Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতায় ফিরবেন ৯২ বছরের মাহাথির?

মালয়েশিয়ায় চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচন আজ

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মালয়েশিয়াকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়া মাহাথির মোহাম্মদ এবারের জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী জোটে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন; বলছেন, অতীতে করা নিজের ভুলের সংশোধন করতে চান তিনি। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাহাথির দীর্ঘ ২২ বছর কঠোর হাতে দেশ শাসন করেছেন। তার আমলেই দক্ষিণপ‚র্ব এশিয়ার দেশটির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়। এখনো তার সাবেক দল ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন্স (ইউএমএনও) দেশটির ক্ষমতায়।
মাহাথিরের পছন্দের প্রার্থীই ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। কিন্তু রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন মাহাথির। রাজাক উল্টো দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেন। যে কারণে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টাতেই ৯২ বছর বয়সে আবারো রাজনীতিতে ফিরতে হয়েছে মাহাথিরকে।
এক সময় রাজনীতিকে বিদায় জানানো বর্ষীয়ান এ নেতা নতুন করে প্রার্থী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, “আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমাকে দেশ পুনর্গঠনে কিছু কাজ করতেই হবে; কিংবা বলা যায়, আমি নিজে অতীতে যে ভুল করেছি তার জন্য।” মাহাথিরের রাজনীতিতে ফিরে আসা দেশটির জাতীয় নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপ‚র্ণ করে তুলেছে। না হলে এটি হয়ত একতরফা নির্বাচনে পরিণত হত। কারণ, দেশটির প্রধান বিরোধীদল পিপলস জাস্টিস পার্টির নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বর্তমানে কারাগারে। ১৯৯৯ সালে সমকামিতার অভিযোগে মাহাথিরের নির্দেশেই আনোয়ারকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। মাহাথিরের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরের বছর ২০০৪ সালে তিনি মুক্তি পান। ২০০৮ সালে আনোয়ারের বিরুদ্ধে আবারও এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে সমকামিতার অভিযোগ উঠে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে ২০১২ সালে হাই কোর্ট তাকে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। আনোয়ারের মুক্তির রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিল করে। তার মধ্যেই ২০১৩ সালে দেশটির সর্বশেষ নির্বাচনে আনোয়ার নেতৃত্বাধীন জোট কঠোর প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সামান্য ব্যবধানে হেরে যায়। আনোয়ার ওই হার মেনে না নিয়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন।
ওদিকে ২০১৪ সালে আপিল কোর্ট আনোয়ারের মুক্তির রায় বাতিল করে তাকে সমকামিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদÐ দেয়।
কারাদÐের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনে হেরে যাওয়ার পর ২০১৫ সাল থেকে আনোয়ার ওই সাজা ভোগ করছেন। মালয়েশিয়ায় সমকাম অবৈধ হলেও এ পর্যন্ত বিচার হয়েছে খুব কম মানুষেরই। দেশটির সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার বরাবরই তার বিরুদ্ধে সমকামের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। এরপর সরকারপক্ষ তার মুক্তির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আদালত ওই রায় বাতিল করে তাকে কারাদÐ দেয়।
আজ মালয়েশিয়ায় চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে নাস্তানাবুদ নাজিবকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতেই এখন আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরোধী দলের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করছেন মাহাথির।
ইব্রাহিমের পরিবারের কাছে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি কষ্টকর হলেও মাহাথিরের মত উঁচু মাপের একজন নেতার বিরোধী জোটে থাকাটাকে দেশের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচকই মানছে তারা। জনসভার মঞ্চে মাহাথিরের জনপ্রিয়তা এখনো অটুট। জনতাকে উজ্জীবিত করতে তিনি এখনো সক্ষম। এ বয়সেও টানা আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন তিনি। বক্তৃতায় তিনি দুর্নীতি এবং জাতীয় সম্পদের অপচয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কড়া সমালোচনা করেন।
তার কথায়, “নাজিবকে আমিই পদোন্নতি দিয়ে এ পর্যায়ে তুলে এনেছি, এজন্য আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমি এ ভুল শুধরে নিতে চাই।”
মাহাথিরের সঙ্গে নাজিব রাজাকের পার্থক্যটা স্পষ্টতই চোখে পড়ে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে নাজিব রাজাক মাহাথিরের চেয়ে পিছিয়ে। তার বক্তৃতাও জনতাকে সেভাবে উজ্জীবিত করে না। তবে ক্ষমতায় থাকার কারণে শক্তিশালী কিছু বাড়তি সুবিধার কারণে তিনি ক্ষমতায় ফিরতেও পারেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গোটা ব্যবস্থাটাই ক্ষমতাসীন কোয়ালিশনের অনুক‚লে থাকায় এবং অর্থনীতিও কিছুটা ভাল থাকায় নাজিব সুবিধা পেতে পারেন। তবে অন্যদিকে, মাহাথির মুসলিম মালয়দের ভোট জিততে পারবেন বলেই বিরোধী জোট আশা করছে। মালয়েশিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশই মালয় ভোটার। তাছাড়া, কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও মাহাথিরের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। মাহাথিরের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তার পক্ষে ভোটের পাল্লা ভারি হলে তা নিঃসন্দেহে নাজিবের জোটের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
আর নাজিবের বিরুদ্ধে বিরোধীদের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগ। একটি সরকারি বিনিয়োগ তহবিলের (ওয়ানএমডিবি) শ’শ’ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার সরকারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ কোটি ডলার নাজিবের ব্যক্তিগত একাউন্টে রাখারও অভিযোগ আছে।
নাজিব রাজাকের স্ত্রীর বিলাসবহুল জীবন-যাপন, মালয়েশিয়ার বিনিয়োগে বিদেশি হুমকিও বিরোধীদের প্রচারের বড় ইস্যু। নাজিব নিজের কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে সরকারে তার সমালোচকদের বরখাস্ত করেছেন এবং গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ তার বিরুদ্ধে তহবিল তসরূফ এবং রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ানএমডিবি’র অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত করছে। এসবই নাজিবকে নির্বাচনে পরাজয়ের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য কম কিছু নয়।
তবে কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম এবারের নির্বাচনে মাহাথির ও নাজিবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস দিয়েছে। এ লড়াই উৎরে মাহাথির মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় ইউএমএনও’র ৬১ বছরের নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাতে সক্ষম হন কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়। সূত্র : রয়টার্স।

 



 

Show all comments
  • কাজল ৯ মে, ২০১৮, ৩:১৫ এএম says : 0
    আমার মনে হচ্ছে এবারও মাহাথিরই হবেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাহাথির

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ