Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই বাংলার মিলন মেলা

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 মো: আবু তাহের আনসারী ও আশরাফুল আলম : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলাভাষীদের ব্যতিক্রমী এক মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের ৪ কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়। বাংলাদেশের পঞ্চগচ জেলার তেতুলিয়া উপজেলার ভুতিপুকুর, মাগুরমারি, শুকানি ও সদর উপজেলার অমরখানা সীমান্ত, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কোচল ও হরিপুর চাপসা সীমান্ত, দিনাজপুর, রংপুর এবং ভারতে কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালদা, কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইসাইকেল, অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, মিনিবাস যোগে মেলা স্থলে হাজির হয়। এরপর চলে প্রতিক্ষার প্রহর। কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ পৌছে যায় দেশকালের সীমানা ডিঙ্গেয়ে মেলাস্থলে, কথা হয় ভারত বাংলাদেশের আতœীয় স্বজনদের সাথে। দীর্ঘদিন পর স্বজনদের কাছে পেয়ে চোখে আনন্দ যেন বাঁধা মানছিল না। অনেক দিন দেখা না হলেও আজ রক্তের টান ঠিকই তাদের হাজির করেছে দু-দেশের সীমান্তে কাঁটাতারের পারে। 

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরই আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয় পাশাপাশি দুটি দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক মানুষের। ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করতে পাসপোর্ট ও ভিসার অভাবে যারা যাতায়াত করতে পারে না, তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। তারা সারা বছর অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবে। ভারতীয় অধিবাসীরা কাঁটাতারের পাশে এলে সেখানে বাংলাদেশেরও লাখো মানুষ নারী পুরুষ সমবেত হয়। জামাই বেটি ভারতীয় সীমান্তে ও শাশুড়ী বাংলাদেশ সীমান্তে নাতী নাতনী সবাই সবার সাথে আবেগ কান্নাজড়িত কন্ঠে কথা বলেছে। জামাই ও মেয়ের দেখা একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পারেনি। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্ত ছুইতে পারেনি। জড়িয়ে একটু চিৎকার করে কান্না করি তবে হয়তো দীর্ঘদিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে একটু রেহাই পেতাম বলছিলেন ভারতের মাকড় হাটে থাকা ছোট বোন সেফালি। ছোটবোন সেফালিকে দেখতে আসা রাণীশংকৈল থেকে শামীম রেজা।
প্রতিবছর নববর্ষের দ্বিতীয়দিন বিভিন্ন সীমান্তে সেই মানুষদের দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয়। বিজিবি ও বিএসএফের সৌজন্যতায় ও কঠোর নিরাপত্তায় উভয় দেশের স্বজনরা দীর্ঘদিন পর নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়ে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। আনন্দের মাঝে অশ্রæতে ভরে যায় অনেকের নয়ন। পরস্পর পরস্পরের জন্য উপহার সামগ্রী কাঁটাতারের উপর দিয়ে বিনিময় করেন। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে সেখানে অন্য রকম এক পরিবেশ তৈরি হয়। প্রায় পাঁচঘণ্টা স্থায়ী এ মিলন মেলায় আনন্দ মুখর পরিবেশে হওয়ায় উভয় পাশের বাংলাভাষীরা আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। এদিকে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখেন পঞ্চগড় ১৮ বর্ডার গার্ড বিজিবির অধিনায়ক ও নীলফামারী ৫৬ বর্ডার গার্ড বিজিবির অধিনায়ক।
নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা জানান, র্দীঘদিন পর স্বজনদের কাছে দেখতে পাবার সুযোগই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। সদর উপজেলার রমজানপাড়ার শর্মিলা ঠাকুর, অমরখানা এলাকার প্রিন্স, দেবীগঞ্জ উপজেলার জতিস চন্দ্র জানান, প্রতিবছর সীমান্তে এ ধরনের দু‘দেশের মানুষের মিলন মেলা শুরু করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আল-হাকিম মোহাম্মদ নওশাদ জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উভয় দেশের বর্ডার গার্ডদের সৌজন্যে বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলাভাষীদের দেখা সাক্ষাত করার এমন সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এদিকে অমরখানা সীমান্তের নাওঘাটায় সীমান্তহাট স্থাপনের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোববার সকালে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের অমরখানা এলাকায় অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদ এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে স্বতঃষ্ফুর্তভাবে এলাবাসীসহ মিলন মেলায় আসা লোকজন অংশ নেয়। এসময় অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুসহ স্থানীয়রা বক্তব্য রাখেন।
পাথর কালীর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নগেন কুমার পাল জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারেও দু-বাংলার মিলন মেলা পালিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের পর উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাক-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল । এ কারণে দেশ বিভক্তির হওয়ার পর আতœীয় স্বজনেরা দু-দেশে বিভক্ত হয়ে পরে। তাই সারা বছর কেউ কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারে না। তারা অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য। থানা অফিসার ইনচার্জ আঃ মান্নান বলেন, শৃংখলা রক্ষার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনী সেখানে দায়িত্ব পালন করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেলা

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ