বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রনালয় কর্তৃক সকল স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা সমূহকে বাধ্যতামূলকভাবে মঙ্গল শোভা যাত্রা বের করার নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হেফাজত ঢাকা মহানগর শাখা সহ বিভিন্ন ইসলামিক দল ও ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে তারা বলেন এ নির্দেশ সম্পূর্ণ কোরান সুন্নাহ এবং সংবিধান বিরোধী। তাই এই নির্দেশ মুসলমানরা মানতে পারে না। কোন সরকারীকর্মকার্তা মঙ্গল শোভা যাত্রা বের করতে স্কুল কলেজ বা মাদ্রাসার ছাত্রদের এবং ছাত্রশিক্ষকদের বাধ্য করার উদ্যোগ নিলে তার বা সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোরআন সুন্নাহ এবং সংবিধান অনুযায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন শুধু তাই নয় মঙ্গলশোভাযাত্রা বের করার বিষয়ে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী সংশ্লিষ্ট হলে তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে মুসলমানদের ধর্মীয় আক্বিদা ও ঈমান রক্ষার স্বার্থে। গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের শীষ নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দ এ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন
হেফাজত ঢাকা মহানগর
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন বর্ষবরণের উৎসব কুরআন, সুন্নাহ ও সংবিধান বিরোধী। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে ১ লা বৈশাখে যে উৎসব করা হয় তা মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়। এসব হচ্ছে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি এগুলোর সাথে শিরকী মতাদর্শ মিশ্রিত। সুতরাং এ জাতীয় উৎসবে কোন মুসলমান অংশ নিবে না। তিনি বলেন স্কুল- কলেজের সাথে মাদরাসায়ও বর্ষবরণের উৎসব পালন করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কোনভাবেই মানা হবে না এবং কোন মুসলমান ছাত্র-শিক্ষক এ নির্দেশ মানতে পারে না।
গতকাল বাদ জুমা বাইতুল মোকাররম উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা কাসেমী এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন আমেরিকাই বিশ্বব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করে চলছে। যারা আফগানিস্তানে হাফেজ ছাত্রদের নিমর্মভাবে বোমা হামলা করে হত্যা করে তাদেরকে দিয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি পালনে বাধ্য করা ইসলাম বিরোধী এবং সংবিধানের স্বাধীনতা পালনের ধর্মীয় অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ। যা সংবিধান বিরোধী। সমাবেশে অন্যানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় নেতা ইসলামাবাদী, মহানগর নেতা মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মুজীবুর রহমান হামিদী ও মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন প্রমূখ। সমাবেশে বক্তাগণ শিক্ষামন্ত্রীর ও নির্দেশদাতা সকল কর্মকর্তার বহিষ্কার দাবী করেন।
ওলামা লীগ
আওয়ামী ওলামা লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন ‘পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তির পালনে মুসলমানিত্ব যায় না।’ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই বক্তব্য প্রত্যাহার না করা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত। বক্তারা বলেন, ইনু বামপন্থী। এদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করে সমাজতন্ত্র কায়েমই তার মূল উদ্দেশ্য। ইনু তো জানে না যে, ইসলামে কোন ধরনের নববর্ষ পালন জায়েয নয়। নববর্ষ পালনের উৎসব বিধর্মীদের থেকে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর পবিত্র মদীনা শরীফ গিয়ে ঐ এলাকাবাসীর দুটি উৎসব বন্ধ করেছিলেন। একটি হচ্ছে, বছরের প্রথম দিন উদযাপন বা নওরোজ; অন্যটির নাম ছিলো ‘মিহিরজান’।
এ উৎসব দুটির বিপরীতে চালু হয় মুসলমানদের দুই ঈদ। (তাফসিরসমূহ) মূলতঃ নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করার রীতি ইসলামে নেই, এটা পার্সী মজুসীদের (অগ্নিউপাসক) অুনকরণ। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে: “যে ব্যক্তি কোন স¤প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” তাই যে কোন নওরোজ সেটা থার্টি ফাস্ট নাইট হোক, পহেলা নববর্ষ হোক কিংবা পহেলা মুহাররম হোক, বিজাতীয় রীতি হিসেবে প্রতেকটি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম ফখরুদ্দীন উসমান বিন আলী আয যাইলায়ী বলেন, “নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর”। (গ্রন্থ তাবইনুল হাকায়েক : ৬/২২৮) ইমাম হাফস কবীর রহমতুল্লাহি বলেন, “নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে, তবে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে” তাই পহেলা বৈশাখ পালন করলে মুসলমানিত্ব যায় না বামপন্থী ইনুর এ বক্তব্য মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। অপরদিকে ইনু বলেছে, চৈত্র সংক্রান্তি পালন করলেও মুসলমানিত্ব যায়না। তাহলে মুসলমানদের পূজা করিয়ে হিন্দু বানাতে চায়। কারণ পহেলা বৈশাখে মুসলমানদের কোন উৎসব নেই বরং হিন্দু স¤প্রদায়ের বিভিন্ন ধরনের পূজা এবং উৎসব রয়েছে। এগুলো হলো-১) হিন্দুদের ঘটপূজা, ২) হিন্দুদের গণেশ পূজা, ৩) হিন্দুদের সিদ্ধেশ্বরী পূজা, ৫) হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা, ৬) মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব, ৭) চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি), ৮) হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা, ৯) মজুসি তথা অগ্নি পূজকদের নওরোজ, ১০) হিন্দুদের বউমেলা, ১১) হিন্দুদের মঙ্গলযাত্রা, ১২) হিন্দুদের সূর্যপূজাসহ বিধর্মীদের বিভিন্ন পালনীয় দিবস রয়েছে। (উইকিপিডিয়া) বক্তারা আরো বলেন, মুসলিম জনগণকে ইসলামহীন করার লক্ষ্যে এ অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। যেমন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে, উলুধ্বনী দিয়ে, শাখা বাজিয়ে, মঙ্গল কলস সাজিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এছাড়া যেসব পশু-পাখী নিয়ে অমঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, তাও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। কেননা সংখ্যালঘু একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস স্বরসতীর বাহন, সিংহ দূর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মহানগর
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক বিবৃতিতে বলেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রা বানানো সুপরিকল্পিত। পেঁচা, কুমির, সাপ ইত্যাদি প্রাণির প্রতিকৃতি বুকে ধারণ করে নারি-পুরুষ এই ভাবে উৎসব করা সম্পূর্ণরূপে অনৈসলামিক কর্মকান্ড। এহেন অনৈসলামিক কার্যকলাপকে উৎসবের নামে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। মাওলানা আফেন্দী আরো বলেন যে দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, যে দেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম রয়েছে সে দেশে শিরকী মতাদর্শ সম্বলিত কোন উৎসব চলতে পারে না এবং এ জাতীয় উৎসবে কোন মুসলমান অংশ নিতেও পারে না। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল সভাযাত্রা পালনের নির্দেশ মুসলমান মানে না। মাদরাসায়ও এ জাতীয় উৎসব পালন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালায় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারীর তীব্র প্রতিবাদ করে তিনি বলেন শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপসার দাবি করেন।
খেলাফত মজলিস
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে সার্কুলারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনে বাধ্যতামূলক যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানটি বিজাতীয় সংস্কৃতির অংশ। আবহমানকালজুড়ে পয়লা বৈশাখে এ ধরনের অনুষ্ঠান ছিল না। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে বাংলাদেশে এর প্রচলন ঘটানো হয়। বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা, মুখে উল্কি আঁকা এবং নারী পুরুষের অবাধ বিচরণসহ বিভিন্ন অশ্লীল ও অনৈসলামিক কর্মকাÐে ভরপুর থাকে প্রচলিত মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে কোন মুসলিম শরিক থাকতে পারে না। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের এসব অনুষ্ঠানে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের নির্দেশনা সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়ার শামিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে তা কখনো মেনে নেয়া যায় না। মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঈমান বিধ্বংসী রীতি পালনে রাষ্ট্র কখনো বাধ্য করতে পারে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্নমহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন কুফর, শিরক, বিদআত আর সকলপ্রকার অপসংস্কৃতিকে উৎখাত করতেই ইসলামের আগমণ হয়েছে। অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন সকল র্কাযকলাপও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। তিনি বলেন বাংলা নববর্ষের দিনে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির একটি অংশ। এখানে হিন্দুদের বিভিন্ন দেবদেবির প্রতিক তৈরী করে তা দিয়ে মঙ্গল কামনা করা হয়। ইসলাম যা কঠোর ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছে। অতএব কোন মুসলান এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারে না এবং পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভযাত্রার নামে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বাংলার যমিনে চলতে দেওয়া যায় না। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন দুঃখজনক হলেও সত্য যে সংখ্যাগরিস্ট মুসলমানের দেশে মাদরাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলক করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যা কখনো মেনে নেয়া যায় না। তিনি হোশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন অবিলম্ভে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রজ্ঞাপন বাতিল করা না হলে তৌহিদী জনতা মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
আজ ১৩ এপ্রিল শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুমিল্লা পশ্চিম জেলা শাখার উদ্দোগে গৌরিপুর বাসষ্ট্যান্ড মায়াকানন মিলনায়তনে আয়োজিত জনশক্তি ও সূধী সমাবেশে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।