পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বায়নের ধারায় ঝুঁকছে নেপাল। অতীতমুখিতা থেকে বেরিয়ে আসছে। এগিয়ে চলেছে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে। অতিমাত্রায় ভারত-নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে নেপালের সরকার ও জনগণ একযোগে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বলতে গেলে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীন, বাংলাদেশ, ভ‚টানসহ নিকট প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ এবং আঞ্চলিক শক্তির সাথে সম্পর্ক জোরদার করছে কাঠমাÐু। প্রসারিত করছে বাণিজ্যিক যোগাযোগ। যার মূল লক্ষ্য নেপালের জনগণের আর্থসামাজিক ভাগ্য উন্নয়ন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-নেপাল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে। প্রতিবছরই আমদানি-রফতানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক দশকের ব্যবধানে বাণিজ্য বৃদ্ধির হার প্রায় ৭২ শতাংশ। যা বাংলাদেশের অনুক‚লে রয়েছে। উভয় দেশেই হরেক ধরনের কৃষিজ, নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে সেবাখাতের কদর বাড়ছে। পর্যটন খাত ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, কৃষি-খামারের আধুনিকায়ন ও বৈচিত্র্যকরণের ফলে নেপালিদের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে। নেপালের ব্যবসায়ীমহলও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে অধিক আগ্রহ ব্যক্ত করছেন। তাছাড়া নেপালের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত ছাড়াও চীন এবং বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছেন।
নেপাল সমুদ্রবন্দরের সুুবিধা-বঞ্চিত ভ‚মিপরিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) একটি দেশ। ভারতের সাথে নেপালের সুদীর্ঘ স্থল সীমান্ত। সড়ক পথে অনায়াসেই ভারতীয় পণ্যসামগ্রী পৌঁছে যায়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দরের তুলনায় অস্বাভাবিক চড়া মূল্য হলেও জ্বালানি তেলসহ ভারতীয় হরেক পণ্য নেপালকে কিনতে হচ্ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করার ফলে দেরিতে হলেও নেপালের যেন সম্বিৎ ফিরেছে। ভ‚মিবেষ্টিত থাকার বাধাটুকু কাটিয়ে ওঠার জন্য বিকল্প বাণিজ্যিক কৌশলকেই এখন গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। নেপালের গভীর আগ্রহ সুলভে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য আমদানি এবং একই সাথে দেশীয় (নেপালি) উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা ধরতে রফতানি বাণিজ্যের সুযোগকে কাজে লাগানো। এর জন্য নেপাল চায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে। আবার দুই দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ আশাবাদী, বন্দর সুবিধা ব্যবহার করে লাভবান হবে উভয় প্রতিবেশী দেশের জনগণ। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য নেপালে পরিবহন কিংবা নেপালের পণ্য উভয় বন্দর হয়ে রফতানি করা হলে সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে ব্যাপক। কেননা বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্যিক যোগাযোগ ভৌগোলিকভাবেই সহজতর। প্রায় তিন মাস আগে নেপালের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দর সফর করে। দেশটির আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে। নেপালে ভোক্তা চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত কৃষিজসহ বিভিন্ন খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য বন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে রফতানির সুবিধা চেয়ে সে দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুরোধ করে যান। বন্দর কর্মকর্তারা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ‚মিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) প্রতিবেশী দেশকে বাণিজ্যিক (মার্চেন্ট) সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ প্রদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কনভেনশন বা রীতি। নেপালের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার বিনিময়ে বন্দর চার্জ, ফি, মাশুল, ট্যারিফসহ দেশের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে নেপাল ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়; দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। দু’দেশের ব্যবসাবান্ধব নীতি সুফল দিচ্ছে। বাংলাদেশের উৎপাদিত শতাধিক ধরনের নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, সৌখিন, গৃহস্থালী পণ্য ও নির্মাণ সামগ্রীর বাজার চাহিদা বাস্তবিকই অনেক ব্যাপক। রফতানি বহুমুখীকরণ হলে বিরাট বাজার আসবে হাতের মুঠোয়। ইতোপূর্বে আমদানিতে নেপালের একচ্ছত্র ভারত-নির্ভরতা (যা ৬৩ শতাংশ) কাটিয়ে উঠছে। ফলে চীন ছাড়াও বাংলাদেশের বাজার প্রসারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে নেপালে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রি-এক্সপোর্টের (পুনঃরফতানি) সুযোগও আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক গত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের হিসাবে নেপালে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। বিগত ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রী নেপালে রফতানি বাবদ আয় হয় ৩৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। নেপাল থেকে আমদানি হয় ১০৭ কোটি সাত লাখ টাকার পণ্য। চলতি ২০১৭ সালে নেপালে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি আয় প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। ২০১৫ সালে নেপালে রফতানি ২০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার এবং আমদানি ১৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার। ২০১৪ সালে নেপালে রফতানি হয় ১৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পণ্য এবং আমদানি হয় ১৬১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার পণ্যসামগ্রী। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, সিরামিকস সামগ্রী, ওষুধ, আসবাবপত্র, সাবান, মেলামাইন, হোম টেক্সটাইল, আসবাবপত্র ও পোশাকজাত পণ্য নেপালে রফতানি হচ্ছে। তবে নির্মাণ সামগ্রী, প্লাস্টিকজাত পণ্য, তথ্য-প্রযুক্তির পণ্য সে দেশে রফতানির বিরাট সুযোগ রয়েছে। নেপাল থেকে আমদানি হচ্ছে ডাল, মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য জোরদারে শুল্কমুক্ত বেশি সংখ্যক পণ্যের প্রবেশাধিকার প্রয়োজন মনে নিশ্চিত করার ব্যাপারে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ-নেপালের বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ গতকাল (বুধবার) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, নেপাল বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর সুবিধা বিশেষ করে মংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায়। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনীহা নেই। এতে দু’দেশই লাভবান হবে। তবে এক্ষেত্রে ভারত বিভিন্ন উপায়ে গড়িমসি ও জটিলতা সৃষ্টি করে। যেমনÑ নেপাল কিংবা বাংলাদেশের কোনো কৃষিজ পচনশীল পণ্য রফতানিতে যখন ভারতকে আনুষঙ্গিক ডকুমেন্ট দাখিল করা হয় তার অনুমোদন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতাতেই আটকে যায়। এতে করে দু’দেশের (বাংলাদেশ-নেপাল) আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী বিনষ্ট হয়। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভ‚টানের পণ্যসামগ্রী পরিবহনের জন্য অনেক আগেই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহারের লক্ষ্যে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। অথচ উদ্বোধনের পরদিনই আর পণ্য চলাচল করতে পারেনি। ড. আযাদ বলেন, নেপালের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রসারের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ভারতের অসহযোগিতার কারণে দু’দেশের পণ্যসামগ্রী চলাচল (সড়কপথে একটি ছোট করিডোর) চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারছে না। ভবিষ্যতে সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা তা এক কঠিন প্রশ্ন।
বন্দর সুবিধাহীন ভ‚-পরিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) নেপাল ভারতের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে সুদীর্ঘ ঘুরপথে আমদানি পণ্য নিয়ে যেতো। কিন্তু চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সড়কপথে মাত্র সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই পণ্য পৌঁছে যায়। এর জন্য বাংলাদেশ থেকে নেপালের মাঝখান বরাবর ভারতের শিলিগুড়ির (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত) কাছে ভৌগোলিক অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে ‘চিকেন নেক’ রয়েছে সেই করিডোরটি মাত্র ২২ কিলোমিটার। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ফুলবাড়ী চুক্তিটি হওয়ার ফলে ভারতের একটি ছোট ট্রানজিট রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশ-নেপাল পণ্যসামগ্রী পরিবহনের তথা বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার লাভ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।