Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ভাসানচরে

ঝুঁকিতে দুই লাখ তিন হাজার রোহিঙ্গা চিহ্নিত

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : অবশেষে ঝুঁকিতে থাকা দুই লাখ তিন হাজার রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ঝুঁিকতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নোয়াখালীর ভাসানচরে। নোয়াখালীর ভাসানচলের গুচ্ছগ্রামে এক লাখ তিন হাজার ২০০ রোহিঙ্গার বসবাসের সুযোগ থাকলেও অন্যান্যদের কোথায় নেয়া হবে তা এখনো জানা যায়নি। মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্য থেকে নির্যাতনের মূখে পালিয়ে আসা ১৩ লাখের মত রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাদের আশ্রয় হয়েছে টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত এলাকাসহ কক্সবাজার ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন বনভূমির আশ্রয় শিবিরে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা আসছে বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও ভূমিধসের মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে আছেন। তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া দরকার। এনিয়ে বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমুহের উদ্বেগের অন্ত ছিলনা।
জানা গেছে, এক লাখ তিন হাজার ২০০ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হচ্ছে নোয়াখালীর ভাসানচরে। বাংলাদেশ সরকারও ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের সেখানে পুনর্বাসনে উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানাগেছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে এক লাখ তিন হাজার ২০০ জনকে বসবাসের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে নির্মিতব্য ১২০টি গুচ্ছগ্রামে পাঠানো হবে।
আশ্রয়ণ ‘৩’ আবাসন প্রকল্পের আওতায় তারা সেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা পেতে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্পেরও অনুমোদন দিয়ে দ্রæত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী।
১৩ লাখের মধ্য থেকে কারা যাবেন ভাসানচরের গুচ্ছগ্রামে এমন প্রশ্ন সবার মত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও। তবে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভাসানচরে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তর করা হবে।
সূত্রমতে স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ‘আসন্ন বর্ষাকালে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ও পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের রক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণ’ সংক্রান্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্রমতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ্ কামাল জানান, গেল (২০১৮ সালের) ফেব্রুয়ারিতে ইউএনএইচসিআর ও আইওএম’র অর্থায়নে এডিপিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় সম্ভাব্য ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকি থাকা এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সমীক্ষা অনুযায়ী দুই লাখ তিন হাজার রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, ভাসানচরে এক লাখ তিন হাজার ২০০ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হচ্ছে। দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী। শুরুতে ১৫০ কোটি টাকা অর্থছাড় দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। আরও এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার দ্রæত ছাড় চাওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেই এ প্রকল্পে আরও ৫০০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হবে
রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারী ও বেসরকারী র্কমকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা সহজে স্থান পরিবর্তন করতে চান না। তাই ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ক্যাম্প ইনচার্জদের সহায়তায় উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপশি কর্মরত এনজিওসমূহকে এ কাজে নিয়োজিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ভূমিধস ও পাহাড়ি ঢলের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। ভাসানচরের আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তরের সময় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এছাড়াও ভাসানচরের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে অবহিত করতে হবে। ইউএনআরসি, আইওএম, ইউএনএইচসিআর, ডবিøউএফপিসহ আইএসসিজির মত আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলোকে ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
সরকার ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সাথে একমত হয়ে রোহিঙ্গারা যাতে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী হয় সেজন্য সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি প্রচার-প্রচারণায় নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গাদেরও সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরর কাজ সমন্বয়ের জন্য কক্সবাজারে তালিকা প্রস্তুত, মোটিভেশন এবং পরিবহনের জন্য একটি কমিটি এবং নোয়াখালীতে একটি পৃথক কমিটি গঠন করতে হবে। কক্সবাজার ও নোয়াখালীর কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য নবনির্মিত ‘ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রল্প’-এ স্থানান্তর শুরুর আগে কতুপালং ও নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের অনুমোদিত জনবল কাঠামোর অনুরূপ সেখানে অতিরিক্ত জনবল ও অফিস স্থাপন করতে বলে জানানো হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ