পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুই দিনে মারা গেছে ৩৪ জন : আজ জরুরি সংবাসম্মেলন ডেকেছে মন্ত্রণালয়
কয়েক বছর ধরে দেশে বজ্রপাত প্রাণহানির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বর্তমানে এ দেশে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৃত্যুর তুলনায় বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কম নয়, বরং বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে সা¤প্রতিক বছরগুলো দেশে বজ্রপাতে মানুষ মারা যাবার সংখ্যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত বজ্রপাতে অন্তত ১৩০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে রোববার ও সোমবার দুইদিনেই বজ্রপাতে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে ৩৪জন মারা গেছে। তবে সরকারি খাতায় তা এখনো ৯জনের মারা যাওয়ার খবর রয়েছে। যদিও স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে মৃতের সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। এ ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে গতকাল দেশের দক্ষিনাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জানা গেছে।
বজ্রপাতে মানুষ মারা যাবার সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বজ্রপাতের প্রবণতাও বেড়েছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম।গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয় বলে জানা গেছে। কালবৈশাখী, ঘুর্নীঝড় ও বজ্রপাতের তথ্য সংগ্রহরে জন্য মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এদিকে দেশের চলমান আবহ্ওায়া পরিস্থিতি নিয়ে আজ জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তবে সংবাদ সম্মেলনে করনীয় সম্পকে তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। বজ্রপাত বেড়ে যাবার কারণ কী সেটি নিয়ে দেশে কোন গবেষণা নেই। তবে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষক এর নানা কারণ তুলে ধরেন। কোন কোন গবেষক বলেন তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অন্যতম। উন্নত দেশগুলোতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু সংখ্যা কমলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই মাঠে কাজ করেন এবং পথচারী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে দেশে বজ্রপাত বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। উপকূলীয় এলাকায় এর মাত্রা আরো কয়েক গুণ বেশি। বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশ মারা যায় বাংলাদেশে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা আশঙ্কাজন ভাবে বাড়বে। তখন বজ্রপাতের হার সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়বে। দেশে প্রতি মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ বার বজ্রপাত হয়। দেশের ৩৫টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে যেখানে ২০১০ সালে ৬৫৮টি বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে ২০১৫ সালে ১২৯৫ টি বজ্রপাত সংঘটিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাত বৃদ্ধি পায় সাড়ে ১২ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন, এই শতাব্দীর শেষে বজ্রপাতের পরিমাণ আরো ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ও মেঘের পরিমাপের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালেফোর্নিয়ার জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বজ্রপাতের পরিমানের রেকর্ড থেকে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এপ্রিল মাসে বজ্রপাতের পরিমান আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উপকূলে বজ্রপাত পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ২০১০ সালে ঢাকায় এপ্রিলে বজ্রপাতের পরিমান ছিল ১৫ বার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ বারে। ২০১৬ সালে সিলেটে বজ্রপাতের পরিমান ছিল ২৩০বার। ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে রাজশাহীতে হয়েছে ৩৫০বার। এর এবার চলতি মার্চ মাসে ঢাকায় আট জেলায় বজ্রপাতের পরিমান ছিল ৪২০বার। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহকারী অধ্যাপক ও লরেন্স বার্কলে জাতীয় গবেষণাগারের ফ্যাকাল্টি বিজ্ঞানী ডেভিড রম্প বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স এ প্রকাশিত গবেষণা পত্রে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমান বৃদ্ধি সম্পর্কযুক্ত। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। তার হিসেবে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১২ শতাংশ। জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অত্যধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধির কারণে গোটা বিশ্বেই বজ্রপাত বাড়ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, আজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন বরয়েছে। বজ্রপাতে প্রাণহানী ঠেকাতে কি করা যায় সে বিষয়ে সকলের মতামত নেয়া হচ্ছে।
বরিশাল ব্যুরো/ প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেগের মওশুমী কালবৈশাখী ঝড়ে গতকাল দক্ষিনাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দুপর ১২টা ৫মিনিট থেকে আকাশ কালো করা মেঘের সাথে মাঝারী থেকে ভারি বর্ষনে বরিশাল মহানগরীর জনজীবন অচল হয়ে পরে। সাথে ভারি বজ্রপাতের আওয়াজে আতংকিত হয়ে পরেন সকলেই। টানা ঘন্টাখানেকের ভারি বর্ষনের পরে সন্ধা পর্যন্তই কম বেশী বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। সন্ধা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সাথে প্রায় ৩৭ নটিক্যাল মাইল বা ৭০ কিলোমিটার বেগের ঝরো হাওয়ায় নৌযান চলাচলেও ঝুকির সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে পৃথক দুটি স্থানে ব্রজপাতে চারজনের মৃম্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও একজন। সোমবার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলায় তিনজন ও সোনারগাঁ উপজেলায় একজনের মারা যায়। মৌলভীবাজারে মারা গেছেন প্রবাসীসহ ২ জন মৌলভীবাজারে নিহত ২ জনের মধ্যে একজন ওমানে চাকরি করতেন। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে বকুল মিয়া (২২) ও সরিষাবাড়ি উপজেলার শিবপুর গ্রামের আলেপ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৬)। সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় মারা গেছেন ১ জন, রাজবাড়ীতের বালিয়াকান্দি উপজেলায় মারা গেছেন ১ জন, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মারা গেছেন ১ জন, রাজশাহীতে বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু হয়। এর আগে রোববারও দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে ও বজ্রপাতে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।