পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জমে উঠেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার ইফতার বাজার। গতকাল শুক্রবার প্রথম রোযায় ইফতারির বাজারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। শুধু পুরান ঢাকা নয়, রমজান মাসে পুরো রাজধানী জুড়েই ফুটপাত আর রাস্তায় ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসবে মৌসুমী দোকানীরা। দুপুর নাগাদ বসে মাগরিবের আগেই বেচাবিক্রি শেষ। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় অনেক বেচাকেনা। লাভ তুলনামূলক বেশি। এই লাভেও কারো কারো পোষায় না। মিশিয়ে দেয় ভেজাল। কেউ কেউ জেনে শুনেই ইফতারি সামগ্রীতে মিশিয়ে দিচ্ছে কেমিক্যালরুপি বিষ। সব মিলে ইফতার সামগ্রী মানেই ভেজালের মহোৎসব। বিক্রেতাদের ভাষ্য, বেচাকেনা বেশি হলেও ইফতারি সামগ্রীতে ভেজালের পরিমাণও থাকে বেশি। অল্প সময়ে মানুষ কেনে বলে মান যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। সূত্রাপুর মীরহাজিরবাগের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার বলেন, ইফতারির কিছু কিছু জিনিসে রঙ বা কেমিক্যাল না মেশালে মানুষ কিনতেই চায় না।
এদিকে, রমজান উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশেই শুরু হয়েছে ভেজালবিরোধী অভিযান। কয়েক দিন আগে পুরান ঢাকায় মদিনা গ্রæপের বিপুল পরিমাণ পঁচা খেজুর ও বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ীতে এক হাজার মণ আম জব্দ করার ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছে। ভেজালবিরোধী অভিযান জোড়ালো হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন ভেজাল কারবারীরা। গতকাল শুক্রবার যাত্রাবাড়ী আড়তে কোনো পাকা আম বিক্রি হয়নি। বিক্রেতারা জানান, অভিযানের ভয়ে কেমিক্যালমিশ্রিত আম বিক্রির সাহস করেনি কেউ।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জানান, রমজানে কমপক্ষে ৩০টি খাদ্য ও পণ্য সামগ্রীকে টার্গেট করে অভিযান পরিচালিত । এর মধ্যে ইফতারি সামগ্রীও রয়েছে। তিনি বলেন, রমজানে খাদ্য সামগ্রীর চাহিদা বেশি থাকে বলে সে সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে ওঠে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তারা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বা পানীয় রমজানে বিক্রি করে থাকে। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে আমরা ২৪ হাজার সফট ড্রিঙ্কস জব্দ করি। এগুলোর মেয়াদ ২০১৭ সালেই শেষ হয়ে গেছে। অথচ মেয়াদকাল টেম্পারিং করে সেগুলো রমজানে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিলো। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে বেশি বিক্রি হয় ছোলা, পিঁয়াজু, বেগুনী, চপ, জিলাপী, খেজুর, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি। তেলে ভাজা এসব খাদ্য সামগ্রীকে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হয় কাপড়ের রঙ বা টেক্সটাইল কালার। কম খরচে বেশি লাভের আশায় এক শ্রেণির লোভী ইফতার বিক্রেতা কাপড়ে ব্যবহারের রঙ ইফতার সামগ্রীতে ব্যবহার করছে। এর কারণ, এক কেজি টেক্সটাইল কালারের বর্তমান বাজার মূল্য চারশ’ টাকার মতো। সেখানে এক কেজি ফুড কালারের মূল্য প্রায় দশ হাজার টাকা। আবার মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহƒত হচ্ছে ভেজাল চিনি। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম সাইক্লোমেট। ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করাসহ মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্যকে অধিকতর মিষ্টি করতে ব্যবহƒত হচ্ছে স্যাকারিন, সুকরালেস ইত্যাদি। বিক্রেতারা জানান, রমজানে মসলার বাজারও জমে ওঠে। এই সুযোগে মশলায় ভেজালের পরিমাণও বেড়ে যায়। ইটের গুঁড়া, কাঠের ভুসি, গরুর গোবর, টেক্সটাইল কালারসহ খাওয়ার অযোগ্য নানা দ্রব্য মেশানো হয় মসলায়। রমজানে বেসনের চাহিদা বেড়ে যায় বলে এতে মেশানো হয় আটা। আটায় হলুদ রঙ ব্যবহার করায় তা বেসনের রঙ ধারণ করে। চকবাজারের এক ইফতারি সামগ্রী বিক্রেতা বলেন, কাস্টমাররা সব সময় রঙিন জিনিস কিনতে চায়। রঙ না মেশালে কেউ তা কিনবে না। এজন্যই প্রায় সব ধরনের ইফতারি সামগ্রীতে রঙ মেশানো হয়।
সুস্বাদু ইফতারি সামগ্রী তৈরীতে তেল একটি অপরিহার্য পণ্য। এ কারণে ইফতারি নসামগ্রী তৈরিতে দু’রকমের ভেজাল তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমত অনেকবার ব্যবহƒত পুরনো ভোজ্যতেল, দ্বিতীয়ত তেলের নাম করে পোড়া মবিল কিংবা ভেজালমিশ্রিত সরিষা-সয়াবিন তেল। গত বৃহস্পতিবার ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পুরান ঢাকায় অভিযান চালিয়ে সুইট রাধূনী নামক এক নকল তেল জব্দ করে। দেশের বড় একটি সয়াবিন তেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে সুইট রাধূনী নামকরণ করা হয়েছে। বোতলের মোড়কে লেখা ১০০% সুপার রিফাইন্ড ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল। বিএসটিআই’র একজন কর্মকর্তা জানান, মালিক একাই ব্যবসা চালাতো, প্যাকিংয়ের জন্য ছিল দুজন কর্মচারী। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) অনুমোদন না নিয়ে এই তেল বাজারজাত করা হতো। বোতলের গায়ে ব্যবহার করা হয়েছে বিএসটিআইর ভুয়া সিল। ওই কর্মকর্তা বলেন, এই তেলের মান সম্পর্কে বোতলের মোড়কে যা বলা আছে তার ১৬ আনাই মিছে। এসব অভিযোগে ‘সুইট রাধূনী’ নামের এই তেলের ব্র্যান্ডের মালিক ইসহাক হোসেনকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই অভিযানে ২৯/৪ সোয়ারীঘাটে বিস্কুটের প্যাকেটে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও সর্বোচ্চ খুচরামূল্য না থাকায় সাইফুল ইসলাম নামে একটি কারখানার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয় কয়েক বস্তা বিস্কুট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একই তেল বার বার ব্যবহারে সেটি উচ্চ তাপমাত্রায় থেকে পারঅক্সাইড ও ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। এই তেল বদহজম ও পেটে পীড়া, লিভারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট করে। আর ভোজ্য তেলে ভেজালের কথা তো সবারই জানা। সরিষার তেলে মেশানো হয় সয়াবিন বা পাম অয়েল। কখনও কখনও খাবার উপযোগী পাম অয়েলের পরিবর্তে সাবান তৈরির পাম অয়েল বা পাম স্টিয়ারিন মেশানো হয়। পাম স্টিয়ারিনের দাম কম; কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কৃত্রিম রঙ ও কৃত্রিম সুগন্ধ মিশিয়ে নানা রকম তেলকে সরিষার তেল বানানো হয়। সরিষার ঝাঁজের জন্য ব্যবহার করা হয় ইরুসিক এসিড এবং এলাইল আইসোথায়ো সায়ানেট। আবার তেলে পোড়া মবিলও ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ইফতার উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের শরবতে ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম রঙ ও চিনি। যেগুলো পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইফতারিতে মুড়ির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অথচ এই মুড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়ার পাশাপাশি সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, যার বাণিজ্যিক নাম হাইড্রোজ। লবণ মিশ্রিত পানি মুড়িতে মেশানোর সময় হাইড্রোজ মিশিয়ে দেয়া হয়। সাধারণ মুড়ি তৈরির সময় দু’বার সিদ্ধ করায় মুড়ির চাল লালচে হয়ে থাকে। এ চাল থেকে লালচে মুড়ি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাজারে লালচে মুড়ির চাহিদা কম বলে মুড়ি সাদা করতে কারখানার মালিক মুড়িতে হাইড্রোজ অথবা ইউরিয়া সার ব্যবহার করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইফতারি বিক্রেতারা খরচ কমাতে কালচে রঙের ছোলা ব্যবহার করে। অনেকে আবার ছোলা সিদ্ধ করে হাইড্রোজ দিয়ে সাদা করে। ফলে কালচে রঙের ছোলাকে সাদা বানিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে, বুন্দিয়া বানাতেও রঙ ব্যবহƒত হচ্ছে ঢালাওভাবে। একইভাবে জিলাপিতে লাল ও হলুদ রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। বেসনের তৈরি বুন্দিয়া বা লাড্ডুর স্বাভাবিক রঙ হালকা হলদে আর জিলাপি সামান্য লালচে। পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রীর অবিচ্ছেদ্য অংশ মাঠা। ব্যাপক চাহিদার কারণে বেশ কয়েকটি মাঠা বোতলজাতকারী কারখানা গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে এগুলো বোতলজাত করা হয়। উৎপাদনকারীরা বলছেন, রঙ না দিলে মাঠা চলে না। মাঠার স্বাভাবিক রঙ সাদা। অথচ অস্বাভাবিক রঙ ব্যবহার করে মাঠা বাজারজাত করা হচ্ছে। যেগুলো চড়া দামে কিনে খাচ্ছি আমরাই। রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়াতে। বিক্রেতারা যাতে ভেজালযুক্ত খাবার বিক্রি করতে না পারে সে চেষ্টায় মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, এটাও ঠিক আগের তুলনায় ভেজাল মেশানোর প্রবণতা অনেকটা কমেছে। কলার আড়তে কলা পরীক্ষা করে কোনো কেমিক্যালের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এটা আগে কখনও কল্পনাও করা যেতো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।