দ্রুত সনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ। কারন, ক্যান্সার যত দেরিতে সনাক্ত হবে রোগীরও সমস্যা বেশি হবে। পাশাপাশি দেহে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আর তাই চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে দ্রুত ক্যান্সার সনাক্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পেট (পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি) সিটি।
চিকিৎসকরা বলেছেন, এটি আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম উদাহরণ। অনেক সময় রোগীর জীবন ও মৃত্যুর মাঝে সহায়ক ভুমিকাটাই পালন করে।
চিকিৎসকরা জানান, পেট সিটি অন্যান্য ইমেজিং টেকনোলজি যেমন- এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই প্রভৃতি প্রযুক্তি থেকেও ভিন্নমাত্রার। কারণ এগুলো শুধু শরীরে টিউমারের আকার, আকৃতি, অবস্থান সম্পর্কে ধারনা দেয়। কিন্তু পেট সিটি ক্যান্সার (ম্যালিগন্যান্ট টিউমার) বা ক্যান্সার নয়- (বিনাইন টিউমার) দুটো সর্ম্পকেই ধারণা দিতে সক্ষম।
পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি টিউমার বা শরীরে অ্যানাটমিকাল অ্যাবনরমালিটি বা ক্যান্সার আক্রান্ত স্থান সনাক্ত করতে পারে। একই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি কোষের অ্যাবনরমাল মেটাবলিক এবং বায়োক্যামিকাল অ্যাক্টিভিটি সনাক্ত করতে সক্ষম। এখানে ব্যবহৃত হয় একটি রেডিও এক্টিভ ড্রাগ, বা মার্কার (এফডিজি), যেটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়; কিন্তু এটি কোষের অ্যাবনরমাল মেটাবলিক এবং বায়োক্যামিকাল অ্যাক্টিভিটি সনাক্ত করে।
সাধারণত, ক্যান্সার সনাক্তকরণ (ফুসফুস, ব্রেইন, প্যানক্রিয়াস, লিভার, ব্রেস্ট, মেলানোমা, লিম্ফমা, থাইরয়েড, কোলন ক্যান্সার); টিউমার কতটুকু আক্রমনাত্মক তা মূল্যায়ন করা; টিউমার চিকিৎসা/থেরাপি দেবার পর তার সফলতা নিরুপণ করা; টিউমার বিনাইন/ম্যালিগন্যান্ট সেটি নির্ণয়সহ চিকিৎসা বিজ্ঞানে আধুনিক প্রযুক্তির এক উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে পেটসিটি।
২০১২ সালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ওই সময়ে বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন আর মৃত্যু হার ছিল ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন। আর ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্য্যা দাড়াবে ২১ দশমিক ৭ মিলিয়নে যেখানে মৃত্যুহার হবে ১৩ মিলিয়ন।
চিকিৎসকরা বলছেন, যেহেতু পেটসিটির মাধ্যমে দ্রুত ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব তাই এ পদ্ধতিটি হতে পারে ক্যান্সার নিরাময়ের কার্যকরী মাধ্যম।
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হসপিটাল ভালো মানের পেট সিটি মেশিনে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে, তারা ব্যবহার করছে ফোর্থ জেনারেশন ফ্লো মেশিন। যা আগের জেনারেশনের মেশিনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার ইমেজ দেয় এবং সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় করে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হসপিটাল ছাড়া অন্য কোন বেসরকারি হাসপাতালে ফোর্থ জেনারেশনের এই পেটসিটি মেশিন নেই। এটা এতটাই কার্যকর যে, বিরতিহীন ছবি তোলার কারনে শরীরের কোনও স্থানি লুকিয়ে থাকা ক্যান্সার কোষও ধরা পরতে বাধ্য।