বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, ‘সরকার কেসিসির ভবিষ্যৎ নগর পিতা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। কেসিসি নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পরীক্ষা হলেও ইতোমধ্যেই তারা ফেল করেছে।’
তিনি জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে না নিয়ে জনগণকে ফিরিয়ে দিয়ে ভীতিমুক্ত উৎসবমুখর পরিবেশে নগর পিতা নির্বাচিত করার পরিবেশ তৈরি করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। গণগ্রেপ্তার ও পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর মিয়াপাড়ায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে মঞ্জু ভোট ডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। জনগণ ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনাও ছিল। নগরবাসীরও স্বপ্ন ছিল ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার। কিন্তু সরকার একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচনের আয়োজনে সবকিছুই ভেস্তে যেতে বসেছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের অতিউৎসাহী ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা ভোট ডাকাতির নির্বাচনের আয়োজনকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।’
নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর, টুটপাড়া, লবণচরা ও বানিয়াখামারসহ বিভিন্ন এলাকায় ভোট ডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই চরমপন্থি-সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা এসব এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। আগে থেকেই ব্যালট বাক্স ধরে রাখা, ভোটের আগের রাতে বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃস্টি এবং নেতা-কর্মীদের ওপর আরো কঠিন আঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা মহানায়কের ভূমিকা পালন করছে। সরকার বিএনপিকে বাইরে রেখে এক দলীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ দেশপ্রেমিক পুলিশ এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু কেসিসির শতভাগ ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এখনো সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এখনই সকল ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করুন।’ একইসঙ্গে তিনি প্রতিটি কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের অবস্থান করে অতদ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
তিনি জানান, মেয়র প্রার্থী হিসেবে তিনি নিজেও শঙ্কামুক্ত নন। সাত দিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। শনিবার রাতেও হাজার হাজার কর্মীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। নতুন করে আরো ১১ জনসহ দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচনী এজেন্ট ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এতে গোটা নগরীতে আতঙ্ক ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নগরবাসী সার্বিক পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপরও নগরবাসী ধানের শীষে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আওয়ামী দুঃশাসনের সাড়ে নয় বছরের জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি ও তার দলের নেতা-কর্মীরা গত ১০ দিনে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখানো হচ্ছে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নারী পুলিশ বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে নেতা-কর্মীদের পরিবারের নারী সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এজন্য সরকার, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কেউ দায় এড়াতে পারবে না। কারণ অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাক, এটি নগরবাসীর কাক্সিক্ষত নয়।’
সাংবাদিকদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামায় তিনি ‘জাতির বিবেকদের কাছে এ ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাত কাক্সিক্ষত নয়’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু সকল ভোটারের কাছে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষমা চেয়ে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে কেসিসি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে একটি করে ভোট প্রদানের জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, বিজেপির মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, জেপি (জাফর) মহানগর সভাপতি মোস্তফা কামাল, জামায়াতের মহানগর শাখার সহকারী সেক্রেটারি শাহ আলম, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা নাসির উদ্দিন, হাফেজ ওয়াহিদুজ্জামান, মুসলীম লীগের অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিজেপির নগর সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, শফিকুল আলম তুহিন, শামসুজ্জামান চঞ্চলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিং শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।