Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুনের মামলায় সাক্ষি হওয়ায় তিন বছর এলাকাছাড়া ৮ পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৮, ৯:০৭ পিএম
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের একটি খুনের মামলায় সাক্ষি হওয়ায় তিন বছর ধরে এলাকাছাড়া রয়েছে ৮ পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যদের বাড়ী ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। খুনের মামলার আসামীদের অত্যাচার সইতে না পেরে এলাকাছেড়ে যাওয়া ৮ পরিবারের বসতভিটা এখন বিরান ভুমিতে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে ঐ ৮ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর ভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। একের পর এক হুমকি ও প্রাননাশের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাড়ী-ঘরের আসবাবপত্র খুলে নেবার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ও গাছ কেটে নিয়েছে প্রভাবশালী চক্রটি। ভুক্তভোগী আট পরিবারের সদস্যরা দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী, মামলা সূত্র ও সরেজমিন এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী গ্রামের বকু মাতুব্বরের মেয়েকে অপহরন করে স্থানীয় একটি চক্র। এ নিয়ে বকু মাতুব্বরের স্ত্রী মেরেজান বেগম থানায় মামলা করে। এ মামলায় আসামীদের কয়েক জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়। এরই জের ধরে আসামীরা ২০০৪ সালে খুন করে বকু মাতুব্বরকে। বকু মাতুব্বরের খুনের মামলার প্রধান সাক্ষি ছিলেন তার ভাই টুকু মাতুব্বর। এ মামলায় আসামীদের যাবজ্জীবন সহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয় আদালত। প্রভাবশালী মহলটি ক্ষুব্দ হয় টুকু মাতুব্বরের উপর। বিগত ২০০৬ সালে টুকু মাতুব্বরকে স্থানীয় বাজারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় আসামী করা হয় ৭ জনকে। এ হত্যা মামলায় সাক্ষি হয় ৮ জন। মামলার পর থেকে আসামীরা মামলাটি তুলে নিতে বাদী পক্ষকে বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। কিন্তু বাদী পক্ষ মামলা তুলে না নেয়ায় বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল আসামীরা। টুকু মাতুব্বর হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হবার পর বেপরোয়া হয়ে উঠে আসামীরা। আসামী পক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে মামলার সাক্ষি মিরান কাজী, আলম কাজী, ওহাব তালুকদার, ইবাদত মাতুব্বর, মুক্তার হোসেন, মকিম মাতুব্বর, মেরেজান বেগম ও লিলি বেগম বাড়ী ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। আসামী পক্ষের অত্যাচার সইতে না পেরে তিন বছর আগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় ৮ পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে এসব পরিবারের সদস্যরা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানের আত্বীয়-স্বজনদের ও ভাড়া বাড়ীতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। টুকু হত্যা মামলার বাদী শাজাহান মাতুব্বর জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে আমার দুই ভাইকে হত্যা করে। মামলা করায় আমাদের পরিবারের আত্বীয়-স্বজনদের উপর নারকীয় অত্যাচার নেমে আসে। মামলা তুলে না নেয়ায় একের পর এক হামলা চালিয়ে বাড়ী-ঘর ভাংচুর করে সবকিছু লুটপাট করে নেয়। আসামীদের অত্যাচার থেকে প্রান বাঁচাতে আমাদের ৮ পরিবারকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এলাকা ছাড়ার পর ৮ পরিবারের সদস্যরা মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছে। আসামীদের ভয়ে এলাকায় ঢুকতে সাহস পাচ্ছিনা। রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও তাদের পক্ষে। বর্তমানে হত্যা মামলাটির বিচার শেষ পর্যায়ে ফলে আসামীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের হুমকি দিচ্ছে প্রানে মেরে ফেলার। প্রভাবশালীদের হাত থেতে প্রান বাঁচাতে এবং বাড়ী-ঘরে ফিরতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানান, ৮ পরিবার এলাকাছাড়া রয়েছে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


 

Show all comments
  • Hafijur ২২ মে, ২০১৮, ৯:৩১ এএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন বাংলা ছবি ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাক্ষি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ