Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বহুল আলোচিত ডিআইজি মিজানকে দুদকে তলব

ধামাচাপা পড়েছে পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ৩ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে এক নারীর দায়েরকৃত অভিযোগ তদন্ত গঠিত পুলিশি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ধামাপাচা পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির পাওয়া গেছে। এ অভিযোগগুলো অনুসন্ধানের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের করার উদ্দেশ্যে তাকে তলব করা হয়েছে। প্রসঙ্গত,এক নারীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করায় আলোচনায় আসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে এক সংবাদ পাঠিকাকে উত্যক্ত ও প্রাণনাশের হুমকিসহ অবৈধভাবে বিপুল পরিমান স¤পদ অর্জন ও দুর্নীতিতে স¤পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ৬টি সংস্থায় চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীর স্বাক্ষরে বিভিন্ন সংস্থায় তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। তার নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এর আগে এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তাকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। মরিয়ম আক্তার ইকো নামের ওই নারী দাবি করেছিলেন, ঘরে বউ-সন্তান রেখে তাকে জোর করে বিয়ে করার পর ৪ মাস সংসার করেছিলেন ওই ডিআইজি। ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ডিআইজি মিজানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয় এবং অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ প্রধানের কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। ওই সময় এ সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে তিনি হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের। সেই কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতে নতুন আরেক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেলেন তিনি।
সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী এক সংবাদ পাঠিকার অভিযোগের বরাত দিয়ে গত ১৭ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে- ডিআইজি মিজান তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। তার নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশের জন্য ওই সংবাদ পাঠিকাকে দায়ী করে টেলিফোনে প্রতিদিনই হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। সংবাদকর্মীদের কাছে আসা একটি অডিও ক্লিপে শোনা যাচ্ছে, ফোনে ওই নারীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছেন ডিআইজি মিজান। তিনি বলেছেন, অভিযোগ প্রত্যাহার করে মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে তোকে সপরিবারে মেরে ফেলব। আমার কথা না শুনলে তোকে ৬৪ টুকরা করে ৬৪ জেলায় পাঠানো হবে। তোর মাথাটা রাখা হবে জিরো পয়েন্টে। যা হয় হবে। স¤প্রতি রেকর্ড করা ফোনালাপসহ ডিএমপির সাইবার ইউনিট অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী নারী। তিনি জানান, ডিআইজির অব্যাহত হুমকির কারণে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানায় জিডি করতে গেলে চার দিন ধরে তাকে ঘোরানো হয়েছে। পরে হুমকিদাতার নাম গোপন করে কৌশলে সাভার থানায় সংবাদ পাঠিকার স্বামী একটি সাধারণ ডায়েরি করতে সক্ষম হন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই ডিআইজির হুমকির কারণে কয়েক মাস ধরে ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এমন কী যে চ্যানেলে তিনি সংবাদ পাঠ করতেন নিরাপত্তার অভাবে সেখান থেকেও ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংবাদ পাঠিকা। বিমানবন্দর থানায় গত ১০ এপ্রিল যে অভিযোগ করেছেন, তাতে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, পুলিশ সদর দপ্তরে প্রত্যাহার হওয়া ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান গত ২৯ মার্চ দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার মোবাইলে ফোন করে সপরিবারে প্রাণনাশের হুমকি দেন। বাসা থেকে যদি বের হন বা অফিসে যান সেখানেও বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার হুমকি দেন পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি অশ্লীল ছবি তৈরি করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দেন তিনি। অভিযোগকারী জানান, হুমকি দেয়ার দিন রাতেই দেশি মাল নামে একটি ফেসবুক পেজের তথ্য পান তিনি।
ভুক্তভোগী সংবাদ পাঠিকা গণমাধ্যমকে জানান, ডিআইজি মিজানকে তিনি মামা বলে ডাকেন। তাকে তিনি তুমি বলেও সম্বোধন করতেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরেই ডিআইজির পরিবারের সঙ্গে সংবাদ পাঠিকার পরিবারের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সে সুযোগে তিনি তাকে জিম্মি করার চেষ্টা করেন। গাড়ি-বাড়িসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছেন। ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপটিতে ওই সংবাদ পাঠিকাকে উদ্দেশ্য করে ডিআইজি মিজানকে বলতে শোনা যায়, তোর জামাইরে ঘর থেকে বাইর হতে বল। পোলাপান রেডি আছে। সব রেডি আছে। তোকে মাইরা ফালামু। কোন... পোলা তোরে বাঁচায় আমি দেখুম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ