Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্যারিস ও লন্ডনে ইসলামভীতির রকমফের ও তার কারণ

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইয়াহু : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে প্যারিসে চার্লি হেবডো হামলা ও লন্ডন ব্রিজ হামলার প্রেক্ষিতে ফ্রান্স ও ব্রিটেনে ইসলামভীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানুয়ারি বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে যৌথ ব্যবস্থা গ্রহণে ঐকমত্যে উপনীত হন।
বহুক্ষেত্রেই ফ্রান্স ও ব্রিটেন একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তারা উভয়েই পশ্চিম ইউরোপে এবং তাদের রয়েছে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা। ধারণা যে ফ্রান্সে ৫৭ লাখ এবং ব্রিটেনে ২৭ লাখের সামান্য কিছু বেশি মুসলমান বাস করে। তবে আমাদের গবেষণা বলে যে দু’দেশে ইসলাম ভীতি দু’ভাবে ক্রিয়াশীল।
ইসলামোফোবিয়া জটিলতা বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে আমাদের মুসলিম-বিরোধী কর্মকান্ড বিষয়ক গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের প্যারিস ও লন্ডনসহ কোথায় ইসলামোফোবিয়া বিরাজ করছে। ফ্রান্সের এসোসিয়েশনস কালেক্টিভ কনটার ইসলামোফোবি এন ফ্রান্স (সিসিআইএফ) এবং যুক্তরাজ্যের টেল মামা ইসলামোফোবিয়ার সুনির্দিষ্ট বিরণ প্রকাশ করেছে।
উভয়দেশেই অধিকাংশ মুসলিম বিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হয় দু’ রাজধানীতে। তবে ইসলামোফোবিয়া কার্যকলাপ একই রকম ঘটে না। প্যারিসে মুসলিম বিরোধী কর্মকান্ড সংঘটিত হয় প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে এবং শহর কেন্দ্রের বাইরে যতদূর যাওয়া যাবে, তার মাত্রা স্তিমিত দেখা যাবে। শহর কেন্দ্র ও শহরের উপকন্ঠে কার্যকলাপের মাত্রা এক নয়।
লন্ডনে বিষয়টি ভিন্ন। সেখানে লন্ডনের ভিতর ও বাইরে অনুরূপ সংখ্যক ইসলামোফোবিক ঘটনা সংঘটিত হয়। বহু মুসলিম-বিরোধী ঘটনা ঘটে বাসে ও ট্রেনে অথবা পরিবহন কেন্দ্রগুলোতে।
লন্ডনে আমাদের গবেষণায় অ্ংশগ্রহণকারিণী লতিফা বলেনঃ বােেসর দিকে যেতে এক আমার গায়ের উপর ঝুঁকে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আমাকে আইএস সন্ত্রাসী বলে কিছু অপমানসূচক ইসলামোফোবিক মন্তব্য করলেন। আসলে তিনি আমাকে স্পর্শ করছিলেন।
ফ্রান্সে অধিকাংশ ইসলামোফোবিক কার্যকলাপ সংঘটিত হয় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে Ñযেমন টাউন হল, স্কুল বা হাসপাতালে। প্যারিসে অধিকাংশ মুসলিম বিরোধী ঘটনাে ভিত্তি ব্যক্তিগত বৈষম্যের ভিত্তিতে। ফ্রান্সে কেনজা নামের এক ব্যক্তির আমরা সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম । তিনি বলেন, আমার এক বন্ধু স্কুলে গেলে স্কুলের পরিচালক সবার সামনে তার বোরকা খুলে ফেলেন। আমার মাথায় সব সময় এটা ঘোরে যে লজ্জিত অবস্থায় তিনি সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন।
বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ বৈষম্য ঘটার কারণ ২০০৪ সালের একটি ফরাসি আইন যাতে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সরকারী অর্থে পরিচালিত স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন সম্পর্কে জানেন বা জানেন না এমন কিছু আমলা মনে করেন যে শুধু স্কুল নয়, সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারিণীদের উপর এ আইন কার্যকর করাপর অধিকার তাদের আছে। ২০১০ সাল থেকে ফ্রান্সে নিকাব বা মুখাবরণী পরা নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরিণতিতে ফ্রান্সে ইসলামোফোবিয়া প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত হয়।
ঘটনার শিকার ও হামলাকারী
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে বোরকা পরিহিতারাই হামলার প্রধান শিকার এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রী। যুক্তরাজ্যে দক্ষিণ এশীয়রা; ফ্রান্সে উত্তর আফ্রিকানরা। বিষয়টি অভিবাসন ইতিহাস ও ঔপনিবেশিক পটভূমির সাথে সম্পর্কিত।
যুক্তরাজ্যে মুসলিম বিরোধী হামলাকারীরা হচ্ছে শে^তাঙ্গ পুরুষ। ফ্রান্সে পুরুষ বা মহিলা দুই-ই হতে পারে। কিছু ফরাসি মহিলা, মূলত ফরাসি নারীবাদী, বোরকা পরার বিরোধী। তারা মনে করে, হিজাব পরিহিতা নারী নারীবাদী হতে পারে না। যুক্তরাজ্যে ইসলামোফোবিয়া জাতিগোষ্ঠিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীদের উপর পুরুষদের প্রাধান্যের সাথে সম্পৃক্ত।
রাষ্ট্রের ভূমিকা
আমাদের গবেষণায় ইসলামোফোবিয়া কোথায় ও কিভাবে লালিত হয় ও তাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা বিচেনা করা হয়েছে। ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মডেলে সকল নাগরিককে ফরাসি হিসেবে গণ্য এবং জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য করা হয় না। এটা আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে যে কেন ফ্রান্সে এত অল্পসংখ্যক ইসলামোফোবিক ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাজ্যে বহু সংস্কৃতিবাদ ও জাতিগোষ্ঠিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বৈচিত্র্য উন্নয়নের প্রবণতা রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত কেউ কেউ এ বহু সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেন এবং তারা যাদের যুক্তরাজ্যের বলে মনে করেন না তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন। এ সব ঘটনা মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনীতিতে নিয়োজিত হওয়া এবং সমাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা।
ফরাসি ও ব্রিটিশ উভয় দৃষ্টিভঙ্গি এটাই প্রদর্শন করে যে কোথায় মুসলিম বিরোধী কার্যকলাপ সংঘটিত হবে ও কারা তাতে সম্পৃক্ত হবে তাতে রাষ্ট্র ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রকে ইসলামোফোবিয়ার ৫টি স্তম্ভের একটি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং দু’দেশের সরকারকেই প্রাত্যহিক ইসলামোফে্িবক অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে তাদের গৃহীত নীতির ব্যাপারে অধিক সমালোচনামূলক ও সচেতন হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ