Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় ধূকে ধুকে কষ্ট দেওয়াটাই এই সরকারের উদ্দেশ্য -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:২৮ পিএম | আপডেট : ১২:২৯ পিএম, ৫ মে, ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো ও জাল নথি তৈরির মাধ্যমে সাজা দিয়ে বন্দী করে বিনা চিকিৎসায় ধূকে ধুকে কষ্ট দেওয়াটাই হচ্ছে সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এর পেছনে সরকার প্রধানের চরম প্রতিহিংসা কাজ করছে।
আজ সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও এখনও তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আমরা বার বার বলছি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার বিষয়ে কোন কর্ণপাতই করছে না। উল্টো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করছেন। এদের নিষ্ঠুর রসিকতায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতভম্ব। যারা হত্যা এবং লাশ নিয়ে খেলা করে তাদের কাছে মানুষের জীবনের কিইবা দাম আছে ? দেশনেত্রীকে মিথ্যা সাজানো ও জাল নথি তৈরির মাধ্যমে সাজা দিয়ে বন্দী করে বিনা চিকিৎসায় ধূকে ধুকে কষ্ট দেওয়াটাই হচ্ছে সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। এর পেছনে সরকার প্রধানের চরম প্রতিহিংসা কাজ করছে। দেশনেত্রীর প্রতি সরকারের আচরণ চরম মানবধিকার লঙ্ঘন ও আইনের লঙ্ঘন। গতকালও আমরা খবর পেয়েছি-তাঁর হাঁটু ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাসহ নানাবিধ জটিল শারীরিক সমস্যা তাঁকে আক্রান্ত করছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পরিত্যক্ত রুমে থাকায় এখন তিনি প্রায়ই জ্বরে ভুগছেন এবং কাশি ও কফ লেগেই আছে। স্যাঁতসেঁতে ও ধুলাকীর্ণ এরকম অবস্থায় সাধারণত: নিউমোনিয়ার আশঙ্কা থাকে। তাঁর চোখে যে ব্যথা হচ্ছে সেটি এখনও সারেনি অর্থাৎ একই অবস্থাই আছে। কিন্তু সরকার তাঁকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। উনার হাঁটুতে ফরেন বডি থাকা এবং পিঠে-ঘাড়ে ও কোমরে প্রচণ্ড ব্যথার জন্য বিশেষ ধরণের এমআরআই এর প্রয়োজন। কিন্তু তাঁর জন্য বিশেষ এমআরআই এর যে দাবি করা হয়েছিল সেটিকেও সরকার পাত্তা দেয়নি।
তিনি বলেন, কারা আইনে একজন বন্দীর সাথে প্রতিদিনই দেখা করার বিধান রয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন দুরের কথা, দেশনেত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের যেখানে সপ্তাহে একদিন দেখা করতে দেয়া হতো সেখানে এখন ১০ দিন পর পর দেখা করার আদেশ জারি হবে বলে শোনা যাচ্ছে। জুলুমশাহীর হিংসাত্মক আচরণে দেশনেত্রীকে জর্জরিত করার জন্যই কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রীর সঙ্গে সরকারের এহেন আচরণে গোটা জাতি শুধু গভীরভাবে উদ্বিগ্নই নয়, মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত। আমি আবারও অবিলম্বে দেশনেত্রীকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যত্থায় দেশবাসী আর বসে থাকবে না। নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই পালন করবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, লুট, হরিলুট, চাঁদাবাজি, দখলবাজী, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, সমস্ত ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও নির্যাতন-নিপীড়নে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, যেভাবে মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরণ করে কালা বোবা বানানো হয়েছে, তা থেকে বাঁচতে পুরো জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে পুলিশি তাণ্ডব, গণগ্রেফতার এবং এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ দিনকে দিন আরও পরিব্যাপ্ত হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ নানাভাবে হয়রানিও করছে পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ। খুলনা জেলা বিএনপি’র ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল হাসান রবিসহ ১১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রূপসা, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন থানা ও উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হানা দিয়ে ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। গতকাল গাজীপুরে বিএনপি ও শরীক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারসহ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে ব্যাপক হয়রানী করা হয়েছে। গতকাল রাতে পুলিশি অভিযানের অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ টঙ্গী থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। তিনি রাতে টঙ্গীতে অঞ্চল ভিত্তিক একটি সমিতির কর্মকর্তাদের সাথেও গোপন বৈঠক করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় জনতার ঢল দেখে আওয়ামী লীগ আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনীকে দিয়ে হয়রানী শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী সরকারী দলের নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্বিচারে আক্রমণ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
দুদিন আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠন সুজনের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে তাদের মাঠ জরিপের ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে দুই সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গণমাধ্যমেও ভোট নিয়ে ভীতি ও শঙ্কার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা এসপি ও খুলনায় পুলিশ কমিশনার। তাদের নির্দেশে দুই সিটিতে পুলিশি তাণ্ডব চলছে। গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করার ফাইনাল কল দিতেই এই পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে ভোটারদের ওপর দুরমুস চালানো হচ্ছে। সরকার নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে সরকারের প্রশ্রয়ে পুলিশ হয়ে উঠেছে স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া। ভরাডুবির ভয়ে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। আওয়ামী শাসন কখনোই ভোটাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর হয়নি। গণমাধ্যমে একতরফা ফলাফল ঘোষণা করাই প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন যেখানে দুই সিটির নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি, ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে তাদের দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন কিভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানান। চ্ছি। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গাজীপুরের এসপি ও খুলনার পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যত্থায় দুই সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অসম্ভব।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ