানি ব্যবস্থাপনা পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। উল্লেখ্য বাংলাদেশের মোট পানি সম্পদের শতকরা সাত ভাগ পাওয়া যায় বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে। আর বাকী তিরানব্বই ভাগ পানি আসে হিমালয় থেকে উৎসারিত নেপাল ভারতের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদ নদীতে। হিমালয় থেকে আসা নদীগুলোর উপর ভারত ভাটির দেশের কথা না ভেবে এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের যে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে পদ্মা যমুনা নয় বাংলাদেশের সব নদ নদী পানি শূন্য হয়ে পড়বে। গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র মেঘনা বেসিন বলে যে নদী উপত্যকা বিরাজমান; তাতে ভারতের পানি আগ্রাসীরা অসংখ্য সেচ বিদ্যুত অবকাঠামো গড়েছে। ফলে বাংলাদেশে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে মেঘনা ও তার শাখা নদীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সারাদেশের নদ নদীর খন্ডিত চিত্রে ভয়াবহ রুপটি একইভাবে ফুটে উঠেছে। দেশের প্রায় সব নদীতে শুকনো মওসুমে পানি থাকছেনা। নদীর বুকে চাষাবাদ হচ্ছে। নদী নির্ভর সেচ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়। দেশের জনগোষ্টির অর্ধেক মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জিকে প্রজেক্ট ও তিস্তা সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ভূর্গভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। নলকূপতো বটে অনেক ক্ষেত্রে গভীর নলকূপের পানিতেও টান। ভূর্গভস্থ পানিতে আর্সেনিকের বিষাক্ত প্রভাব। হাজার হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্তির পথে পঞ্চাশ প্রজাতির মাছ। ঘড়িয়াল, শুশুকসহ অসংখ্য জলজ প্রাণি। বর্ষা মৌসুমে নদীগুলো বছরে তিন বিলিয়ন টন বালি পরিবহন করছে। নদীতে প্রবাহ না থাকায় মূল নদী ও শাখা নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর কাছে পদ্মার তলদেশ ভরাট হয়েছে আঠারো মিটার। আবার ভারত শুকনো মৌসুমে পানি না দিলেও বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দিচ্ছে অকৃপণ হাতে। এতে করে আসা বিপুল পরিমান পানি আমাদের নদীগুলো ধারণ করতে না পারায় দুকুল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যা ও নদীভাঙনে প্রতিবছর বাস্তচুত্য হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। নদী পাড়ের মানুষের পেশাও বদল হয়েছে। এক ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে নদীকে হত্যা করে বাংলাদেশের উপর ভয়াবহ গজব নামিয়েছে। আপার গঙ্গা ক্যানেল প্রজেক্ট, মধ্যগঙ্গা ক্যানেল প্রজেক্ট ও নি¤œ গঙ্গা ক্যানেল প্রজেক্ট দিয়ে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা। উৎসমুখে গঙ্গার অন্যতম প্রদায়ক নদী ভাগীরতির উপর নির্মাণ করা হয়েছে তেহেরী বাঁধ। উত্তর প্রদেশের কানপুরে হয়েছে নব-কুস ব্যারেজ। আরেক উৎস নদী কর্নালীর উপর বড় আকারের বাঁধ ও বিদ্যুত প্রকল্প করা হয়েছে। কোসি নদীতে বাঁধসহ বিভিন্ন প্রকল্প হয়েছে। রামগঙ্গা নদীতে বহুমুখী প্রকল্প করেছে। গঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম সহায়ক নদী নেপাল থেকে উৎসারিত কোজি গন্ডাক, ঘাগড়া নদীতে ভারত নিজ অংশ বাঁধ নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে ভাটির দেশের পদ্মায় পানি প্রবাহ তলানীতে এসে ঠেকেছে। শুধু গঙ্গা পদ্মা নয় তিস্তা মহানন্দায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুময়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি গজল ডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে সেচ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। দৃষ্টিনন্দন তিস্তা সেচ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর্ন্তজাতিক নদী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নিয়ে ব্যাপক কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের অন্যতম উৎস ও প্রদায়ক রাঙ্গা নদীর উপর বাঁধ নির্মান করেছে। সংকোশ নদীর প্রবাহ ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাগলাদিয়ার পানি বাঁধের ভেতরে প্রত্যাহার করছে। লাংপি নদী, কপিলি নদী, সুবানসিড়ি নদী উপনদী উমিয়ামের পানি বাঁধ দিয়ে সরিয়ে নেয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদে স্বাভাবিক পানির ধারা ব্যাহত হচ্ছে। এরফলে যমুনা নদীতেও পানির প্রবাহে টান পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য আরেকটি দু:সংবাদ হলো বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ এ বাঁধের ফলে সুরমা কুশিয়ারা নদী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুরমা কুশিয়ারা মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছে বিশাল মেঘনা। এত কিছুর পরও গঙ্গার উপর ভারত মরার উপর খাড়ার ঘার মতো আরো ১৬টি সংযোগ প্রকল্প নিয়েছে। নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলো আর্ন্তজাতিক নদী হিসেবে স্বীকৃত। ফলে এসব নদীর উপর কিছু করতে গেলে আর্ন্তজাতিক আইন মেনেই করতে হবে। পানি সম্পদ ব্যবহারের আর্ন্তজাতিক আইন হলো একটি নদী দু’তিনটি দেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয় তবে এসব নদীর পানি সম্পদের ব্যবহার আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। আর্ন্তজাতিক নদী সম্পদের তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সুষম বন্টন নীতি আজ স্বীকৃত। আর্ন্তজাতিক নদীর ব্যবহার সম্পর্কে ১৮১৬ সালের ভিয়েনা সম্মেলন ও ১৯২১ সালে আর্ন্তজাতিক দানিয়ুব নদী কমিশন প্রণীত আইনে এই নীতির উল্লেখ আছে। বিশ্বে ২১৪টি নদী রয়েছে যে নদী গুলো একাধিক দেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত। এসব নদীর বেশীর ভাগ পানি সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে আর্ন্তজাতিক নীতিমালার মাধ্যমে। কলরোডা নদী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মেক্সিকোর বিরোধ ইউফ্রেটিস নদী নিয়ে সিরিয়া সম্পর্কের বিরোধ কিংবা জর্ডান নদী নিয়ে ইসরাইল ও জর্ডান। লা প্লাটা নিয়ে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বিরোধ এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মেকং নদী যে ছয়টি দেশের মধ্যেদিয়ে প্রবাহিত। দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কও ভাল না। বৈরিতার পরও আর্ন্তজাতিক আইন মেনে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে নিয়েছে। এমনকি চির বৈরী দেশ ভারত পাকিস্তান আর্ন্তজাতিক পানি আইনের মাধ্যমে সিন্ধু নদীর পানি বন্টনে সমঝোতা করেছে। অথচ ভারতের প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্রের দাবীদার বাংলাদেশের অভিন্ন ৫৪ নদীর পানি নিয়ে চরম বৈরিতা দেখাচ্ছে। নদীগুলোর উপর পানি আগ্রাসন চালিয়ে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। পানি চুক্তি নিয়ে করেছে চরম প্রতরণা। গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে চুক্তি হলেও বাংলাদেশ চারদশকে কখনোই চুক্তি মোতাবেক পানি যায়নি। আর্ন্তজাতিক সকল রীতিনীতি ভঙ্গ করে বাংলাদেশকে পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। সমস্যাকে জিইয়ে রেখে কৌশলের মাধ্যমে একের পর এক তাদের স্বার্থ হাসিল করে চলেছে। বাংলাদেশ ভারত চীন নেপাল ভুটানকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম গঠন করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত হবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অন্যান্য আলাপ আলোচনার পাশপাশি শুধ গঙ্গা, তিস্তা নিয়ে আলোচনা নয়। অভিন্ন সবকটি নদীর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করবেন। প্রয়োজনে আর্ন্তজাতিক আদালতে যেতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।