পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৪ দশকে খাদ্যশস্য উৎপাদনের অগ্রগতি এখন আন্তজার্তিক গবেষণার বিষয় মঙ্গার বিদায় : বেড়েছে শ্রমিক মজুরি : কমছে শস্য আমদানি
মহসিন রাজু
প্রতিবেশি ভারততো বটেই চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশের কৃষি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা , যান্ত্রিকতায় অনেক পিছিয়ে থাকা থাকা সত্বেও গত প্রায় ৪ দশকে ধান চাল গম ব ভুট্টা বা বাদাম ও সরিষা জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনে যে সাফল্য দেখিয়ে চলেছে তা’ উন্নত দেশে গুলোর গবেষনা সংস্থা গুলোর গবেষনার উপাদান যোগান দিচ্ছে । পর্যবেক্ষকদের মতে উৎপাদনের বর্তমান ধারা বহাল থাকলে কন্দাল ফসল আলুর পাশাপাশি খাদ্যশস্য রফতানীরও দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে দেশ ।
বিভিন্ন জার্নালে ইউএসডি’ সহ একাধিক সংস্থার পরিচালিত জরীপে দেখা যায়, শুরুতে ৬০ এর দশকে যখন প্রচলিত আমন ও সীমিত পরিমাণে আউশ চাষের পাশাপাশি খরা মওশুমে বোরো চাষের প্রচলন করা হল তখন গ্রামে গ্রামে এই বোরো চাষের নিরব ও সরব বিরোধিতা হয়েছে ।
৭১ ’এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর গুলোতে সদ্য স্বাধীন দেশের নতুন সরকারকে তাই মোকাবেলা করতে হয়েছে দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গা’র মত জটিল সমস্যা । পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার উপহাস করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সাথে তুলনাও করেছেন ।
কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ি সেই বাংলাদেশে আজ দাতাদের অর্থায়ন ছাড়াই বাস্তবায়ন হচ্ছে স্বপ্রে পদ্মা সেতু ছাড়াও অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প । মঙ্গার’ চিহ্নিত এলাকা বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে একই জমিতে চাষ হচ্ছে ৪ বার । ধান কাটা ও কৃষি শ্রমিকদের মজুরী বেড়েছে ঈর্ষনীয় হারে । বাংলাদেশের ধান গবেষনা ইনস্টিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষকদের বিভিন্ন উদ্ভাবনের কারণে বোরো চাষই এখন কৃষি সেক্টরে মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে । ৮০ থেকে ৯০ এর দশক পর্যন্ত বোরো মওশুমে উৎপাদিত হত উচ্চফলনশীল বিআর -১১ নামের মোটা চাল । যা ছিল গরীব ও নি¤œ মধ্যবিত্ব শ্রেনীর মানুষের ভাতের চাহিদা মেটানোর একমাত্র অবলম্বন । কিন্তু এখন বিআর -২৮, বিআর -২৯, বিআর – ৫৯ ও জিরা শাইল জাতের বোরো আবাদের কাছে হারিয়ে গেছে মোটা চালের উৎপাদনের দিনগুলো । মজুর শ্রেনীর মানুষও এখন আর শ্রমের টাকায় মোটা চালের ভাতে উদর পুর্তিতে আগ্রহ নেই বিধায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বিআর -১১ ধানের চাষ ।
পরিবেশ আন্দোলনের সাথে জাড়িত একাধিক সংস্থার কর্মকর্তরা ইনকিলাবের প্রতিবেদকের কাছে বলেন , ভারত যদি বাংলাদেশ অভিমুখি নদনদীর পানি প্রবাহ না আটকাতো বা পানির ন্যায্য হিস্যা হিস্যা চুক্তির মাধ্যমে দিত । তাহলে হাওরের বিপর্যয় দেখতে হতোনা । কমে আসতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর বাংলাদেশে বোরো ধান উৎপাদনের খরচ কমে যেত ৫০ শতাংশ । হয়তোবা বাংলাদেশের উপাদিত বোরো ধানের উন্নতমানের চাল অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতেই রফতানি হতো নিকট ভবিষ্যতে !
২০০৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মশিউর রহমান গবেষনা করে দেখান , প্রচলিত ধারার বদলে শুকনো জমিতেই বোরো ধানের চাষ করে সেচের খরচ ৬০ শতাংশ কমানো সম্ভব । তার এই উদ্ভাবন ২০০৯ সালে রাজশাহী, রংপুর, ট্ঙ্গাাইল ও নেত্রকোনায় পরীক্ষামুলক উৎপাদনের মাধ্যমে সফলতা পাওয়া গেছে । ওই কৃষি বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক জানিয়েছেন , ‘ আমন ফসল কাটার পরে ওই জমিতে যদি ৬০ থেকে ৯০ দিনের ফসল আলু বা সরিষা চাষ করা যায় , তাহলে শুকনো পদ্ধতির বোরো চাষে পানির খরচের পাশাপাশি সারের খরচও কমে যাবে অর্ধেক । বিশেষ করে ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করা হলে ৪৫ লাখ মেঃ টন সরিষা উৎপাদন হবে । এছাড়া বোরো মওশুমের চাল ছাঁটাইয়ের সময় পাওয়া বিপুল পরিমানে ‘রাইস ব্রান ’ থেকে যে পরিমান ভোজ্য তেল পাওয়া যাবে তার ফলে প্রতিবছর বিদেশ থেকে যে ১৭ লাখ মেঃ টন সয়াবীন ও পাম ওয়েল আমদানী করতে তার আর প্রয়োজন হবেনা । উল্টো ভারতেই রাইসব্রান ওয়েল ও ম্স্টাার্ড ( সরিষার তেল ) ওয়েল রফতানীর সম্ভ^াবনা তৈরী হবে । ্উল্লেখ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিশাল জনগোষ্টি তাদের ভোজনাবিলাস সরিষার তেলেই মিটিয়ে থাকে । ইদানীং একই এলাকায় রাইস ব্রান ওয়েলের প্রচলন বাড়ছে । মজার ব্যাপার বাংলাদেশের দ্রæত বিকাশমান অটোরাইস মিল এর ব্যাপক প্রসারের ফলে প্রতিবছর যে বিপুল পরমিানে রাইসব্রান পাওয়া যায় , কিছু কিছু রফতানী প্রক্রিয়ায় এবং বাকিটা চোরা পথে ভারতেই যায় বলে সং¯িøষ্ট সুত্রে জানা যায় ।
ইউএসডির সাপ্্রতিক এক গবেষনা সারপত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তরের জেলা গুলোতে বোরো ধানের পাশাপাশি গম ও ভুট্টা, আলুর চাষও বাড়ছে , যা স্থানীয় চাষীদের নিজস্ব ভাবনা চিন্তার আলোকেই সম্ভব হচ্ছে । ওই গবেষনার সারপত্রে দেখোনো হয়েছে , বোরো ধানের তুলনায় গম ও ভুট্টা চাষ অদিকতর লাভজনক । যেমন বারবার সেচের কারণে প্রতি হেক্টর জমিতে বোরা চাষে খরচ হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আর ধান পাওয়া যায় সাড়ে ৫ মেঃ টন । গম চাষে ৫৩ হাজার ৪০ টাকা , আর এতে ফসল মেলে পৌনে ৪ মেঃ টন । অন্যদিকে একই পরিমান জমিতে ভুট্টা চাষে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬শ’ ৮০ টাকা খরচ হলেও ফসল উৎপন্ন হয় ১২ মেঃ টন ।
এই পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে অবসর প্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রশিদ রাজার বক্তব্য হল , গম ও ভুট্টার আবাদের ক্ষেত্রে উত্তরের দিনাজপুর অঞ্চল খুবই সম্ভাবনাময় । ভুট্টা ও গমের আবাদ বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন ওই দুটি পণ্য আমদানীর প্রয়োজন হবেনা , তেমনি এর বাই প্রডাক্ট দিয়ে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড শিল্পে গতি আসবে । বর্ষাকালে গবাদী পশুর যে খাদ্য সংকট হয় তা’ও আর থাকবেনা । উত্তরাঞ্চলের বগুড়া ও জয়পুর হাটের উৎপাদিত আলুর একটা ক্ষুদ্র অংশ বেশ কিছুদিন ধরেই রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে । এই রফতানীর বিভিন্নমুখি বাধা দূর হলে এবং উত্তরাঞ্চলের কোন একটা এয়ারপোর্ট থেকে কার্গো ফ্লাইটের ব্যবস্থা কর গেলে আলু হয়ে উঠবে বিরাট এক সম্ভাবনা ময় রফতানী পণ্য ।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।