নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে সবই সম্ভব। যেখানে হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। ঘিঞ্জি সেই মহল্লার শিশুরা যেখানে স্কুল বিমুখ। তার বিপরীতে লেখাপড়ার ফাঁকে অন্যদিকে না ঝুঁকে বাড়ির উঠোনে বাপ-বেটার নিয়মিত প্র্যাকটিস। এভাবে শুরু করে স্কুল, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং এক পর্যায়ে জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক চ্যাম্পিয়ন।
এখানে থামলেও কথা ছিল। স্বপ্ন যেখানে আকাশ ছোঁয়ার তখন এখানে থামলে চলবে কেন। দেশ জয় করে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে অংশ নিয়ে ১৩টি রাষ্ট্রের ৯৯৮জন খেলোয়াড়কে হারিয়ে রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে অজো পাড়া গায়ের এক অদম্য কিশোর। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাডমিন্টনে নিয়মিত আলো ছড়িয়ে চলেছে সেই স্কুলছাত্র। দেশের ক্রীড়াঙ্গন সহ বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়ে সুনাম বয়ে নিয়ে আসা ভবিষ্যৎ শাটলারের নাম ইয়ামিন আহমেদ।
সিরাজগঞ্জর উল্লাপাড়া পৌর শহরের ঝিকিড়া মহল্লার ইমাম আহমেদের ছেলে ইয়ামিন। শুধু ব্যাডমিন্টন নয়, উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের নবম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম আছে ইয়ামিনের। তার বাবাও কৃতি ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় এবং ব্যবসায়ী। তিনি গত ৩০ বছর ধরে এই খেলার সাথে জড়িত। তিনিও জেলা, উপজেলা, বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
জানা যায়, থাইল্যান্ডে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে গত এপ্রিল মাসে ১৩টি রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ইয়োনেক্স রোজা বি-টি ওয়াই জুনিয়র ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের পক্ষে গ্রæপ পর্বে রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে উল্লাপাড়া উপজেলার স্কুলছাত্র ইয়ামিন। অনুর্ধ্ব-১৫ দ্বৈত ক্যাটাগরিতে তার সঙ্গী ছিল সিলেটের আরেক তরুণ শাটলার জয়। টুর্নামেন্টে ইয়ামিনের অংশ নেয়ার কথা ছিল একক ক্যাটাগরিতেও। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার একদিন পর থাইল্যান্ডে পৌঁছে ইয়ামিন। ফলে ইয়ামিনের প্রিয় ইভেন্ট একক লড়াইয়ে অংশ নেয়া হয়নি। এমনটিই জানান ইয়ামিনের বাবা ইমাম আহমেদ।
গত ১ বছর ধরে বাবা এবং উল্লাপাড়ার ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের সাথে নিয়মত অনুশীলন করে সে এই সাফল্য বয়ে এনেছে। ইন্দোনেশিয়ার শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেও শেষ পর্যন্ত চ্যম্পিয়ন ট্রফি ছোঁয়া হয়নি তার। তবুও অঁজপাড়া গাঁ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই ইভেন্টে গ্রæপ পর্বের রানার্স আপ হওয়াও বা কম কিসে। ট্রফির পাশাপাশি একটি সার্টিফিকেটও অর্জন করে ইয়ামিন। এর আগে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ যুব গেমস-২০১৮ অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে ইয়ামিন। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে জুনিয়র ন্যাশনাল টুর্নামেন্টে ঢাকার হয়ে অংশ নিয়ে সেমিফাইনাল বিজয়ী হয়।
৭ বছর বয়সে বাবা’র মাধ্যমে ইয়ামিনের ব্যাডমিন্টনে হাতে খড়ি। ৩য় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ২০১২ সালে সে স্কুল ব্যাডমিন্টন টিমে ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সাথে অংশ নিয়ে প্রথম উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও সে চ্যাম্পিয়ন হয়। এসব বিজয়ের পর ইয়ামিন পেয়েছে একাধিক পুরষ্কার ও সার্টিফিকেট।
উল্লাপাড়া উপজেলায় ব্যাডমিন্টন খেলার কোন ইনডোর ষ্টেড়িয়াম এবং খেলার মাঠ নেই। তবু ইয়ামিন বাবা’র অনুপ্রেরণায় লেখাপড়ার ফাঁকে বাড়ির পাশের রাস্তায় এবং তার বাড়ির উঠানে শাটল হাতে তার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়ামিনের ব্যবসায়ী এবং খেলোয়াড় বাবা সময় সুযোগ মত সন্তানকে তিলে তিলে আগামী দিনের সেরা শাটলার হিসেবে গড়ে তুলছেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে সব প্রযোগীতায় অংশ নিতে পারে না। কোচ হিসেবে তার বাবা’র দাবীÑ ওয়ার্ল্ড ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কোচ দ্বারা প্রশিক্ষন, সনামধন্য ক্রীড়াবিদদের পরামর্শ এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকদুর এগোতে পারবে ইয়ামিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।