Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের ঐতিহাসিক করমর্দন

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সারা বিশ্বেই চলে ক্ষমতার দাপট। নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো তাদের শক্তিমত্তা দেখায়। দাপট দেখাতে গিয়ে অনেক দেশের মধ্যে তৈরি হয় শত্রæমনোভাবাপন্ন সম্পর্ক। শত্রæতা মুছে ফেলে নিজেদের মাঝে সামঞ্জস্যপ‚র্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হওয়ার নজির বিশ্বে খুব বেশি নেই। তবে চির শত্রæতাকে পেছনে ফেলে দুই দেশের নেতারা করমর্দন করেছেন এমন কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাও ঘটেছে। এমন কিছু ছবি ও তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট।
কিম জং উন ও মুন জে ইন
এপ্রিলের ২৭ তারিখে যখন চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতা করমর্দন করলেন, তখন প্রতীকী অর্থে হলেও তারা যেন বিভাজিত কোরিয়া উপত্যকাকে এক করে ফেলেছিলেন। বেশ কয়েক মাস ধরে বিরাজমান পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যে দুই নেতার ওই করমর্দন ছিল শান্তির পথে এক মাইলফলক। কারণ, প্রায় ৬৫ বছর আগে কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ শেষ হবার পর উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতা দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখেননি। ২০০০ ও ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্টরা পিয়ং ইয়ংয়ে শীর্ষ বৈঠকে গিয়েছিলেন মাত্র। সেই বৈঠকে ফলপ্রসূ ফলাফল দেখেনি বিশ্ব। কিন্তু গত ২৭ এপ্রিলের ঐতিহাসিক বৈঠকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে লক্ষ্যে এক ঘোষণাপত্রে সাক্ষর করেছেন।
আরাফাত-রবিন
নরওয়েতে মাসের পর মাস গোপন আলোচনা শেষে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইতিজ্যাক রবিন ও ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসের আরাফাত ১৯৯৩ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ লনে একত্রিত হন। একত্রে তারা চাক্ষুষ করেন অসলো চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
এরপর আরাফাত ও রবিন হাত মেলান।
তাদের মাঝে দুই জনের বাহু ধরে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এটি ছিল ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সবচেয়ে নাটকীয় একটি মুহ‚র্ত। ওই চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা আন্দোলনের অবসান ঘটে। পাশাপাশি, স্বায়ত্বশাসন পায় ফিলিস্তিনি ভ‚খ-। পরের বছর এই শান্তি প্রক্রিয়ার জন্যই এক ইহুদী চরমপন্থীর হাতে খুন হন রবিন। পরের বছরগুলোতে শান্তি প্রক্রিয়া থমকে যায়। তবুও চির বৈরি এ দুদেশের নেতার সাক্ষাৎ একটি বিরল ঘটনা।
ওবামা-ক্যাস্ত্রো
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশ কিউবা আর অ্যামেরিকা৷ ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তীত‚ল্য নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা স্মরণে এক শোকসভায় হাত মেলান দুই বৈরী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার দুই নেতা বারাক ওবামা ও রাউল ক্যাস্ত্রো। কয়েক দশকের শত্রুতা শেষে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মোলাকাত ছিল সেবারই প্রথম। এ থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা পায়। ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে প‚র্ণ ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পরের বছর ওবামা কিউবা সফর করেন। সেটি ছিল ৮৮ বছরে প্রথম কোনো মার্কিন নেতার কিউবা সফর। কিউবার ওপর দশকব্যাপী কার্যকর কিছু নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করে আমেরিকা। পরে ২০১৬ সালে ওবামা ৮৮ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা সফর করেন৷
রাণী এলিজাবেথ-ম্যাকগিনেস
ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের সাবেক সশস্ত্র বিদ্রোহী দল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির প্রধান কমান্ডার ম্যাকগিনিসের করমর্দনও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা৷ উত্তর আয়ারল্যান্ড শান্তি প্রক্রিয়ায় মাইলফলক রচনা করে ২০১২ সালে করমর্দন করেন বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ) নামে আইরিশ জাতীয়তাবাদী বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার মার্টিন ম্যাকগিনেস। আইআরএ চেয়েছিল উত্তর আয়ারল্যান্ডে বৃটিশ শাসনের অবসান এবং ম‚ল আয়ারল্যান্ডে একিভ‚ত করা। পরে এ করমর্দনের মধ্য দিয়ে আয়ারল্যান্ডে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয়। যা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
শি জিনপিং ও মা ইং-জেও
১৯৪৯ সালে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পর ভাগাভাগি হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো চীন ও তাইওয়ানের নেতারা সাক্ষাৎ করেন সিঙ্গাপুরে। এটি ছিল নজিরবিহীন এক ঘটনা। এক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং-জেও করমর্দন করেন। আলোচনা শুরুর আগ মুহ‚র্তে তারা হাস্যোজ্বল ছিলেন। ওই বৈঠকের পর বেইজিং ও তাইপের মধ্যে হটলাইন স্থাপন এবং স্বশাসিত তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। ওই বৈঠক ঐতিহাসিক হলেও, দু’ পক্ষের কেউই কাউকে বড় কোনো ছাড় দেয়নি। ওই বৈঠকের প্রায়শ্চিত্ত বেশ তিক্তভাবেই করতে হয়েছে মা’কে। তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে বেইজিং-বিরোধী বলে পরিচিত সাই ইং-ওয়েনের কাছে পরাজিত হন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ