পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সামাজিক নিরাপত্তা বলয় না বাড়িয়ে এখানে হাত দিলে হাজার হাজার পরিবারের দুর্ভোগ বাড়বে
-বিশেষজ্ঞদের অভিমত
হাসান সোহেল : পুঁজিবাজারের অস্থিরতা, বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র সাধারণের কাছে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপকারভোগীদের অধিকাংশই হলেনÑপেনশনভোগী, বৃদ্ধ, দুস্থ ও অসহায় নারী। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কিছুটা বাড়ানোর পরও বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের ঝোঁক কমেনি। এদিকে সরকারের ‘ঋণের বোঝা’ বেড়েই চলেছে এই অজুহাতে আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় সঞ্চয়পত্র দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের কিছু সুবিধা জোগাতেই এ ধরনের বিনিয়োগে উচ্চ সুদ পরিশোধ করে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র হচ্ছে নিরাপদ বিনিয়োগ। যাদের অল্প কিছু টাকা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত সামর্থ্য নাই। আবার সামর্থ্য থাকলেও ঝুঁকি সামাল দেওয়ার মত সাহস নাই। বয়স হয়ে গেছে। বিধবা বা স্বামী অসুস্থ্য। সংসারে কর্মক্ষম কোনো ব্যক্তি নাই। তাদের জন্য একমাত্র ভরসা হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর এই স্কিম। এছাড়া আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয় খুবই দুর্বল। সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি হলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কিছু হ্রাস করা যাবে। তা না করে এতে হাত দিলে হাজার হাজার পরিবারের দুর্ভোগ বাড়বে এবং সামাজিক নিরাপত্তা আরও দুর্বল হবে। সঞ্চয়পত্র সাধারণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবেও কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেছেন, সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের অন্যতম মাধ্যম সঞ্চয়পত্র। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণভাবে যেমন সম্পদ আহরিত হয়, তেমনি ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় স্কীমে যুক্ত হয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম মাধ্যম সঞ্চয়পত্র। কিন্তু বাস্তবে থাকছেনা, বৃত্তশালীরাও চলে আসছে বিনিয়োগে। যাচাই-বাছাইও হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পেনশনভোগী, বৃদ্ধ, দুস্থ ও অসহায় নারী এরকম নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য বিশেষায়িত সেবা রেখে উচ্চ মুনাফা দেয়া যেতে পারে। যাতে সমাজের দুর্বলরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাশাপাশি সকলের জন্য একটি সেবা চালু করা। যাতে বৃত্তশালীরা বিশেষায়িত সঞ্চয়পত্রে ঢুকতে না পারে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট ৬০ হাজার ১২৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। মেয়াদ পূর্তির পর গ্রাহকরা আসল তুলে নিয়েছেন আট হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এই নয় মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) মোট ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল।
একাধিক বিনিয়োগকারীর মতে, পুঁজিবাজারের অস্থিরতা আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। একই সঙ্গে ঝুঁকি এড়াতেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। সূত্র মতে, নিরুপায় আমানতকারীরা নিরাপত্তার মাধ্যম হিসেবে ঝুঁকছেন সঞ্চয়পত্রের দিকে। সেখানেও কয়েক বছর আগে মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছে। তবে এখনো তা আছে ১১ শতাংশের কিছু ওপরে। অবশ্য অগ্রিম আয়করসহ অন্যান্য চার্জ মুনাফা থেকে কাটা হয়।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র একদিকে সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটানোর নীরব প্রক্রিয়া, অন্যদিকে অনেকটা সামাজিক নিরাপত্তাবলয়। আর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়ে দিলে এর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা যাবেনই-বা কোথায়? সাধারণত তাঁদের আর কোনো উৎস থেকে তেমন কোনো আয় আসে না। এটাকেই নেড়েচেড়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেল। আবারও অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর ইঙ্গিত দিলেন।
এর আগে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে বলে গত বছরের মে মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু বাজেট অধিবেশনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করায় শেষ পর্যন্ত আর সঞ্চয়পত্রে হাত দেননি। গত সোমবার আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়টি এখনও বিবেচনায় আছে। এটা পর্যালোচনা করা হবে।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। পাশাপাশি আয়বৈষম্য বাড়ছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফানির্ভর লোকগুলোর বিশাল অংশই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অংশীদার নন। বরং উঁচু চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিরাও ক্রমান্বয়ে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিতে চলে যাচ্ছেন। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ও খুবই দুর্বল। এদিকে নজর না দিলে আয়বৈষম্য ক্রমবর্ধমান হয়ে সামাজিক শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করতে পারে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি হলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কিছু হ্রাস করা যাবে। তা না করে এতে হাত দিলে হাজার হাজার পরিবারের দুর্ভোগ বাড়বে এবং সামাজিক নিরাপত্তা আরও দুর্বল হবে। সঞ্চয়পত্র ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবেও কাজ করছে। আর তাই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার বিষয়টি শুধু বাজেটের আয়-ব্যয়ের হিসাবে না দেখে সামাজিক উপযোগিতার কথা বিবেচনা করে গুরুত্ব প্রদানের কথা জানান সাবেক এই মন্ত্রী পরিষদ সচিব। উল্লেখ্য, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পেনশনার এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।