Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টাকা পাননি কলাবাগান ক্রিকেটাররা!

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : গতকাল সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। সেই মেঘ যেন ভর করেছিল তাসামুল হক ও নাবিল সামাদদের চোখে-মুখে। মিরপুরে হঠাৎ ঢু মারতে আসা সাংবাদিকদের নজরে পড়ল তা। কারণ জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে এল ‘পুরনো কাঁসুন্দি’।
প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। গত ৫ এপ্রিল এবারের চ্যাম্পিয়নও পেয়ে গেছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। তবে, এখনও পাওনা টাকার জন্য বিসিবির দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের! তাসামুল-নাবিলদের এই তালিকায় আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল, জসিমউদ্দিন, আবু বক্কর অনিক ও সঞ্জীত সাহা দ্বীপরাও!
ক্রিকেটারদের পাওনা না দেয়ার অভিযোগ যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে ঘরোয়া লিগগুলোতে! এই অভিযোগের তীর এবার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ থেকে অবনমন হওয়া কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বিরুদ্ধে। ক্লাবের কোন ক্রিকেটারই পারিশ্রমিকের পুরো টাকা বুঝে পাননি। এরমধ্যে মোহাম্মদ আশরাফুলসহ চারজনকে দেওয়া হয়নি এক টাকাও। গতকাল বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছে নালিশ জানাতে আসেন তাসামুল-নাবিলসহ আরো ৫ ক্রিকেটার। সিইওর সঙ্গে বৈঠক শেষে জানালেন, দলের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় লিগের মাঝপথেই ১৫ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার কাগজ ক্রিকেটারদের ধরিয়ে দিয়েছিল ক্লাবটি। এখন তারা ৪০ শতাংশ টাকাই কেটে নেওয়ার কথা বলছে বলে অভিযোগ ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটারদের দাবি পারফরম্যান্স খারাপের কথা বলে টাকা কেটে নেওয়ার কোন নিয়ম নেই।
এবার প্রিমিয়ার লিগে মাত্র চার পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের নিচে থেকে প্রথম বিভাগে নেমে যায় ঐতিহ্যবাহী ক্লাব কলাবাগান। অবনমনের পর ক্রিকেটারদের পাওয়া মিটাতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ ক্লাবটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ নিয়ে বোর্ডে আসা সাত ক্রিকেটারের হয়ে কথা বলেন তাসামুল হক। সিইওর কাছ থেকে সুর্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ার কথা জানান এই ব্যাটসম্যান, ‘আমরা আগেই বোর্ডকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলাম। বোর্ড অভিযোগ পাওয়ার পর ক্লাবের কাছে চিঠি পাঠায়। ক্লাব কর্তৃপক্ষ নাকি ফিরতি চিঠি পাঠিয়েছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসবে। কবে নাগাদ এর সুরাহা হবে সেটি বলেননি সিইও। আমরা চেয়েছি যাতে দ্রæত সমাধান হয়। সামনে ঈদ, আর আমাদের রুটি-রুজির অংশ তো প্রিমিয়ার লিগের পারিশ্রমিক। দলের পারফরম্যান্স খারাপ হলে টাকা কর্তন করবে এমন নিয়ম কোথাও নেই। আমরা বোর্ডকে সেটা বলেছি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়।’
এরপর যা জানালেন তা আঁতকে ওঠার মত, কাউকেই নাকি ৫০ শতাংশের বেশি টাকা দেওয়া হয়নি! অথচ লিগ শেষ হয়েছে অনেকদিন হলো। এরমধ্যে আশরাফুল, জসিমউদ্দিন, অনিক ও সঞ্জীত পাননি এক টাকাও। তবে আশরাফুলের ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে আছে বলে জানান বাঁহাতি স্পিনার নাবিল, ‘তিন-চার দিন আগ পর্যন্ত জানি আশরাফুল টাকা পায়নি। তবে এরমধ্যে পেয়ে থাকলে বা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেও আমরা জানি না।’
লিগ শুরুর আগে তিন কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল আয়োজক ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম)। তাতে লিগ শুরুর আগে ৫০ ভাগ, চলাকালীন সময়ে ২৫ ভাগ করে এবং লিগ শেষ হওয়ার পর অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু লিগ শেষ হওয়ার পরও পাওয়া টাকার জন্যে ঘুরছেন কলাবাগানের ক্রিকেটাররা।
কিন্তু বিসিবি এ ব্যাপারে কী ভাবছে? প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছেন। এখন সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে তারা বিষয়টা মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন, ‘খেলোয়াড়রা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে যে ক্লাবগুলো বোর্ডের সঙ্গে কাজ করে, তারাও গুরুত্বপূর্ণ। যে অভিযোগ এসেছে, তা সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সাথে আলোচনা করে যত দ্রæত সম্ভব নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবো। নির্ধারিত সময়ে পেমেন্ট করা হয়নি বলেই অভিযোগ এসেছে। আমরা ক্লাবের নীতিনির্ধারক যারা আছেন, তাদের সঙ্গে সরাসরি বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবো।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ঠিকমতো টাকা পাওয়াটাই একসময় বিস্ময়ের ছিল। তবে প্লেয়ার্স বাই চয়েজ পদ্ধতির প্রবর্তনের পর যেখানে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক আরও উন্নত হওয়ার কথা, সেখানে এমন অভিযোগ সত্যিই ভাবাচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের ভবিষ্যত!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ