Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কালিগঞ্জে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কালিগঞ্জ ( সাতক্ষীরা) থেকে রবিউল ইসলাম : শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই উপকূলীয় এলাকায় শুরুহয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এবারও শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কৈখালি, মুন্সিগঞ্জ, কাশিমাড়ি, রমজাননগর, আটুলিয়া, নুরনগর, ঈশ্বরীপুর সহ কিছু এলাকায় চলছে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার। বিভিন্ন এনজিওদের দেওয়া বিশুদ্ধ পানির ফ্ল্টিারগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় পানি সংগ্রহ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সুপেয় পানির অভাবে এসব এলাকায় বাড়ছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। নোনা পানির কারণে ফসল হচ্ছে না। মারা যাচ্ছে গাছপালা। লবণাক্ত পানির জন্য নারীদের অকাল গর্ভপাত ঘটছে বলেও মনে করছেন স্থানীয় চিকিৎসক।
এলাকাবাসী বলছেন, লবণ পানির প্রভাবে চর্মরোগ, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগ দিন দিন বাড়ছে। চিংড়ি চাষেও দেখা দিয়েছে মন্দা। সূত্রমতে, লবণাক্ত পানির জন্য নারীদের অকাল গর্ভপাত ঘটছে। গাবুরা এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের মানুষ নদীতে মাছ ধরে এবং বনে কাঠ কেটে সংসার চালাতো। নোনা পানির কারণে গাছপালা জন্মাচ্ছে না। জমিতে ধান ও ঠিকমত হয় না। ফলে মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের দীন ইসলাম
বলেন ‘আইলার আট বছর পরও এলাকায় সুপেয় পানির সংকট কাটেনি। রেনওয়াটার মাধ্যমে কিছু মানুষ খাবার পানি পেলেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা। অনেক দূরে স্থাপিত ফিল্টারগুলোতেও (পিএসএফ) অসম্ভব ভিড় তাও আবার নষ্ট। এক কলস পানি আনতেই একবেলা কেটে যায়। কয়েক কিলো মিটার পায়ে হেটে ও নৌকায়জেয়ে আনতেহয় পানি, গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের নুরুজ্জামান বলেন, ‘চিংড়ি চাষের কারণে জমিতে কোনও ফসল হয় না। জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ফলজ গাছ মারা যাচ্ছে।
জমিতে ধান, শাকসবজি চাষ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। মাঠে ঘাস না জন্মানোয় গবাদিপশু পালা বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় কাজ না থাকায় সংসার ফেলে শত শত মানুষ গ্রাম ছেড়েছেন। আরো বলেন, ‘লবণ পানির কারণে চর্মরোগ লেগেই থাকে। এখানে গোসলের পানিরও সমস্যা। রমজাননগর এর আকবর আলী বলেন, নৌকায় করে কয়েক কিলো যেয়ে কৈখালী ইউনিয়ানে বিজিবি দের পুকুর থেকে পানিআনতে হয়। উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে পুকুরের পানি পান করতে হয়।
চাকরিজীবীরা তাদের উপার্জনের বড় একটা অংশ বোতলজাত পানি কিনতে ব্যয় করেন। পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা। পুকুর সংস্কার এবং ফিল্টার (পিএসএফ) মেরামতের অভাবে এই এলাকায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। লবণ পানির কারণে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মক্ষতা কমে যাচ্ছে। গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন,‘পানির কারণে এলাকায় কাজ নেই। ফলে কাজের সন্ধানে পুরুষরা এলাকা ছাড়ছেন।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বেশিরভাগ নারী চুলকানি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, বিভিন্ন মেয়েলি সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী উপ-প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উপকূলীয় এলাকার মানুষের সুপেয় পানির সুবিধা নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদ এর মাধ্যমে ৩০টি পুকুর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬০৩ টি রেনওয়াটার ফিল্টার চালু আছে । প্রক্রিয়া ধিন আছে আরো ৩০০ ফিল্টার । শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সুপেয় পানির সংকট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কাজ করছে।
বিভিন্ন ইউনিয়ানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানির জন্য নলকূপ ও পানির বড় ট্যাংকের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারা বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ