যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
গত ৮ মার্চ থেকে ছেলেদের আর তার এক সপ্তাহ বাদে (১৫ মার্চ) শুরু হয় মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপের লড়াই। উত্তেজনার পারদে ঠাঁসা কিছু ম্যাচ উপহার দিয়ে গেল সপ্তাহে ক্যারিবীয়ান ‘চ্যাম্পিয়ন্স ড্যান্সে’ শেষ হলো এবারের আসর। স্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পুণরুদ্ধার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরুষ দল। আর মেয়েদের টি-২০-তে একচ্ছ্বত্র আধিপত্য বিরাজ করা টানা ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নেয় ক্যারিবীয়ান নারী দল। এই প্রথম কোন বিশ্ব আসরের একই সাথে দুই বিভাগের শিরোপা একই দেশের দুটি দলের হাতে উঠলো।
টি-২০ বিশ্বকাপ খেলাই তাদের জন্য হয়ে পড়েছিলো অনিশ্চিত। এমনকি বিশ্বকাপে খেলার জন্য অনুশীলন জার্সিই ছিলো না তাদের। এছাড়া ভারতে খেলতে আসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থও ছিলো না তাদের ফা-ে। এত কথা যাদের নিয়ে সেই গেইল-স্যামিরাই বিশ্বকাপ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় জিতলেন ট্রফি, দান করে গেলেন অর্থ, জিতলেন মানুষের মন!
ভাগ্য থাকলে কেউ তা খন্ডাতে পারেনা। এই মুহূর্তে গেইলদের চেয়ে বেশি আনন্দে আর কে আছে! ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারী দলের পাশাপাশি পুরুষদলও একই দিনে চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে আনন্দের পাল্লাটা একটু বেশিই ভারি। এ বছরটাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বছর বললে ভুল হবে না। দুটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপার পাশাপাশি অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপের ট্রফিও জিতেছে ক্যারিবিয়ান যুবারা। শেষ ওভারে চার বলে চার ছক্কা মেরে বিনোদনের ষোলকলা পূর্ণ করা ড্যারেন স্যামিরা তাদের বিশ্বকাপ জয়ে অর্জিত অর্থ থেকে একটা অংশ দান করলেন কোলকাতায় অবস্থিত মাদার তেরেসা মিশনারিজে! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের ম্যানেজার রল লুইস এই অর্থ তুলে দেন মিশনারিজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। অসাধারণ বিশ্বজয়ে বিশ্ববাসির মন জয় করে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। তাদের এই মহানুভবতা মনে রাখবে সবাই।
ভারতে হওয়ায় স্বভাবতই ধরা হচ্ছিলো আসরজুড়েই থাকবে ব্যাটসম্যানদের দাপট। আসর শেষে জয় হয়েছে সেই ব্যাটসম্যানদেরই। ৩ ম্যাচে চারটি দুইশতাধিক রানের স্কোর দেখেছে ক্ষুদ্র ফরম্যাটের এই বিশ্বকাপটি। সেঞ্চুরি দেখা মিলেছে দু’টি- একটি বাংলাদেশের তামীম ইকবালের (১০৩*, আসরের সর্বোচ্চ ইনিংস), অপরটি ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলের (১০০)। একটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটিসহ ৬ ম্যাচে ২৯৫ রান নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তামীম। এমন দু’জন মারমুখী ব্যাটসম্যানকে পেছনে ফেলে আসর সেরার পুরস্কারও উঠেছে আরেক বিষ্ফোরক ব্যাটসম্যান ভিরাট কোহলির হাতে। সেঞ্চুরি না পেলেও তিনটি ফিফটি (৮৯*, ৮২*, ৫৫*) দিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা এই ভারতীয় ওপেনারের সংগ্রহ ২৭৩। সেমিফাইনালে বল হাতেও পেয়েছেন সাফল্য, ১/১৫।
এতো গেলো ব্যাটসম্যানদের উপাখ্যান। বোলারাও এবার আলো ছড়িয়েছেন সমানতালে। সব মিলিয়ে এক ম্যাচে কোন বোলার ৪ উইকেটের দেখা পেয়েছেন ৬ বার। ৫ উইকেটও আছে দু’জনের ঝুলিতে- বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান আর অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফকনারের। সবাইকে ছাপিয়ে ৭ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে তালিকার সবার ওপরে নতুন বিস্ময় আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি। তবে সেরা বোলিং ফিগারটা কিন্তু মুস্তাফিজেরই, ৫/২২।
এই বছরটা বোধ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই। এইতো মাস দেড়েক আগে বাংলাদেশ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা উড়িয়ে নিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুবারা। তবে অন্যদের মধ্যে পাদ-প্রদীপের নিচে নিজেদের আলোকিত করে রেখেছিলো বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রান (২৯৫), সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস (১০৩*)- দুই-ই তামী ইকবালের। বোলিংয়ে সেরা ফিগারটিও কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের দখলে (৫/২২)। ফিল্ডিংয়ে সেরা ১০ ক্যাচের দুটিই সৌম্য সরকারের। এত কিছু অজনে চ্যম্পিয়ন না হয়েও দু’হাত ভরে দিয়েছে টি-২০তে নিজেদের পায়েল নিচে মাটি খুঁজে পাওয়া অধিনায়ক মাশরাফিকে।
বোলার
টি-২০ বিশ্বকাপে সেরা ১০
ম্যাচ/ইনি. উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
মো. নবি (আফগানিস্তান) ৭/৭ ১২ ৪/২০ ১৩.৬৬ ৬.০৭ ১/০
রশিদ খান (আফগানিস্তান) ৭/৭ ১১ ৩/১১ ১৬.৬৩ ৬.৫৩ ০/০
মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড) ৫/৫ ১০ ৪/১১ ১১.৪০ ৬.২৭ ১/০
ইশ সোধি (নিউজিল্যান্ড) ৫/৫ ১০ ৩/১৮ ১২.০০ ৬.১০ ০/০
ডেভিড উইলি (ইংল্যান্ড) ৬/৬ ১০ ৩/২০ ১৫.৯০ ৭.৫৭ ০/০
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ৭/৬ ১০ ৪/১৫ ১৬.৬০ ৭.২১ ১/০
মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ) ৩/৩ ৯ ৫/২২ ৯.৫৫ ৭.১৬ ০/১
স্যমুয়েল বদ্রি (উইন্ডিজ) ৬/৬ ৯ ৩/১২ ১৩.৭৭ ৫.৩৯ ০/০
আন্দ্রে রাসেল (উইন্ডিজ) ৬/৬ ৯ ২/২৩ ২১.০০ ৭.৮৭ ০/০
ডোয়াইন ব্রাভো (উইন্ডিজ) ৬/৬ ৯ ৩/৩৭ ২১.১১ ৭.৯১ ০/০
ব্যাটসম্যান
টি-২০ বিশ্বকাপে সেরা ১০
ম্যাচ/ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
তামীম ইকবাল (বাংলাদেশ) ৬/৬ ২৯৫ ১০৩* ৭৩.৭৫ ১৪২.৫১ ১/১
ভিরাট কোহলি (ভারত) ৫/৫ ২৭৩ ৮৯* ১৩৬.৫০ ১৪৬.৭৭ ০/৩
জো রুট (ইংল্যান্ড) ৬/৬ ২৪৯ ৮৩ ৪৯.৮০ ১৪৬.৪৭ ০/২
মো. শাহজাদ (আফগানিস্তান) ৭/৭ ২২২ ৬১ ৩১.৭১ ১৪০.৫০ ০/১
জস বাটলার (ইংল্যান্ড) ৬/৬ ১৯১ ৬৬* ৪৭.৭৫ ১৫৯.১৬ ০/১
জেসন রয় (ইংল্যান্ড) ৬/৬ ১৮৩ ৭৮ ৩০.৫০ ১৪৮.৭৮ ০/১
মারলন স্যামুয়েলস (উইন্ডিজ) ৬/৬ ১৮১ ৮৫* ৩৬.২০ ১১২.৪২ ০/১
ডি কক (দ.আফ্রিকা) ৪/৪ ১৫৩ ৫২ ৩৮.২৫ ১৪২.৯৯ ০/১
সাব্বির রহমান (বাংলাদেশ) ৭/৭ ১৪৭ ৪৪ ২৪.৫০ ১২৩.৫২ ০/০
উসমান খাজা (অস্ট্রেলিয়া) ৪/৪ ১৪৩ ৫৮ ৩৫.৭৫ ১৩৭.৫০ ০/১
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।