পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের ধারক বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম অনাদরে-অবহেলায় পিছিয়ে পড়ছে। ‘উন্নয়ন’ যা হচ্ছে তাও বিক্ষিপ্ত ও অপরিকল্পিতভাবে। সরকারি সেবা উন্নয়নে দায়বদ্ধ সংস্থা ও বিভাগগুলোর কাজেকর্মে নেই সুষ্ঠু সমন্বয়। সর্বোপরি মৌলিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে করে হতাশা প্রকাশ করছেন চাটগাঁবাসী। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভাগীয় পর্যায়ের জনসভায় বড়সড় নির্বাচনী শোডাউন সম্পন্ন হয়। গত দুই সপ্তাহে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসী এই জনসভা থেকে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দেখছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পর পর দুই মেয়াদে এ যাবত ৯ বছর অতিবাহিত করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলতে গেলে দোরগোড়ায়। তবে বিগত দু’টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ অঞ্চলের নেতা-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিগণ জনগণের সামনে যেসব নির্বাচনী ওয়াদা প্রদান করেন সেসব পূরণে আরও অপেক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামবাসীকে। এলাকবাসী নির্বাচনী ওয়াদার বহর আদৌ পূরণ হবে কিনা বা কতদূর সম্ভব হবে তা নিয়েও আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছে।
যেমন- চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ-শিল্পায়নে স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের যুগোপযোগী উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, শিল্প স্থাপনের উপযোগী প্লট বা স্থান সঙ্কট, গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন পরিকল্পনা আটকে থাকা, বন্দরের জন্য এ মুহূর্তে অপরিহার্য ও পরিপূরক অবকাঠামো পতেঙ্গা-হালিশহরে বে-টার্মিনাল নির্মাণে অনিশ্চয়তা, ভাঙাচোরা জরাজীর্ণ সড়ক রাস্তাঘাটের সংস্কার, বহু পুরনো দাবি চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিষয় এখনও ঝুলে আছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এসব প্রকল্প ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। অথচ অর্থনীতির চাবিকাঠি হিসেবে বন্দরনগরীর এসব প্রকল্প ও পরিকল্পনা নিশ্চিত হলেই দেশের রাজস্ব আহরণ, কর্মসংস্থান, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগসহ (এফডিআই) জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার হবে আরও কয়েকগুণ।
এদিকে ২১ মার্চ পটিয়ায় বিভাগীয় জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, মহানগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসয়ে নির্মাণ প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পসহ চট্টগ্রামের জন্য ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করে গেছেন। এরমধ্যে ১৩টির উদ্বোধন এবং ২৮টির নতুন প্রকল্পের ভিত্তিফলক স্থাপন করেন। অবশ্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণ আশা করেছিলেন, বে-টার্মিনালসহ শিল্প-কল-কারখানা স্থাপনের বিষয়ে জনসভা থেকে সুনির্দিষ্ট আশার বাণী বেরিয়ে আসবে। এমনকি প্রাচীন ও সুপ্রসিদ্ধ মহকুমা শহর পটিয়ায় যেখানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই পটিয়াকে জেলা ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। জনসভার আগে জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-এমপিগণ এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে আশার কথা বলেছিলেন। তবে সেই প্রত্যাশা এবারও পূরণ হয়নি। জনসভার পরও এর রেশ রয়ে গেছে চট্টগ্রাম জুড়ে। কেননা চাওয়া-পাওয়া নিয়ে গুরুত্বের সাথেই আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে আলাপে-আড্ডায়। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, সমস্যা-সঙ্কট যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেল।
এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর স¤প্রসারণের লক্ষ্যে গৃহীত বৃহৎ অবকাঠামো পতেঙ্গা-হালিশহরে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল ধীরগতি এবং নানামুখী জটিলতায় আটকে আছে। চট্টগ্রাম বন্দর প্রসারে লক্ষ্যে পরিপূরক অবকাঠামো হিসেবে এটি যুগোপযোগী এবং অপরিহার্য হিসেবেই দেখছেন বন্দর ব্যবহারকারী ও বিশেষজ্ঞগণ। কেননা চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারসহ খোলা সাধারণ পণ্য এবং জাহাজবহর হ্যান্ডলিংয়ের ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে গেছে। বিগত ৭ ডিসেম্বর’১৫ইং প্রকল্পের চিহ্নিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বন্দরকে অনাপত্তি পত্র দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপরও ভূমি সম্পর্কিত একের পর এক জটিলতায় এর বাস্তবায়ন এগুচ্ছে না। বে-টার্মিনাল নির্মাণে কারিগরি সমীক্ষা প্রায় সম্পন্ন করেছে জার্মানীর হামবুর্গ বন্দরের এইচপিসি শেলহর্ন-কেএস কনসালটেন্ট জেভি। গত ১৭ আগস্ট’১৬ইং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তির পর ইতোমধ্যে সাগর-উপকূলভাগের হাইড্রোগ্রাফি সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। জার্মান প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পেশকৃত সমীক্ষার প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তে সেখানে নতুন সমুদ্র বন্দর স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে টেকনিক্যাল সুবিধা সম্পন্ন এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় বলে জানান।
পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় বঙ্গোপসাগরের কিনারায় জেগে ওঠা চর ও এরসাথে লাগোয়া চ্যানেল ঘিরে বন্দর কর্তৃপক্ষ স¤প্রসারিত বন্দর ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের জন্য ৯০৭ একর ভূমি চিহ্নিত করা হয়। ৭০ একর জমি ব্যক্তিমালিকানার। বাদবাকি ভূমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত অকৃষি জমি নিয়েই জটিলতা। ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্পে সিডিএ’র অনাপত্তিকৃত মোট ৯০৬ দশমিক ৪২ একর ভূমির মধ্যে উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ হালিশহরে অবস্থিত ৪৬৪ দশমিক ৭৫ একর ভূমি বন বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত এলাকা। যা ২০১৪ সালের ৫ জুন গেজেট এবং বন আইনের ৬ ধারায় ইস্তেহার জারি হয়। এই ভূমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা বন বিভাগের মতামত জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে জানান, বে-টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ হালিশহর এলাকার ৪৬৫ একর ভূমি রিজার্ভ ফরেস্ট। ফলে ডি-রিজার্ভেশন হলেই ভূমি হস্তান্তর সম্ভব।
অথচ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন হলে আগামী ৫ বছরে বে-টার্মিনালের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে। প্রথম দিকে দু’টি ডলফিন টাইপ জেটি নির্মাণ করে কয়লা এবং সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার খালাস কাজ শুরু হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের মুনাফালব্ধ নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়নে বে-টার্মিনালের ভৌত ও কারিগরি অবকাঠামো নির্মাণে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে ভূমির জটিলতা কবে নিরসন হবে, কবে বে-টার্মিনাল বাস্তব রূপ লাভ করবে তা নিয়ে সংশয় ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।