Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এনএসআইয়ের সাবেক ডিজিকে কারাগারে প্রেরণ

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আগামী ১০ মে শুনানির পরবর্তি তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তবে ওয়াহেদুল হকের পক্ষে শুনানিতে কেউ অংশ নেননি। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ মে শুনানির পরবর্তি তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে, এ সময়ের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর দুপুরে গুলশানের বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয় বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান।
জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে কমিশন পান। পরে তাকে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে বদলি করা হয়। ১৯৭০ সালের মার্চে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনা নিবাসে স্থানান্তরিত হলে ওয়াহিদুল হকও সেখানে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ওই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন তিনি। ওই বছরই তিনি বদলি হয়ে আবার পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফেরেন ওয়াহিদুল হক। ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর তাকে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়।১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদুল। পরের বছর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্বপালন করেন।
১৯৮৪-৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াহিদুল হককে পরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই দায়িত্ব শেষে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এনএসআই‘র সাবেক ডিজি ওয়াহিদুল হকের বাড়ি মাদারীপুরে
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতার হওয়া এনএসআই‘র সাবেক ভারপ্রাপ্ত ডিজি মো. ওয়াহিদুল হকের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের চন্ডিবর্দী গ্রামে। তার পিতার নাম মো. শামসুল খলিফা। গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার বারিধারা তার নিজ বাসা থেকে মো. ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
চন্ডিবদী গ্রামে বাসিন্দা ও গ্রেফতারকৃত মো: ওয়াহিদুল হকের চাচাতো ভাই সাবেক পুলিশের এসআই এমদাদুল হক জানান, পাকিস্তান আমলে ওয়াহিদুল হকের জন্ম তার গ্রামের বাড়িতেই। তারা ৫ভাই। এর মধ্যে ওয়াহিদুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকতা, ভাই রেজাউল খলিফা মুক্তিযুদ্ধের পর রক্ষীবাহীনির ক্যাপ্টেন ছিলেন ভাই মঞ্জুরুল হক ছিলেন সেনাবাহিনীর লে: কর্নেল।আর এক ভাই মনিরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করে এবং ছোট ভাই জহিরুল হক আমেরিকা প্রবাসী। পিতা সামছুল হক খলিফা পাকিস্তান আমলে এয়ারর্ফোসের অফিসার হিসাবে চাকুরী করার সুবাদে পরিবারের সকলকে নিয়ে পাকিস্তানে থাকেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান গোলন্দাজবাহিনীর মেজর হিসাবে রংপরে দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়াহিদুল হক। তবে সেখানে কি ঘটেছে জানি না। দেশ স্বাধীন হবার পর ওয়াহিদুল হকসহ ২৩ জন সেনা অফিসারকে চাকুরীচ্যুত করা হলে জিয়াউর রহমান তাকে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করার সুয়োগ দেন। এরপর সরকারের বিভিণœ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে চাকুরী করে অবসরে যান। গ্রামের বাড়িতে ওয়াহিদুল হকের তেমন কোন জমিজমা নেই যা আছে তা আমরাই দেখাশুনা করি।
উল্লেখ্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা, পুলিশের উচ্চ পদস্থ সাবেক কর্মকর্তা ও এনএসআই‘র সাবেক ভারপ্রাপ্ত ডিজি মো. ওয়াহিদুল হককে মঙ্গলবার গেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই মো. ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সরকারের এই সাবেক কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫শ’ থেকে ৬শ’ বাঙালি ও সাওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষকে মেশিনগান দিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বলে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জানান। মো. ওয়াহিদুল হক ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত তিনি রংপুরে ছিলেন এবং সেখান থেকে বদলী হয়ে পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানে অবস্থান করে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ঐ বছর শেষের দিকে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ওয়াহিদুল হক ১৯৭৬ সালে পুলিশের এএসপি পদে যোগদান করেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে এনএসআই‘র ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে সর্বশেষে ২০০৫ সালে তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করতে আবেদন করি। বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। এরপরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এনএসআই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ