পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার আনা প্রস্তাব খারিজ ষ চাপ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত : জাতিসংঘে মার্কিন দূত ষ সবাই সংযম প্রদর্শন করুন : জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধ ষ বিশ্বনেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ইনকিলাব ডেস্ক : নিরীহ নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সিরিয়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যসমূহে হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের চালানো ৭০ মিনিট স্থায়ী যৌথ হামলায় সিরিয়ার স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ১০৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলেও রাশিয়ার দাবি, ৭১টি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া সেসব স্থাপনার ছবি প্রকাশ করতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে সিরিয়ার সন্দেহভাজন তিনটি রাসায়নিক অস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা শুরু করে পশ্চিমা দেশগুলো। ধোঁয়া উড়তে থাকা ধ্বংসস্তুপে সিরিয়ার আসাদ সরকার সমর্থিত বাহিনীর সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে প্রকাশিত ছবিগুলোতে।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে একটি রাসায়নিক অস্ত্র গবেষণাগার ও হোমস শহরের কাছের একটি রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ স্থাপনা ও একটি রাসায়নিক হামলায় ব্যবহৃত কমান্ড সেন্টারে হামলা চালানো হয় বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। ওই হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে গিয়ে মার্কিন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেনেথ ম্যাককেনজি বলেছেন, কমান্ড সেন্টারটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আর সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের কর্মসূচি অন্তত তিন বছর পিছিয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হামলায় রাসায়নিক অস্ত্রের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন সিরিয়ার সাবেক এক কর্মকর্তা। আবদুস সালাম আব্দুর রাজাক রাসায়নিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য এই কর্মকর্তা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার আগে সিরিয়ায় আনুমানিক ৫০টি গুদাম ছিল। এসব গুদামে রাসায়নিক অস্ত্র মজুত রাখা হতো। তিনি বিশ্বাস করেন, এসব গুদাম এখনও সেখানেই আছে নয়তো সামান্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট-ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টোলেনবার্গ বলেছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের হামলায় ন্যাটোভুক্ত সব দেশ সমর্থন দিয়েছে।
তিনি বলেন, সিরিয়ার সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র সক্ষমতা কমানো ও দৌমার মতো বিভিন্ন এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আবার কোনও রাসায়নিক হামলা বন্ধ করার লক্ষ্যে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার যদি আবারও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে হামলা চালানোর জন্য একেবারে প্রস্তুত রয়েছে। গত শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে একথা জানান তিনি। নিকি হ্যালি বলেন, আমরা নিশ্চিত যে, আমরা সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি খর্ব করতে পেরেছি। যদি সিরিয়ার শাসক আমাদের সংকল্প পরীক্ষা করতে চাওয়ার মতো বোকা হয় তাহলে আমরা এই চাপ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত। শনিবারের হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্ট্যাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড বলেছেন, যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গি বিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র তিনটি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে ধ্বংস করে দিয়েছে, যেগুলো সরাসরি সিরিয়া সরকারের ‘রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের এসব যুদ্ধজাহাজ লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগরের উত্তরাংশ ও ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশে মোতায়েন করা হয়েছিল। যেসব স্থাপনায় আঘাত হানা হয় সেগুলো হচ্ছে, দামেস্কের বারজেহ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, হোমসের পশ্চিমে হিম শিনশর রাসায়নিক অস্ত্র মজুদাগার এবং হিম শিনশর রাসায়নিক অস্ত্র বাঙ্কার।
সিরিয়ায় রাতভর সামরিক হামলা ‘নিখুঁতভাবে চালানো হয়েছে’ বলে প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে “মিশন সম্পন্ন হয়েছে।”
এক টুইটার পোস্টে এ অভিযানের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘গতরাতে নিখুঁতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের বিচক্ষণতা এবং সু-সামরিক শক্তির জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারত না। মিশন সম্পন্ন হয়েছে’।
গত সপ্তাহে সিরিয়ার দৌমা শহরে প্রাণঘাতী রাসায়নিক অস্ত্র হামলার জবাবে পশ্চিমা দেশগুলো এ হামলা শুরু করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন পশ্চিমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রাশিয়ার প্রধান মিত্র সিরিয়া রুশ বাহিনীর ওপর কোনো হামলা হলে পাল্টা সামরিক হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে সকালের দিকে কয়েকটি টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের সামরিক শক্তির প্রশংসা করার পাশাপাশি নিজ দেশের সামরিক বাহিনী নিয়ে গর্ব করেন। শনিবার পেণ্টাগনের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, বিমান হামলা সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচিকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজ থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র বর্বরতা এবং নির্মমতার বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের শক্তি কাজে লাগিয়েছে’।
‘আজ আমাদের এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার শক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ানো’।
সিরিয়ায় বিমান হামলা সফল হয়েছে : মে
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র স্থাপনায় ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের চালানো বিমান হামলা সফল হয়েছে বলে যুক্তরাজ্য নিশ্চিত। এ পদক্ষেপ নেওয়াটা ‘সঠিক এবং বৈধ’ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, “পশ্চিমা এ হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।”
তবে ডাউনিং স্ট্রিটে এক বক্তব্যে টেরিজা মে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট এবং টার্গেট করে বিমান হামলায় সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা কমানো গেছে। তিনি বলেন, “সংঘবদ্ধ এ পদক্ষেপ এ স্পষ্ট বার্তাই দিচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে না এবং রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার সহ্য করবে না।” ইংল্যান্ডের সলসবেরিতে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার যোগসূত্র টেনে মে বলেন, “আমরা সিরিয়া, যুক্তরাজ্য এবং অন্য কোথাও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হতে দিতে পারি না।”
সিরিয়ায় দ্রæত এবং কার্যকর অভিযান চালানোর কথা বিবেচনা করে ব্রিটিশ সরকার পার্লামেন্টের অনুমতি ছাড়াই সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন একথা বলেছেন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত একটি সিরীয় শহরে রাসায়নিক হামলার জবাব দিতে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সিরিয়ার কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো পূর্ব গৌতার দৌমায় রাসায়নিক হামলার জন্য সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্র রাশিয়াকে দায়ী করে। পার্লামেন্টের অনুমতি না নিয়ে সিরিয়ায় হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্পষ্ট আপত্তি জানান যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরমি করবিন। তিনি বলেন, সিরিয়া অভিযানে যোগ দেওয়ার আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে আলোচনা ও ভোটাভুটি প্রয়োজন ছিল। ‘প্রধানমন্ত্রীর টেরিজা মে’র উচিত ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুসরণ না করে পার্লামেন্টের অনুমতি নেওয়া’।
সিরিয়ায় অভিযানের আগে কেন পার্লামেন্টের অনুমতি নেওয়া হয়নি তার ব্যাখ্যায় সিএনএন টেলিভিশনে জনসন বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই ব্রিটিশ সেনাদের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই অভিযান দ্রæত ও কার্যকর করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হত। তাছাড়া, এরকম পরিস্থিতিতে এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নজিরও অনেক আছে’।
জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব এনে ব্যর্থ রাশিয়া
সিরিয়ার দৌমায় সরকারি বাহিনীর সন্দেহভাজন রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একযোগে চালানো বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা রাশিয়ার প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেছে। গত শনিবার মস্কোর আনা এ নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে বলিভিয়া ও চীন ছাড়া আর কেউ ভোট দেয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। পেরু, কাজাখস্তান, ইথিওপিয়া ও একোয়াটোরিয়াল গিনি ভোটদানে বিরত ছিল; অপরদিকে তিন স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ আট সদস্য বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। দৌমায় সিরীয় বাহিনীর বিষাক্ত গ্যাস হামলার অভিযোগ ওঠার পর গত এক সপ্তাহে এ নিয়ে পাঁচবার নিরাপত্তা পরিষদ একত্রিত হল। সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি লক্ষ্য করে ইঙ্গ-মার্কিন-ফরাসী বাহিনীর ১০৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এদিন বৈঠক ডেকেছিল।
‘যে তদন্তের আহŸান জানিয়েছিলেন, তার ফলের জন্য কেন আপনারা অপেক্ষা করলেন না,’ প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পর পরিষদের স্থায়ী তিন সদস্যের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেন জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসেলি নেবেনজিয়া। সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ‘আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন’ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
‘উত্তেজিত মাথাগুলো ঠাÐা হয়ে আসবে বলে আশাবাদী আমি, সেটাই হওয়া উচিত,’ সাংবাদিকদের বলেন নেবেনজিয়া। দৌমায় কোনো বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে অর্গানাইজেশন ফর প্রোহিবিশন অব কেমিকাল উইপনের (ওপিসিডাবিøও) তদন্ত কর্মকর্তারা সিরিয়ায় পৌঁছেছেন; গত শনিবার থেকেই দলটির কাজ শুরু করার কথা।
পশ্চিমা দেশ ও বিভিন্ন সংস্থা বিদ্রোহীদের ওপর রাসায়নিক হামলার জন্য আসাদবাহিনীকে দায়ী করলেও সিরিয়া ও তাদের মিত্র রাশিয়া বলছে, দৌমায় বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শনিবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের সামরিক হামলাকে ‘বৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর পক্ষে অবস্থান নেয়।
“সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচিকে পঙ্গু বানিয়ে দেয়া গেছে বলে আত্মবিশ্বাসী আমরা। সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা যদি আমাদের ইচ্ছার পরীক্ষা নেওয়ার মত বোকা হয়, তাহলে এই চাপ অব্যাহত রাখতেও প্রস্তুত আমরা,” বলেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। সিরিয়া নতুন করে বিষাক্ত গ্যাস হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ফের হামলায় ‘প্রস্তুত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচির লাগাম টানতে, সন্ত্রাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে, সিরিয়াজুড়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিতে ইঙ্গ-মার্কিন-ফরাসী জোট নিরাপত্তা পরিষদে নতুন একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে বলে শনিবার জাতিসংঘে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্কো দেলাত্রে জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি সিরিয়ার জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহŸান জানান।
স্থায়ী পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের ভিটো ছাড়াই কোনো প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের অন্তত নয়টি দেশের সমর্থন লাগে। এর আগে মঙ্গলবারও সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ব্যাপারে তিনটি প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি রাশিয়া ভিটোতে অকার্যকর হয়, প্রয়োজনীয় ৯ ভোট পেতে ব্যর্থ হয় রাশিয়ার করা বাকি দুটি খসড়া।
বিশ্বনেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে বিশ্বনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ মার্কিন মিত্রদের এ হামলাকে প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ বলেছে। আবার কেউ কেউ মনে করছে, এটা ভবিষ্যতে ওই অঞ্চলে জঙ্গিদের পুনঃবিস্তার ঘটাবে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দৌমায় রাসায়নিক হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত এবং পাঁচশতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এজন্য সিরিয়া সরকার ও তাদের মিত্র রাশিয়াকে দায়ী করে। যদিও উভয় দেশই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ নিয়ে হুঁশিয়ারি ও পাল্টা হুঁশিয়ারির মধ্যেই শনিবার প্রথম প্রহরে সিরিয়ায় যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গিবিমান থেকে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মার্কিন মিত্ররা।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল এ হামলায় সমর্থন দিয়ে বলেন, সিরিয়া সরকারকে ভবিষ্যতে আর কখনো রাসায়নিক হামলা না করার বিষয়ে সতর্ক করতে এ হামলা ‘প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ’ কাজ হয়েছে।
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে আমাদের মিত্র আমেরিকা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে আমরা তার সমর্থন করছি।”
যদিও এ সপ্তাহেই মেরকেল তার দেশ সিরিয়ায় আর কোনো সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘সঠিক জবাব’ ছিল বলে মনে করে তুরস্ক। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সিরিয়া সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে সঠিক জবাব বলে মনে করছি।”
মার্কিন মিত্রদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদ ইয়োঙ্কার সিরিয়া সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের উপর সিরিয়া সরকারের রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এটাই প্রথম নয়। তবে অবশ্যই এটা শেষ হওয়া উচিত’।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন সিরিয়ায় হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সিরিয়ায় হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করে চীন সমস্যা সমাধানে আলোচনার আহŸান জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, চীন বরাবরই যে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তি প্রয়োগের বিপক্ষে।
সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘অপরাধ’ বলে বর্ণনা করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, এর মাধ্যমে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আজকের হামলা অপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়। আমি পরিষ্কারভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে অপরাধী বলছি। এই হামলায় কোনো লাভ হবে না। যেমন অতীতে ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে এ ধরনের অপরাধ করে তারা কোনো লাভ করতে পারেনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ জর্ডান বলেছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়ার চলমান সংকটের অবসান সম্ভব। দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদমাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বর্তমান সংঘাত ভবিষ্যতে শুধুমাত্র আরও সংঘাতই ডেকে আনবে। সিরিয়ার সাধারণ মানুষকে যার শিকার হতে হবে।”
সিরিয়ায় মার্কিন মিত্রদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুধুমাত্র জঙ্গিদের ওই অঞ্চলে আরও বিস্তারলাভের সুযোগ করে দেবে বলে মনে করে ইরাক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতি এ হামলাকে ‘একটি খুবই বিপদজনক অগ্রগতি’ বলে বর্ণনা করেছে।
“এ ধরনের অভিযানের পরিণতি ভয়ঙ্কর। এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে এবং ইরাকি ও সিরীয় বাহিনী যে জঙ্গিদের কোণঠাসা করে ফেলেছে তাদের আবারও বিস্তারলাভের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।”
ইরাক আরব নেতাদের এ হামলার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে সম্মেলন আয়োজন করার আহŸান জানিয়েছে। সূত্র : এপি, বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।