পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিজ দেশে বৈষম্য, নিপীড়ন এবং পরিকল্পিত নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে ওআইসি’র সহযোগিতা চেয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্সিলের (সিএফএম) সম্মানে দেয়া ভোজসভায় প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনস্রোতের ভয়ানক চাপের মুখোমুখী। প্রতিবেশী মিয়ানমারে যা ঘটেছে সেটি কেবল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিরই লঙ্ঘন নয় বরং এটি জাতিগত নিধনের জলন্ত দৃষ্টান্ত।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ,পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ,মাহমুদ আলী, সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ, ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসুফ এ আল-ওসাইমীন এবং সহকারী মহাসচিব এই রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় যোগ দেন।
‘সংঘাত ও ইসলামফোবিয়ায় আমাদের বিশ্ব চ্যালেঞ্জের মুখে। যাতে মুসলমানরা ইসলাম ফোবিয়া অথবা জাতিগত নিধনের শিকার না হয় সে বিষয় ওআইসিকে একটি স্থিতিশীল বিশ্বের জন্য লক্ষ্য স্থির করা প্রয়োজন’ একথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এক্ষেত্রে সংহতির পরিবর্তে ওআইসি সদস্যদের জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।’ কয়েক দশক ধরে জাতিগত নিধনের বিবরণ তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইনের অধীনে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করা হয়েছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ হরণ করা হয়েছে। তারা তাদের নিজ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতির অধিকার থেকে বঞ্চিত।
আবদুর হামিদ বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালিত দীর্ঘদিনের নিপীড়ন সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হয়।’ প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের জন্য এবং একইসঙ্গে ফিলিস্তিনীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্টায় ওআইসি’র অব্যাহত ভূমিকার প্রশংসা করেন। প্রেসিডেন্ট ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন খাত আরো সুসংহত করতে জরুরি ভিত্তিতে অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব দ্রæত বদলে যাচ্ছে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, বর্তমান এই অবস্থায় বিশ্বের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মুসলিমের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সংস্থাকে সামনের দিকে এগোতে হবে এবং কার্যকারিতা জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে ২০০৫ সালে গৃহীত লক্ষ্য ‘সলিডারিটি ইন অ্যাকশন’ নতুন করে জোরদার করা প্রয়োজন। ওআইসির ৫৬টি সদস্য এবং অন্য ৫টি দেশের মধ্যে ৫২টি দেশের ৬শ’র বেশি প্রতিনিধি এবং ৪০ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ দুই দিনব্যাপী (মে ৫, ৬) এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নে ইসলামিক মূল্যবোধ।’
ভোজসভার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
এর আগে গতকাল বিকেলে সউদী আরবের (কেএসএ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল জুবের বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি বলেন, ‘ইসলামে সন্ত্রাসবাদের কোন জায়গা নেই- এই সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ সউদী সরকারের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবে।’ প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ রিয়াদে ইসলামিক মিলিটারী কাউন্টার টেরোরিজম কোয়ালিশন (আইএমসিটিসি) গঠনে সউদী বাদশাহ’র প্রচেষ্টার উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ওই জোটে অংশ নেয়। প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন একথা জানান।
বাংলাদেশ ও সউদী আরবের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অত্যন্ত চমৎকার উল্লেখ করে আব্দুল হামিদ বলেন, বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সকল ক্যাটেগরিতে শ্রমবাজার খুলে দেয়ার জন্য তিনি সউদী সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং দু’টি ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাক্ষাতকালে সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আগামী দিনগুলোতে সউদী সরকারের সর্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’ আদেল বিন আহমেদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহয়োচিত পদক্ষের গ্রহণের জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন এবং এই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে তার দেশ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানান। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ আল মুতাইরী, খালেদ আলংগীরী, কেএসএ উপমন্ত্রী আব্দুল রহমান আলরাসী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রেসিডেন্টের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।