বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গাজীপুরের টঙ্গীতে কমিউটার ট্রেন দুর্ঘটনায় ট্রেনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার ৫ ঘণ্টা পর লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। তিনি দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেন। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় ভুল সিগনালে। ট্রেনটি লুপ লাইন অতিক্রম করার আগেই রেললাইন পরিবর্তন করায় পেছনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকেরই ধারনা। এজন্য টঙ্গী স্টেশন মাস্টারকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যে তাদের মনে হয়েছে, সিগন্যালের ভুলের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটির সদস্যরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।
জামালপুর থেকে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি গত রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় এলে ট্রেনের পেছনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এসময় ওই ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রীরা দুর্ঘটনায় পড়লে সাত জন নিহত ও অন্তত ২৬ যাত্রী আহত হন। ওই দুর্ঘটনার পর লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রিলিফ ট্রেন এসে আপ লাই (ঢাকা থেকে যাওয়া রেললাইন) ক্লিয়ার করলে সেই পথে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই ট্রেনের কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, জামালপুর থেকে চেড়ে আসা ঢাকামুখি কমিউটার ট্রেনটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। নিয়ম উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদেও বহু সংখ্যক যাত্রী ছিল। টঙ্গী জংশন ছাড়ার পরপরই নতুনবাজার এলাকায় এলে ট্রেনটির পেছনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে গতির কারণে ওই অবস্থায় ট্রেনটি কয়েকশ গজ এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে দুটি বগি কাত হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় নিহত বাদলের ভাগ্নে আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা (বাদলসহ) একই ট্রেনে ঢাকা আসছিলাম। টঙ্গীর কাছে ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হলে অনেকেই ট্রেনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে। মামা (বাদল) লাফ দেন। লাফিয়ে রেললাইনের উপরে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে বাদল মারা যায়। ট্রেনের আরেক যাত্রী মারুফ বলেন, ট্রেনের পেছনের বগিগুলো লাইনচ্যুত হলে বিকট শব্দ হয়। উপর থেকে পেছনের দিকে তাকিয়ে ছাদের যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকে। এসময় আতঙ্কে ছাদ থেকে একাধারে লাফিয়ে পড়ে যাত্রীরা। অনেকে চলন্ত ট্রেন থেকে একেবারে রেললাইনের উপর পড়ে। তাদের কেউ কেউ ট্রেনে কাটা পড়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. ইয়াসিন জানান, ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ার পর ছাদে থাকা যাত্রীরা লাফিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয় এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আতিক জানান, লাইন পরিবর্তনের সময় ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনের পেছন থেকে পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। তখন আতঙ্কিত হয়ে ছাদ থেকে অনেকে লাফিয়ে পড়েন। তিনি জানান, আহত ১০ থেকে ১৫ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রেলওয়ের কর্মচারীদের সাথে কথা জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে টঙ্গী রেল স্টেশনের অচল রেললাইন দিয়ে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসকে চালানোর সময় ওই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দ্রুতযানের ৬টি কোচ নষ্ট হয়ে যায়। দুই মাসেও সেগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। পুরাতন সাদা কোচ দিয়ে দ্রুতযান চালানো হচ্ছে। স্টেশন মাস্টারের ভুলের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।