Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দামুড়হুদায় ভরা মৌসুমেও মিলছে না দেশীয় মাছ

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে

ভরা মৌসুমেও দামুড়হুদায় চলছে দেশীয় মাছের আকাল। সম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও নদ-নদী, বিল-বাঁওড়সহ জলাশয়গুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় গ্রীষ্মের আগেই সেগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে এ অঞ্চলের খাল-বিল, বাঁওড়, নদ-নদীসহ মুক্ত জলাশয়গুলো মাছশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছের মধ্যে বর্তমানে ৫৪ প্রজাতির মাছের অস্তিত্বই বিপন্ন। ইতোমধ্যে এ অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে খয়রা, মায়া, লালচাঁদা, পাবদা, তপসে, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, ঝায়া মাছসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির ছোটমাছ। এসমস্ত বিলুপ্তপ্রায় মাছ ছাড়াও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে চলাপুঁটি, টেংরা, ফলুই, ভেদা, শিং, মাগুর, কৈ, বেলে, শৈল, গজাড়, টাকি, বোয়াল, লালখলিশা, বাইম, পাকাল, তোড়া, গোরকুতেসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে এসব প্রজাতির মাছ আর চোখে পড়ে না। এক সময়ের চিরচেনা মাছগুলো এখন হয়ে পড়েছে খুবই অচেনা, অপরিচিত। শহরের বাজারগুলোতে প্রাকৃতিক মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মফস্বলের হাট-বাজারগুলোতে মাঝে-মধ্যে যাওবা কিছু আমদানি হয় তাও অবার চলে যায় ভাগ্যবান পয়সাওয়ালাদের বাজার ব্যাগে। দাম অত্যন্ত চড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষদের কপালে এসব মাছ আর জুটছে না। দেশীয় প্রজাতির প্রায় সব প্রাকৃতিক মাছের বংশ বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ জনপদে আগামী কয়েক দশকে জলাশয়গুলো দেশীয় প্রজাতির মাছশূন্য হয়ে পড়বে। দামুড়হুদা উপজেলার জলাশয়গুলোর মধ্যে মাথাভাঙ্গা নদীর আয়তন ১৭৯ দশমিক ২৪ হেক্টর, ভৈরব নদের আয়তন ৩৪ দশমিক ৯৯ হেক্টর, সরকারি জলাশয় ৫৩২ হেক্টর, বেসরকারি ছোট, বড় পুকুর রয়েছে প্রায় ২ হাজারটি। এক সময় উপজেলার ছুটিপুর, লক্ষীপুর, কার্পাসডাঙ্গা, পারকৃষ্ণপুর, কুড়ালগাছি, কাদিপুর, জয়রামপুর, লোকনাথপুর, ডুগডুগিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৫/৬শ’ জেলে পরিবার বিভিন্ন নদী খাল-বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জলাশয়গুলো মাছশূন্য হওয়ায় মাছ ধরতে না পারায় তারা জীবন-জীবিকার তাগিদে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। এলাকার হাট-বাজারগুলোতে মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। বাজারে যাওবা কিছু আমদানি হচ্ছে তার দাম অত্যন্ত চড়া হওয়ায় সাধারণ মানষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বর্তমানে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, খাল-বিলগুলোতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় গভীরতা হ্রাসের কারণে শুকিয়ে যাওয়া, গর্ত-ডোবাগুলো মাটি ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থল ডোবা-নালা-গর্ত ইত্যাদি সেঁচে মাছ ধরা, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজে অপরিমিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, নানাভাবে জলাশয় দূষণ, মাছ ধরতে কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি। এ সমস্ত কারণে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তারে মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের গোপাল হালদার, কুড়ালগাছি গ্রামের মৎস্যজীবী রবি হালদার, দর্শনা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ঝন্টু হালদার ও আনোয়ার বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সরকারি খালবিল প্রকৃত মৎসজীবীরা ইজারা পায় না। এক শ্রেণির প্রভাবশালী লোকজন মৎস্যজীবী সেজে বিল-বাঁওড় ইজারা নেয়ার কারণে প্রকৃত মৎসজীবীরা উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এসব জলাশয়ে বিদেশি প্রজাতির রাক্ষুসে মাছ চাষ করে অধিক লাভের সুযোগ খোঁজে। তারা উৎপাদিত মাছ অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় বাজারে বিক্রি না করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বিক্রি করে। ফলে স্থানীয় হাট-বাজারে মাছের দেখা মেলে না। সচেতন মহল মনে করেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় উন্মুক্ত জলাশয়গুলো প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে ইজারা দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করলে, ডিমওয়ালা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ, কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং মৎস্যবিভাগ সরজমিনে তদারকির ব্যবস্থা করলে মাছের উৎপাদন পুরোপুরি না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক করা সম্ভব। দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন, কয়েক বছর যাবত বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির প্রাকৃতিক ছোটমাছ না ধরে প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ করা, ডিমওয়ালা মাছ প্রকৃতিতে অবমুক্তকরণ, ছোটমাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে এ সময়ে এসব মাছ মারার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রারিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দামুড়হুদায় ভরা মৌসুমেও মিলছে না দেশীয় মাছ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ