Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল অনুমোদনে নৈরাজ্য

শফিকুল ইসলাম বেবু কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুড়িগ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় অনুমোদনের নামে উৎকোচ, রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেনতেন বিদ্যালয় ঘর দাঁড় করিয়ে এমপিওভূক্তির পেছনে ছুটছে একটি কুচক্রি মহল। এতে গা ভাসিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট অসাধু কিছু কর্মকর্তা।
কুড়িগ্রাম জেলায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৪টি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৫২টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেয়া হয় না ক্লাস। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলি। অথচ নিয়মিত দেখানো হয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। খাতায়-কলমে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। বিভিন্ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধানদের সাথে আতাঁত করে ওইসমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম এসব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খাতায় নাম ইস্যু করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ দেখানো হয়।
সরেজমিনে কুড়িগ্রাম জেলার বেশকিছু বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক এসব বিদ্যালয়গুলির করুণ অবস্থা।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায় সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চৈতার খামার গ্রামেই গড়ে উঠেছে এক’শ গজের মধ্যে পূর্ব কুমরপর আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চৈতার খামার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দুপুর ঘনিয়ে আসলেও বিদ্যালয় দু’টির একটিও খোলা হয়নি। অথচ জাতীয় পতাকা উড়ছে।
বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার শাহ্ জামাল জানান, পূর্ব কুমরপর আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চাকরি করেন একই ইউনিয়নের ভোগডাঙ্গা একে দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। অথচ খাতায় কলমে তিনি এই স্কুলেও প্রধান শিক্ষক। কোনোদিনও তাকে স্কুলে দেখি নাই। এই স্কুলে সকালে পিয়ন এসেই পতাকা তুলে দিয়ে যান। বিকাল হলেই পতাকা নামিয়ে ফেলেন। এটিই তার চাকরি। স্কুলটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ছাত্র-ছাত্রীও আসেনি একদিনও ক্লাস হয়নি। এলাকার মোজাম্মেল হক জানান-চৈতার খামার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি মাঝে মধ্যে খোলা দেখা যায়। এলাকায় স্কুল থাকলেও হামার ছাওয়া-পাওয়া (ছেলেমেয়ে) দূরের স্কুলত পড়ে। এলাকায় স্কুল থাকি লাভ কি? এমন স্কুল থাকার চেয়ে না থাকায় ভাল।
চৈতার খামার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বেলাল উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন-আমি চাকরি করি অন্য স্কুলে। এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আমার কাগজপত্র দেখিয়ে বিদ্যালয় অনুমোদন পায়। সেই থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা শিক্ষা অফিসার স্যার বলেছেন স্কুলটি টিকে রাখতে যা করা দরকার তা করো-কি আছে আমি দেখবো।
পূর্ব কুমরপর আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম এলাকায় সাংবাদিকদের আগমনের কথা শুনে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন। একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ওই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন-অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করেছি এই বিদ্যালয়ের পেছনে। প্রধান শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি স্কুলে না আসায় স্কুলটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার চর বেরুবাড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফুলবাড়ি উপজেলার চর বড়লই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ভবেশ আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভুয়া নাম দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কৌশলে হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের কাজী জানান, শিক্ষা অফিসের কেউ দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং কোন প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি উপেক্ষা করলে সেই প্রতিষ্ঠানেরও সম্ভাব্য এমপিও ভুক্তির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্কুল অনুমোদনে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ