Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিতর্কের মধ্যে আড়াই হাজার ইভিএম ক্রয়ে চিন্তা ইসির

রাজনৈতিক ইভিএমের বিপক্ষে : জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ইভিএম

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নতুন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনÑইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ২৫৩৫ সেট ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে কিনতে চিঠি দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপে অধিকাংশ দল ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেন। তরা সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এসব মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে দ্রæত ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। প্রাথমিক ভাবে আড়াই হাজারের মত ইভিএম কিনলেও পরবর্তিতে আরো ৫ থেকে ১০ হাজার ইভিএম কেনার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনÑইভিএম সংগ্রহের লক্ষে দরপত্র/ প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য নর্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যর কমেটি করেছে ইসি। তারা বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমের চাহিদা , ক্রয় ও সংগ্রহের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন গুলোতে নতুন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনÑইভিএমে সফল হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে যন্ত্রটি ব্যবহার করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে সুরক্ষিত করে তৈরি হচ্ছে নতুন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন। ইভিএমের কারিগরি কমিটির জানায়, নতুন ইভিএমে ১০ রকমের সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি নির্বাচনে ব্যবহারের মাধ্যমে ১০টি সুবিধা পাওয়া যাবে সেগুলো হল, ভোটগ্রহণের আগে মেশিন চালু না হওয়া ও মেশিন ছিনতাই হলেও অবৈধ ভোটদান বন্ধ;, পাসওর্য়াড সুরক্ষিত থাকায় অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে মেশিন চালু করা সম্ভব নয়। ভোট শুরুর আগে-পরে শূন্য ভোটিং ও প্রিন্টিং করার সুবিধা । স্বয়ংক্রীয়ভাবে ফলাফল প্রিন্ট, ঘোষণা ও বিতরণ করার ব্যবস্থা। সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ব্যবহার উপযোগী ইভিএমের সুবিধাগুলোর মধ্যে ইভিএমকে ব্যবহার বান্ধব করার লক্ষ্যে ভোটার শনাক্তকরণ মেশিন এবং ভোটিং মেশিন দুটি একত্রিত করে একটি মেশিনে রূপান্তরিত করা। ব্যালট ইউনিট কানসিল বোতামটি বাদ দেওয়া, ব্যালট ইউনিটের ভোট প্রদানের বোতামগুলো বড় আকারের ও ভিন্ন রঙের করা এবং বোতামের পাশের বোতামটি একটু বড় আকারে করা। ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর ভোটারের সন্তুষ্টির জন্য ধন্যবাদ শব্দ যুক্ত করা। ইভিএমের কাঠামো, টাচ স্ক্রিন, কি- বোর্ড এবং ভোটদান বোতামগুলোর মান উন্নত করা। ভোটার ভ্যারিফিকেশন মেশিনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টরটি মেশিনের মধ্যে সংযুক্ত (ইন বিল্ট) করা। কিউআর কোড মুদ্রণ বাদ দিয়ে একটি মেশিনের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা। ইভিএমের পুরো প্রটোকল, বিজনেস প্রসেস, সোর্সকোড ইত্যাদির ওপর রাইট আপ প্রস্তুত করা ইসির সার্বিক তত্ত¡াবধানে সংরক্ষণ করা এবং ইভিএম নিরাপদে ব্যবহারের জন্য মেশিন অনুযায়ী, সুরক্ষা বক্স ব্যবহার করা।
ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা নতুন ইভিএম তৈরি করছি। আগামী ৫ সিটি কর্পোরেশনে পরিক্ষামূলক ব্যবহার করা হবে। সফল হলে সংসদ নির্বানে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এদিকে, ত্রুটিযুক্ত ছিল পুরনো ইভিএম মেশিন। প্রত্যেকটি নির্বাচনে ইসির জন্য ঝুঁকি থাকত ৬ ধরনের। এগুলোর মধ্যে ভোটারের পরিচয়পত্র ও আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষার ব্যবস্থা ও প্রদত্ত-গৃহিত ভোটের কাগজী রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, কন্ট্রোল ইউনিটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভোটের ফল প্রকাশ না করতে পারা এবং মেশিনের ব্যাটারি সংশ্লিষ্ট সমস্যা। তাই পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সুরক্ষিত ইভিএমকে স্বাগত জানাচ্ছে ইসি।এটিএম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুতি করা ৭০০ ইভিএম কিনলেও এগুলো পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১ নং ওর্য়াডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। পরে ২০১২ সালের ফেব্রæয়ারিতে রকিব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায়। তবে, নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যায়। আর গত ফেব্রæয়ারিতে খান মো. নুরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৪১ নং কেন্দ্রের ৬টি কক্ষে ব্যবহার করে। কিন্তু পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হয়নি। পুরনো ইভিএমের মতো ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন শেষ করে। পরবর্তীতে সুরক্ষিত ইভিএম তৈরিতে যত ধরনের সম্ভাব্য উপায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখে ইভিএমের কারিগরি টিম।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ