Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পশুসম্পদে সমৃদ্ধ দেশ

গোশত রফতানির সম্ভাবনা উজ্জ্বল

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : একটি গরু বছরে একটি বাছুর এবং একটি ছাগল বছরে অন্তত ৬টি বাচ্চা দেয়। অস্বচ্ছল পরিবারে কয়েকটি গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী থাকলে অনায়াসেই সংসারে স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। বাড়ি বাড়ি গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালন করে সংসার নির্বাহের খরচ যোগাড়ের অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে গ্রামবাংলায়। গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালনের দৃশ্য গ্রামবাংলায় অতি পরিচিত। এমন কোন গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে গবাদি পশু লালন পালন হয় না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টির অন্যতম সহায়ক শক্তি পশুসম্পদ। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে পশুসম্পদ দ্রæত আয়বর্ধক খাত। গতানুগতিক ধারার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে আধুনিক পরিকল্পনা ও কলাকৌশল। এতে সারাদেশে পশুসম্পদের দ্রæত উন্নয়ন ঘটছে। নিকট অতীতেও অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা ছিল ভারত ও মায়ানমার থেকে গরু না আসলে বাংলাদেশে কোরবানির পশু সংকট হবে। চলমান বাজারে গোশতের মূল্য হবে আকাশছোঁয়া। বর্তমানে সেই ধারণা সম্পুর্ণ পাল্টে গেছে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় খামারী ও কৃষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশ এখন পশুসম্পদে সমৃদ্ধ। গোশতের কোন সংকট স্পর্শ করেনি গত ৩বছর। দেশের কৃষকরা প্রমাণ করেছেন, পশুসম্পদ উন্নয়নে তারা সফল। আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। বরং উদ্বৃত্ত হবে এবং রফতানী করে দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করাও সম্ভব হবে। এসব তথ্য প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ও খামারী সুত্রে পাওয়া।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ আইনুল হক গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বাংলাদেশ পশুসম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে। গতবছর গোশত উৎপাদন হয়েছে ৭১ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন। গোশতে আমরা স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। দেশের চাহিদা মিটানোর পর এখন রফতানী বাজার খুঁজছি। মালয়েশিয়া থেকে চলতি মাসেই একটি প্রতিনিধি দল আসার কথা। মালদ্বীপ ও কাতারে ইতোমধ্যে যৎসামান্য গোশত রফতানী হয়েছে। সুত্র জানায়, সারাদেশে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গরু ও ছাগলসহ গবাদি পশুর সংখ্যা ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩হাজার। সুত্রমতে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পশুসম্পদের বিরাট অবদান রয়েছে। একসময় ভয়াবহ রোগ, পশুখাদ্যের সংকট এবং ভারত থেকে গরু ঢোকার কারনে বাংলাদেশে গরুর উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এখন উৎপাদন বেড়েছে অনেক। শুধু কোরবানির পশু এবং গোশতের চাহিদা পুরণের ক্ষেত্রে নয়, আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে গবাদি পশু। গোটা প্রাণীসম্পদ খাতে বিপ্লব ঘটেছে। সুত্রমতে, আমিষের ঘাটতি পুরণ, চামড়া ও গোশত রফতানী বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা বিমোচনে আর্থিক নিরাপত্তা গড়ে তোলা সম্ভাবনা উজ্জ¦ল হয়েছে গ্রামবাংলায় পশুসম্পদের উন্নয়নে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখছে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেয়া তথ্য হচ্ছে, গোশতের পাশাপাশি দুধ ও ডিমেও দেশের মোট চাহিদা মিটানোর পথে রয়েছি আমরা। তিনি বলেন, ডিমের চাহিদা ১হাজার ৬শ’৮৪ কোটি, উৎপাদন হচ্ছে ১হাজার ৪শ,৯৩ কোটি ডিম। দুধের চাহিদা ১শ’১৬ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ৯২ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টন। যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বলা যায়, অচিরেই দুধ ও ডিমের চাহিদা পুরণ হয়ে সারপ্লাস হবে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, সারাদেশে গত ঈদুল আযহায় কোরবানি করা শতকরা ৯৮ ভাগই দেশী গবাদি পশু ছিল। ওইসময় মাত্র ২ ভাগ পশু ঢোকে ভারত ও মায়ানমার থেকে। সুত্রমতে,একথা সত্য গত কয়েকবছর আগে কোরবানির জন্য ভারতের পশুর দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হতো। কোরবানি সময় ছাড়াও সীমান্তের করিডোর দিয়ে প্রচুর গরু ঢুকতো ভারত থেকে। যার জন্য দেশীয় গরু ও ছাগলের উৎপাদনে বড় বাঁধার সৃষ্টি হতো। গত কয়েকবছর গোশত ও কোরবানির পশু বিক্রি করে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়। তাই ব্যাপক উদ্যোম নিয়ে কৃষকরা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও হাঁস-মুরগী লালন পালন করতে মাঠে নামেন। সুত্র জানায়,বর্তমানে দেশে প্রায় অর্ধকোটি কৃষক পরিবার গরু পালন করছে। গেল বছর কোরবানির জন্য প্রস্তত ছিল ১কোটি ১০ লাখ পশু। সংকট তো হয়নি বরং সারপ্লাস হয়েছে। আগামী কোরবানীর চাহিদানুযায়ী পশু বাজারে তোলার জন্য পর্যাপ্ত পশু উৎপাদন হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ভবতোষ কান্তি সরকার জানালেন, প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে কোনরূপ সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাছাড়া ক্ষুদ্র খামারীদের সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা নেওয়ায় পশুসম্পদ উন্নয়নে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।
অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করে জানালেন, সরকার সাধারণত একেবারে হতদরিদ্রদের মাঝে দারিদ্র্য বিমোচনে ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের অন্য কোনভাবে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি জানালেন, বেশীরভাগ হতদরিদ্র্য ব্যক্তি গবাদি পশু লালন পালন না করে ঋণের অর্থ সংসারের বিশেষ প্রয়োজনে ব্যয় করে থাকেন। তাছাড়া পালনের মাঝপথে গোখাদ্যের খরচ যোগাড় করতে না পেরে লালন পালনে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। তার মতে, যদি গ্রামে গ্রামে ছোটখাটো খামার ও জমি যাদের আছে তাদের ঋণ দিলে গবাদি পশু পালন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। কারণ তারা নিজেদের জমির খড়, খাস গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে সহজেই। তাদের ঋণ ও লালন পালনে ভর্তুকি সিস্টেম চালু করলে আরো দেশে গরু ও ছাগলের সংখ্যা বাড়বে। তখন গোশত ও চামড়া রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ