পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অন্তহীন দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম কেনার নামে চলছে লুটপাট। অর্থ লোপাট, অনিয়ম দুর্নীতি গত কয় বছরে বেড়েছে। এ কারণে প্রতি বছর বিমানকে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এসব দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে স্বয়ং বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাজাহান কামাল সম্প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে গত ৮ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদের হাতে বিমানের দুর্নীতি ও লুটপাটের একটি প্রতিবেদন তুলে দিয়েছে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দীর্ঘ অনুসন্ধানে বিমানের অনিয়ম দুর্নীতি ও শত শত কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে এসেছে এ প্রতিবেদনে ।
বিমানমন্ত্রীর অভিযোগ, বিমানের সিট থাকার পরও গ্রাহকদের কাছে এর টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। প্রায়ই বিমানের সিট খালি রাখা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিমানের ভয়াবহ দুর্নীতির একটি প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেশ করেছে। পাশাপাশি বিমানের দুর্নীতি বন্ধের জন্য ৯ দফা সুপারিশও করেছে। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটিও একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। তারপরও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। বরং বিমানের দুর্নীতে আরো ১০ গুণ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বিমানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রক্ষণাবেক্ষণ খাতে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমনের অংশ হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-সংক্রান্ত একটি টিম গঠন করে দুদক। গত বছরের শুরুতে গঠিত এ টিম বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনে জমা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের দায়ে প্রায় ৩৪৩টি মামলা রয়েছে বিমানের বিরুদ্ধে। এত মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষকে। আবার এসব মামলা চালানোর নামে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম বিদেশ থেকে ক্রয় করা হয়। এই কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে বিমানের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে ঠিকাদারদের যোগসাজশে চলছে লুটপাট। এছাড়া কেনাকাটার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের দরপত্রে হচ্ছে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি। বিমানের বোর্ড পরিচালকরা নিজেরা লাভবান হতে তাদেরই পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে কার্যাদেশ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
দুদক তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমানের বিভিন্ন খাতে চলা অনিয়ম ও দুর্নীতি চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি এসব রোধে ৯ দফা এবং বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি ও বিদেশি এয়ারলাইন্স যখন লাভ করছে, তখন বাংলাদেশ বিমানকে শত শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে এসব দুর্নীতিবাজদের কারণে।
গত ছয় বছরে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক অনিয়ম, আপত্তি অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে বিমানে। এ সম্পর্কিত অডিট আপত্তি ছিল র্দীঘদিন। অডিটে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়লে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটি বিমানকে বিশেষ বিভাগ গঠন করে এসব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিমানের দুষ্টচক্র ইতোমধ্যে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামাদি কেনার অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আত্মসাৎ করেছে শত শত কোটি টাকা। এ ছাড়া নিম্নমানের যন্ত্রাংশ অতি উচ্চমূল্যে ক্রয় দেখিয়ে ঠিকাদার ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে তারা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। বিমান মেরামতের জন্য তাদের পছন্দসই বিদেশি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অতি উচ্চমূল্যের বিল দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা বাগিয়ে তা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা।
দুদক বলছে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনা এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিং খাতে কেনাকাটার সময় আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়ম সঠিকভাবে পরিপালিত হচ্ছে কি না তা দেখা। এছাড়া আর্থিক খাতগুলো মনিটর করার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা যেতে পারে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা, বিমানের খাবার থেকে আয় বাড়াতে বিএফসিসিতে আন্তর্জাতিক মানের শেফ নিয়োগ, বিএফসিসির সব শাখায় মনিটরিং বৃদ্ধি, ঢাকায় আসা সব উড়োজাহাজ যেন বাংলাদেশের খাবার নেয়, সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ। বিমানের সব ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে পিপিআর ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ নিশ্চিত করা এবং ক্রয় কমিটিতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা থেকে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। দুদকের এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবহরের বিভিন্ন উড়োজাহাজের জন্য যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম কেনার তালিকা থাকা দরকার। এগুলো কখন কেনা হয়েছে, কত দামে কেনা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা- এসবেও স্বচ্ছতা থাকা দরকার। উড়োজাহাজের কেনা যন্ত্রাংশ কত টাকা বিলের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে, সেই বিলেরও বিশদ বিবরণ থাকা দরকার। এসব রেকর্ডপত্র বিমানের বোর্ডসভায় উপস্থাপন এবং সময়মতো অনুমোদন নেয়া প্রয়োজন। শত শত কোটি টাকা লুটপাট আর লোকসান দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আছেন বহাল তবিয়তে। বিমানের লাভ-ক্ষতি হিসাবই শুধু করা হয়। অপচয় দুর্নীতি বন্ধে নেই কোনো উদ্যোগ।
জানা যায়, বোয়িংয়ের নাম ব্যবহার করে নিম্নমানের কোম্পানির কাছ থেকে হাইড্রোলিক পাইপ কিনে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছে বিমানের একটি সিন্ডিকেট। আর দুবাই অফিস থেকে ১৪শ’ ডলার দিয়ে ওই হাইড্রোলিক পাইপ কিনে লন্ডনে পাঠাতে হয়েছিল। ওই টাকা বিমানকে গুনতে হয়েছিল। এছাড়া ৩০ ঘণ্টা হিথ্রোতে ল্যান্ডিং চার্জ, যাত্রীদের হোটেল বিলসহ আরো কোটি টাকা গুনতে হয়েছিল বিমানকে। এর আগে বিমানের পালকি আনার এক মাসের মধ্যে ৫০টি আসনের হাতল ভেঙে যায়। পরে যুক্তরাজ্যের ওয়েভার কোম্পানি ৩৫০টি হাতল নতুন করে সংযোজন করে দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।