Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ কি এদেশকে ইন্ডিয়া মনে করেন -দেশের ৫০ আলেম ও মুফতি

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জে এক মাদরাসায় খতমে বুখারীতে শত বছরের ঐতিহ্য ভেঙ্গে অমুসলিম প্রধান অতিথি ও বেপর্দা মহিলা বিশেষ অতিথিকে নিয়ে দু’আলেমের মঞ্চে বসা ও বিশেষ কক্ষে একত্রে বৈঠকে বাংলাদেশের তওহীদি জনতার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদটি দেখে আশা করেছিলাম সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় হবে। তারা আল্লাহর দরবারে তওবা, বিবেকের কাছে অনুশোচনা ও মুসলিম জাতির নিকট ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু বড়ই দুঃখ পেলাম সেই দুই বড় মাওলানা তাদের কৃতকর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে অনলাইন পোর্টালকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। চোরের মা’র বড় গলার মত তাদের এ বক্তব্য ইসলামের বিকৃতি, তাদের দুনিয়া লোভী, ক্ষমতা পূজারী, উলামায়ে ছু হওয়ার আশংকা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে তাদের তওবা করা উচিত। গতকাল এক বিবৃতিতে দেশের ৫০ জন আলেম ও মুফতি এসব কথা বলেন। কওমী মাদরাসা, হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য সংস্থার এসব আলেম দেশের ২০ টি জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা বলেন, এ ধরনের ফেতনা বন্ধ না হলে ৬৪ জেলার আলেমগণ বক্তৃতা-বিবৃতি দিবেন। প্রয়োজনে দ্বীনি শিক্ষার পবিত্রতা ও কওমী মাদরাসার মর্যাদা রক্ষার্থে তারা আন্দোলনে নামবেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, আল্লামা মুফতি তাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রহমান, আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ, মাওলানা নুরুল করীম, মুফতি আহমাদুল হক, মুফতি বদরুল আমীন, মাওলানা জাকারিয়া, মাওলানা শেখ জালাল আহমাদ প্রমুখ।
আলেমগণ বলেন, একটি অনলাইনকে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ফেসবুকের এসব আলোচনা সমালোচনাকে অযাচিত বলে ঘটনাকে খুব স্বাভাবিক দেখছেন। তিনি হেসে হেসেই বলেন, ‘এটা নিয়ে সমালোচনার কী আছে। তারা জনপ্রতিনিধি, যে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার রাখে। আর এ ধরনের প্রোগ্রামে তো বিধর্মীদের বেশি বেশি আসা উচিত যা তাদের হেদায়াতের উছিলা হতে পারে।’ আল্লামা মাসঊদ ওই নিউজ পোর্টালকে বলেন, ‘মাদরাসা কোনো ইবাদতগাহ নয়। এটা একটা শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে আসতে অজু করতে হয় না, তাহিয়াতুল অজুও পড়তে হয় না। মাদরাসায় কী হয় দেখার জন্য অন্যরা আসতেই পারে। তিনি পাশের দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের দেশে এসব নিয়ে এত প্রতিক্রিয়া হয় কিন্তু ভারতে এমন অনুষ্ঠান অহরহই দেখা যায়।’ এদিকে নারীর পর্দার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘এ সমস্যা তো নতুন নয়। গত ১০০ বছর ধরে আমরা এ সমস্যায় ভুগছি এবং আলোচনা করছি। কিন্তু এ সমস্যা নিয়ে আপনি যদি বসে থাকেন তাহলে তো ঘরে আবদ্ধ হয়ে যাবেন। আপনি বাজারে যান সেখানে খোলামেলা নারী, রাস্তায় বের হন সেখানেও নারী। অথচ ইসলামি অনুষ্ঠান বলে নারী এমপি যেভাবে মাথা ঢেকে এসেছেন সেটা নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথা না। তাছাড়া চার ইমামের মধ্যে আবু হানিফা রহ. ছাড়া অন্যদের মতে চেহারা পর্দার অন্তভর্‚ক্ত নয়।’ আমরা ফরীদ সাহেবের এসব হাস্যকর ও খোঁচা মারা কথায় ব্যথিত হয়েছি। তিনি ভারতের নজির দেখান, মনে হয় তিনি এদেশকে ইন্ডিয়ার মতো মনে করেন। কিন্তু তাকে স্মরণ রাখতে হবে বাংলাদেশ ভারত নয়, এদেশের মাদরাসা ও মুসলমানরা ভারতের মতো সংখ্যালঘু নয়। তারা সেখানকার অমুসলিম নেতাদের যেভাবে মনে ভয়-ভীতি নিয়ে তোয়াজ করে বাংলাদেশ তেমন নয়। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে জনপ্রতিনিধি যেই হোন কোনো ধর্মীয় পবিত্র অনুষ্ঠানে তার যাওয়া না যাওয়া শরীয়তের ঐতিহ্য অনুযায়ী হতে হবে। গায়ের জোরে নয়। তিনি বলেছেন মাদরাসা ইবাদতগাহ নয়, নিছক শিক্ষাকেন্দ্র। এটি তার স্বপ্ন। বাংলাদেশে এখনও মাদরাসা স্কুল কলেজের সমান হয়ে যায়নি। শিক্ষাকেন্দ্রর চেয়ে কওমী মাদরসাগুলো এখনও ইবাদাতখানাই বেশি। হাদীসের দরসে অজুসহ বসতে হয় এটি তারচেয়ে বেশি আর কে জানে। আর ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ মাদরাসায় এসে পড়লে সমস্যা কি? তার কী জানা নেই, ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ পড়েই হযরত বেলাল রা. এমন মর্যাদা লাভ করেছিলেন যে, তিনি দুনিয়ায় থাকতেই নবী করিম সা. জান্নাতে বেলালের পায়ের আওয়াজ পেয়েছিলেন। এখানে নিজের অবিবেচনাপ্রসুত কাজকে ঢাকার জন্য তিনি ‘অজু’ ও ‘তাহিয়্যাতুল অজু’কে খোঁচা মেরে এবং মাদরাসাকে বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের বদলে সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্র আখ্যা দিয়ে তিনি তার নিজেরই মর্যাদাহানী করেছেন। এতে করে তিনি কোনো দেশের ধর্মহীন এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন কি না তাও আমরা বুঝতে পারছি না। শত বছরের নিয়ম ভেঙ্গে তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন, বরং হানাফী মাযহাবের রীতি অস্বীকার করে তিনি নারীদের চেহারা খোলা রাখার পক্ষেও সাফাই গেয়ে ফেলেছেন। তিনি বাজারী নারীদের সাথে খতমে বুখারীতে যাওয়া নারীকে সমান সমস্যা বলে ধরে নিয়েছেন। অথচ পর্দা রক্ষার চেষ্টা বাজার ও মার্কেটে করা যদি ১০০ বছরের সমস্যা হয় সেটি কেন তিনি হাদীসের দরসে, খতমে বুখারীতে ও কওমী মাদরাসার আলেমদের মাহফিলে টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন। এর পক্ষে আবার সাফাইও গাইছেন। যা তার চিন্তা ও রুচির বিকৃতি, এজেন্ট হিসাবে একধরনের অসহায়ত্ব ও হেদায়তের পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট এক প্রকার প্রগলভতারই প্রমাণ বহন করে। আমরা তাকে হক্কানী আলেমদের পথে ফিরে আসার আহŸান জানাই। বিধর্মীদের মাদরাসায় আসাকে ভিন্নদৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন না মুফতি আবু ইউসুফও। বেফাকের মুফতি আবু ইউসুফ নিজের সাফাই বক্তব্যে অনলাইন পোর্টালকে বলেন, ‘নবীজি সা. এর কাছেও হিন্দু ও ইহুদিরা দোয়া নিতে আসত। তিনি নিষেধ করতেন না। তাই মাদরাসায় তারা আসতে পারেন।’ এখানে প্রশ্ন জাগে মুফতি আবু ইউসুফ নামের কোনো ব্যক্তি যিনি সেই মাদরাসায় বুখারী পড়ান, খতমে বুখারী করান এবং তিনি বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি নিজে একজন মুফতিও বটে। এমন একজন ব্যক্তি কী করে বলেন, ‘নবীজি সা. এর কাছেও হিন্দু ও ইহুদিরা দোয়া নিতে আসত। তিনি নিষেধ করতেন না। তাই মাদরাসায় তারা আসতে পারেন।’ নবী করিম সা. এর সময় আরব দেশে কী হিন্দু ছিল? নবী করিম সা. এর ২৩ বছরের নবুওয়তী জিন্দেগীতে কোনদিন কোন ইহুদি তাঁর কাছে দোয়া নিতে এসেছিল। মুফতি আবু ইউসুফকে তা প্রমাণসহ বলতে হবে। এত দুর্বল জানাশোনা নিয়ে তিনি কী করে ছাত্রদের শিক্ষাদান করেন। কিসের ভিত্তিতে তিনি আবার মুফতিও হলেন। তিনি যে ফতোয়া দিলেন ‘... তাই মাদরাসায় তারা (হিন্দু ও ইহুদীরা) আসতে পারেন।’ এ ফতোয়া বেফাকের প্যাডে লিখিতভাবে মুফতি বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষরসহ দেশবাসীর সামনে পেশ করতে হবে। আমরা ৫০ জন আলেম ও মুফতি বিস্মিত। আলেম নামধারী মানুষ সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থ বা কিছু সুখ সুবিধা ছুটে যাওয়ার ভয়ে এতটা নীচে নামতে পারে। দেশের আলেমসমাজ ও তওহীদি জনতাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। পঁচে যাওয়া গুটিকয় আলেম নামধারী ব্যক্তির কারণে গোটা ইসলাম যেন কলুষিত না হয়। আমরা এসব আলেমের হেদায়াত কামনা করছি।

 



 

Show all comments
  • সাইফ ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:৪৮ এএম says : 1
    আল্লাহ তুমি সবাইকে ঈমান দাও
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:৪৮ এএম says : 2
    দেশে যে কি শুরু হলো কিছুই বুঝতেছি না।
    Total Reply(0) Reply
  • নাবিলা ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:৪৯ এএম says : 1
    আলেমগণের কাছ থেকে আমরা সব সময় সঠিক দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • dr.harun ur rashid ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:১১ এএম says : 1
    There are so many olama and mufti in Bangladesh.But the numbers are useless if not they do their works properly..............
    Total Reply(0) Reply
  • Tarek ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১:৪৯ পিএম says : 1
    পঁচে যাওয়া গুটিকয় আলেম নামধারী ব্যক্তির কারণে গোটা ইসলাম যেন কলুষিত না হয়। আমরা এসব আলেমের হেদায়াত কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Elius Hossain ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১:৪৯ পিএম says : 2
    দেশের আলেমসমাজ ও তওহীদি জনতাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamunur rashid ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৪৮ পিএম says : 1
    উনার কাছে জাতি কি আর আশা করতে পারে,হাজার বছরের ঐতিহ্যককে একনিমিশে ধূলিশাস করে দিলো!!! এতোদিন মাসুদির বক্তই ছিলাম,আক্ষেপ হয় তার মত ব্যক্তির জন্য।।
    Total Reply(0) Reply
  • মো:জহিরুল ইসলাম ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:০৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ সুবাহানতায়ালা আমাদের হেদায়াত দানকরুন,★আমিন★
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ মনিরুজ্জামান ২৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    উনি গায়ের জোরে শুলাকিয়ার ইমামতি কেড়ে নিয়েছেন । কোন ভাল আলেম এটা করতে পারেনা ।
    Total Reply(0) Reply
  • shaheen Ebne Kalam ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৩৩ এএম says : 0
    ইসলাম মানুষ কে সংকীর্নতা থেকে প্রসস্ততার দিকে নিয়ে আসে। প্রতিটি ঘটনার ভাল মন্দ দুটি দিকই থাকে। দৃষ্টি ভংগী অনুযায়ী একেক জন একেক ভাবে কোন বিষয় কে বিশ্লেষন করেন। যা আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য হবে তাই আল্লাহর কাছে গ্রহন যোগ্য হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৪৯ পিএম says : 0
    আসতাগফিরুল্লাহ
    Total Reply(1) Reply
    • mohammad Anisur Rahman ১ মে, ২০১৮, ১:২৬ পিএম says : 4
      I think everybody should go for rectification in the path of Allah subhana o tala as sahabay keram Ra.And pray for all Ummaah of Mohammad SM. to give Hedayah.
  • Rizvi Ahmad ২ মে, ২০১৮, ১১:৩৫ এএম says : 0
    Foridke India patiae dao......
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলেম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ