পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা থেকে : নেত্রকোনায় প্রলয়ঙ্করী কাল বৈশাখী ঝড় ও প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হওয়ার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরী করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসন। ত্রাণ তৎপরতাও অপ্রতুল বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থদের।
গত ১১ মে শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে নেত্রকোনা জেলা শহর সহ নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, পূর্বধলা, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার উপর দিয়ে প্রলয়ঙ্করী কালবৈশাখী ঝড় ও প্রচন্ড শিলাবৃষ্টি বয়ে যায়। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে একজন নিহত, শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়। প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ী, হাজার হাজার গাছপালা, প্রায় শতাধিক বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে যায়। প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ১০ হাজার বোরো জমির পাকা ধানের ক্ষেত মাটির সঙ্গে মিশে যায়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় নেত্রকোনা জেলা শহরসহ ৭টি উপজেলার শত শত গ্রাম গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের অভাবে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় পৌর নাগরিকরা চরম বিপাকে পড়ে। চারদিকে পানির জন্য শুরু হয় হাহাকার। বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে পৌর নাগরিকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাতের বেলায় নেত্রকোনা জেলা শহর ভূতুরে নগরীতে পরিণত হয়। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার তিন দিন পর জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র ছোট বাজার, মোক্তারপাড়া ও শাহ্ সুলতান রোডস্থ অফিস পাড়ার কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় বিদ্যুত বিভাগ। ঘটনার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও অনেক স্থানে এখনও গাছ পালা এবং বিদ্যুতের খুটি উপড়ে বা ভেঙ্গে পড়ে থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের বিরুদ্ধে জনগন ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র ও ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরী করতে না পারায় ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্রমশ ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর জেলা সভাপতি সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঝড়ের দ্বিতীয় দিন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দূর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরী সভা ডাকা যেত। সকল বিভাগের সমন্বয়ে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিরূপনের পর সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যকর পদক্ষেপ নিলে জনজীবন দ্রæত স্বাভাবিক হয়ে আসতো। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা কতটা অসহায়।
জেলা কৃষক লীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বোরো ফসলের কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপন করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা হয়নি। ফলে তারা ত্রাণ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নেত্রকোনা-২(নেত্রকোনা সদর-বারহাট্টা) আসনের সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় সদর উপজেলার মেদিনী, সিংহের বাংলা, আমতলা ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীর প্রতীক) পূর্বধলা সদর ইউনিয়ন ও খলিশাউড় ইউনিয়নের পাঁচশো পঞ্চাশ জনের মাঝে জিআর ২০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫শত টাকা করে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করেন।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ঝড় ও শিলাবৃষ্টির খবর পেয়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে আলাপ করে জানতে পেরেছি যে, এতবড় দুর্যোগ হলেও সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা অনেকেই খোলা আকাশের নীচে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকেই ত্রাণ পায়নি। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রনয়নে দলীয় করান করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খান বলেন, আগামী ফসল উঠা না পর্যন্ত সকল ধরনের ঋণ আদায় কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
নেত্রকোনা বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত শুক্রবারের কালবৈশাখী ঝড়ে নেত্রকোনা জেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিদ্যুতের শতাধিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে বা ভেঙ্গে গেছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগের (পিডিবি) ৩৩ কেভি (কিলো ভোল্ট) লাইনের ৭টি খুঁটি এবং ১১ কেভি (কিলো ভোল্ট) লাইনের ৩০টি খুঁটি উপড়ে পড়েছে কিংবা ভেঙ্গে গেছে। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৯০টি খুঁটি ভেঙে গিয়ে নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, বারহাট্টা, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলাসহ বেশীরভাগ গ্রাম ও হাটবাজার বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে পড়ে।
নেত্রকোনা পিডিবি’র নিবার্হী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রæত স্বাভাবিক করণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে জেলার সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৬ লক্ষ টাকা এবং ১ শত ২০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সব ধরণের ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ঝড়ে প্রায় ৩ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত এবং ৯ হাজার পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে ৫ হাজার ২শ ৪১ হেক্টর জমির ফসল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য নেত্রকোনা পৌরসভায় ৭ মে. টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা, সদর উপজেলায় ১৮ মে. টন চাল ও নগদ ৪ লাখ টাকা, পূর্বধলা উপজেলায় ১৫ মে. টন চাল ও ৫ লাখ টাকা, আটপাড়ায় ১০ মে. টন চাল ও ২ লাখ টাকা এবং খালিয়াজুরীতে ২ লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে ৫০ লক্ষ টাকা ও ৩ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, আমরা বসে নেই। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ও ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। কেউ যেন বাদ না পড়ে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।