Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ছাত্রলীগের ২৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন কাল

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

* নেতৃত্ব আসছে সমঝোতায় * ভাংতে পারে সিন্ডিকেট
* বাদ পড়বে অছাত্র ও অভিযুক্তরা * দেখা হচ্ছে পারিবারিক ইতিহাস
* শিবির বা ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার * অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধে
এহসান আব্দুল্লাহ : আগামী কাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। আর এই সম্মেলনের মাধ্যমেই উঠে আসবে আগমী সেশনের জন্য ছাত্রলীগের দুই কান্ডারী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ইতোমধ্যে এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন সংগঠনের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা। তারা নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত আড্ডা সহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রাখছেন নিয়মিত।
এবারের সম্মেলন নিয়ে ছাত্রলীগ সহ আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়েও চলছে নানা হিসেব নিকেষ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলনে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে চলছে ব্যাপক অনুসন্ধান। এবার সমঝোতার মাধ্যমে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব আসতে পারে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সময় ভোটের মাধ্যমে বিতর্কিত নেতৃত্ব উঠে আসার ব্যাপারে সতর্ক থাকতেই এই পদক্ষেপ বলে জানা যায়। সেই সাথে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ডিজিএফআই ও এনএসআই এর গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পাশাপাশি দলীয় প্রতিবেদনও কঠোর ভাবে যাচাই করা হবে বলে জানা গেছে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে। মূলত বিগত দিনগুলোতে চলে আসা শিবির বা ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠার কারণে এ ব্যাপারে কঠোর হতেই এমন পদক্ষেপ।
এবারে গত দুই যুগ ধরে চলে আসা সিন্ডিকেটের প্রভাবও ভাঙতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এবার সরাসরি নেতৃত্ব নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন সেক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীদের আসার সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কারে পকেট কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগ চলবেনা। কোন সিন্ডিকেট দিয়ে ছাত্রলীগ চলবে না। ছাত্রলীগ চলবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার নির্দেশনায়।’
এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের বয়স নির্ধারণ নিয়েও রয়েছে ধোয়াশা। ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের বয়স ২৭ থেকে ২৯ বছর করে দেন। সম্মেলন বিলম্বিত হওয়ায় এবং দুই বছরের কমিটি চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। তবে এবার প্রায় সঠিক সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারনে বয়স নিয়ে ধোয়াশা দেখা দিয়েছে অনেকের মাঝে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্ব প্রদানে পক্ষে সেক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ২৭ বছরই থাকবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এবারেও প্রতিবারের মতোই নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রাধান্য পাবে আঞ্চলিক সমীকরণ এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অন্যতম শীর্ষ পদ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল থেকে দুটি শীর্ষ পদ ও অন্য দুটি অঞ্চল থেকে আসতে পারে বাকি দুটি শীর্ষ পদ। অন্য দুই অঞ্চলের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন নেতৃত্বের বাহিরে থাকা অঞ্চলগুলো প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে অধিকাংশের পক্ষ থেকে।
এছাড়াও এবারে নারীরাও আসতে পারে শীর্ষ নেতৃত্বে। গতকয়েকবার শীর্ষপদে নারীরা আসার গুঞ্জন শোনা গেলেও সিন্ডিকেটের প্রভাবে তারা ছিটকে পড়েছেন। তাই ছাত্রলীগের মতো একটি প্রগতিশীল সংগঠনে নারী নেতৃত্বের উঠে আসার ব্যাপারেও আলোচনা হচ্ছে বলে জানা যায়। তাছাড়া শীর্ষ পদের একটির আসতে পারেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনও।
ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে চার শীর্ষ পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় উপ আন্তর্জাতিক সম্পাদক এইচ এম তাজউদ্দিন, সহ-সম্পাদক জায়েদ বিন জলিল, স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।
বরিশাল অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, সহ সম্পাদক খাদেমুল বাশার জয়, সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, প্রচার বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফ, আপ্যায়নবিষয়ক উপ-সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ সম্পাদক শেখ ইনান।
ফরিদপুর অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, সহ-সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ শাহরিয়ার কবির, এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত।
উত্তরবঙ্গ অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহাজাদা, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান, উপ-দফতর সম্পাদক আবু সাইদ কনক, সহ-সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম।
সিলেট অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছেন জিয়া হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দিন খান। নারী নেত্রীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি চৈতালি হাওলাদার চৈতি।
এবারে শীর্ষ পদ প্রত্যাশীদের অনেকে বিরুদ্ধে আছে শিবির ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতা সহ নানা অভিযোগ। এর মাঝে সহ-সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন এর আগে চাঁদাবাজির মামলায় অভিযুক্ত এবং তার কক্ষ হতে পুলিশ দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করেছে। আরেক পদপ্রার্থী গোলাম রাব্বানীর পরিবারের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিএনপি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের পরিবারের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিএনপি জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদের চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে, এছাড়াও তার ভাই বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধেও আছে ছাত্রদল ও শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, প্রতিবেদকের এক সূত্র জানায় তিনি এক সময় শিবিরের মেসে থাকতেন। এছাড়াও দিদার মো. নিজামুল ইসলামের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে বিবাহিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক কর্মী, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে। আরেক পদপ্রার্থী মাজহার শামীমের ব্যাপারে পূর্বে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, এবারে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আমাদের সিলেকশন ও ইলেকশন দুটিরই প্রস্তুতি আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলবেন আমরা সেভাইবেই করতে প্রস্তুত। আর অভিযুক্ত ও বেøইম গেইমের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন অভিযুক্তদের ব্যাপারে সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে। আর এবার অভিয্ক্তুদের আসার কোন সম্ভাবনা নেই। বেøইম গেইমের ক্ষেত্রে কোন বেøইম মিথ্যা প্রমাণিত হলে কেন্দ্রীয় কমিটি তার ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিবে বলেও জানান তিনি। সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন করে রেখেছি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ