বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাদারীপুরের শিবচরের উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও ধারন করে টানা ৩ বছর শারীরিক সম্পর্ক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ উত্থাপনের পর ফাঁস হয় আরো কয়েকটি অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনা। মিলেছে ছাত্রীদের সাথে একাধিক অডিও রেকর্ডসহ ছাত্রীদের সাথে বরবেশে ছবিসহ নানান তথ্য। সবকিছু হাতে পেয়েও সংশ্লিষ্ট কত্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে গত দেড় মাসেও তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
জানা যায়, উপজেলার উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম তরুন শিক্ষক। ৫ম ও ৮ম শ্রেনীতে বৃত্তিপ্রাপ্ত একই বিদ্যালয়ের এক দরিদ্র মেধাবী সুন্দরী ছাত্রীর সাথে সে ৭ম শ্রেনীতে পড়–য়া অবস্থায় বিশেষ খেয়াল রাখতো। মাঝেমাঝেই ওই ছাত্রীসহ ৪/৫ জন শিক্ষার্থীকে রবিউল বাসায় নিয়ে খাওয়াতো ও পড়াতো। স্ত্রী অন্য উপজেলায় চাকরি করার সুবাদে তার বাসায় নির্বিঘেœই সবাই যাতায়াত করতো। ৮ম শ্রেনীতে পড়–য়া অবস্থায় একদিন রবিউল মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখে। এরপর থেকেই সুযোগ বুঝেই ভিডিও অন্যদের দেখানোর ভয় দেখিয়ে ও বিয়ের প্রলোভনে মেয়েটির সাথে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। একাধিকবার গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটায়। কিন্তু ৬মাস-১বছর আগে থেকে মেয়েটি অন্য ছাত্রীদের বাসায় আনা দেখে আপত্তি করে। মেয়েটি এক পর্যায়ে জানতে পারে বিদ্যালয়ের আরো বেশ কয়েকটি শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষক রবিউলের একই ধরনের সম্পর্কে বাধ্য করছে। এতে সে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে তাকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি আবারও ধর্ষণ করে। এভাবে ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত রবিউল ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। মেয়েটি বর্তমানে দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। সম্প্রতি তাদের এই সম্পর্কের অপব্যাখা দিয়ে মেয়েটির নামে কুৎসা ছড়ায় রবিউল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের মাঝে। মেয়েটি বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষকের বিচার দাবিতে গত ১৩ মার্চ ওই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরই বের হয়ে আসে একের পর এক অপকর্মর তথ্য। বের হয় একাধিক মেয়ের সাথে আপত্তিকর ছবি অডিও রেকর্ডিং। এরপর ৯ম ও দশম শ্রেণীর আরও দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকেও নাম প্রকাশে না করার শর্তে শিক্ষক রবিউলের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগের সত্যতাও স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকবৃন্দ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছে। তবে অভিযোগ উঠার পরপরই বিদ্যালয় থেকে ছুটি না নিয়েই পালিয়ে গিয়ে ফোনে ওই ছাত্রীকে অভিযোগ তুলে নিতে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষও সম্মান ক্ষুন্নর ভয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মা জানান, রবিউল আমার মেয়ের সাথেও শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আমরা জানতে পেরে মেয়েকে ফিরিয়ে আনলেও সে ভয় দেখাতো। পরে হেড স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ওর মত শিক্ষকের কঠিন বিচার হওয়া উচিত।
ওই স্কুলছাত্রীর অভিভাবক বলেন, রবিউল শিক্ষক নামের কলংক। আমাদের সদা হাসি-খুশি ফুটফুটে মেয়েটির জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা ওর দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চাই।
ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী বলেন, রবিউল স্যার আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথম লেখাপড়ার খোজখবর নিত। পরে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সাথে আমাকেও বাসায় নিয়ে পড়াতো। ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমাকে একদিন জোর করে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে আমার অমতে ভিডিও দেখানোর ভয় দেখিয়ে আমাকে অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছে। আরো কয়েকজন সিনিয়র আপাকেও সে একই কায়দায় ফাসিয়েছে। স্কুলের সুন্দরী মেধাবী মেয়েদের সে ৭ম বা ৮ম শ্রেনী থেকেই টার্গেট করে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে এই জঘন্যতম কাজ সে করতো। আমি ওর কঠোর বিচার চাই, যাতে আর কারো ক্ষতি করতে না পারে।
উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান বলেন, ওই স্কুলছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষক রবিউলকে প্রশ্ন করা হলে সে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই কৌশলে পালিয়ে গিয়ে এখন ফোনে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। আর আমাকেও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকতে বিভিন্ন প্রলোভন দেখাচ্ছে। তবে আমরা সকল শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সাথে আলোচনা করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাদির খালাসী বলেন, আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। খুব শির্ঘ্যই অভিযুক্ত শিক্ষক রবিউলের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রবিউলের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মাদারীপুর সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাধ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ রাখলে অপরাধ দমন করা কঠিন। এ ব্যাপারে ওই স্কুল ছাত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা কঠোর ব্যাবস্থা নিতে পারবো। আর এতে করে সমাজে এ ধরনের অপরাধ প্রবনতা হ্রাস পাবে। ওই শিক্ষক যে জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দিয়েছে তা কঠিন অপরাধের শামিল। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।