দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
‘বিবাহ’ জীবনচক্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। একজন নারী এবং একজন পুরুষের যৌথ জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গীকার। পারস্পরিক সহাবস্থানের স্বীকৃত এবং বৈধ দ্বি-পাক্ষিক একটি চুক্তি। যে চুক্তির বলে বিপরীত লিঙ্গের দু’জন মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন রচিত হয়। এর দ্বারা মানুষ তার মনের কামনা-বাসনাকে বিধিবদ্ধভাবে নিয়ন্ত্রণ করে মনের প্রশান্তি লাভ করে। দৃষ্টি সংযত রাখার এবং উন্নত চরিত্র গঠনের সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থাপনা হচ্ছে বিবাহ। যৈবিক চাহিদা পুরণের পাশাপাশি পরহেজগারী ও সুস্থ সংস্কৃতির পূর্ণতায় পৌছানোর অন্যতম একটি উপাদান। রাসূল (সা.) বলেছেন “যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করে তখন তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়ে যায়।” সুতরাং যে ব্যক্তি বিবাহ করে স্ত্রীর বরণ-পোষণের সামর্থ রাখে তার বিবাহ করে নেয়া উচিৎ।
বিবাহ পরম পূণ্যের কাজ। একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এর দ্বারা জীবন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। একটি পরিবর্তন এনে দেয় জীবনে। শুরু হয় আরেকটি নতুন অধ্যায়। জীবনে এ অধ্যায় দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনে। বিবাহ দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, যদি রাসূল সা. এর অনুসৃত তরিকা অনুযায়ী হয়। দ্বীনের সীমা লংঘিত না হয়। ইসলামে বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ও বিধিমালা রয়েছে। এই নিয়ম বিধানকে উপেক্ষা করে নিজেদের খেয়াল খুশী মত বিয়ের কার্যাদি সমাধা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, রবং রয়েছে সব ধরণের অকল্যাণ, অশান্তি। বিবাহ একটি সুন্নত। সুতরাং বিবাহ সুন্নত তরিকায় সংঘঠিত করাই সমীচীন। কিন্তু আধুনিক সমাজে মুসলিম পরিবারে বিয়ে-শাদীতে কুসংস্কার ঢুকে গিয়েছে। আধুনিকতার নামে চলছে অপচয়, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অবাধ্যতা। চলছে অকল্যাণময় সুন্নত বহির্ভুত গর্হিত কর্মকান্ড। যা বিয়ের বরকত নষ্ট করে দেয়। বাগদান থেকে শুরু করে বিয়ের কিছু দিন পর পর্যন্ত যত রসুম-রেওয়াজ হয় সবই রাসূল সা. এর অনুসৃত তরিকার পরিপন্থি। বরের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন কাপড় পড়ানো, জ্বিন-ভুতের ভয়ে কোমরে লোহার বেড়ী বাঁধা, গায়ে হলুদ, বরের হাতে মেহেদী দেওয়া, কোন নারী-ভাবী কর্তৃক বরকে গোসল দেয়া, একে অপরকে রং দেওয়া, নারীদের নৃত্য প্রদর্শণ, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকাদের নাচ-গান-বাজনা-তামাশা, আতশবাজি, যুবক-যুবতিদের অবাদ মেলামেশা ইত্যাদি। আর যারা সামান্য সম্পদশালী তারা গেইট বেধে রকমারি বাতি জ্বালিয়ে রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত সাজিয়ে জাহান্নামের আকৃতি ধারণ করানো দেখে মনে হয় যে, আল্লাহ তা’লা তাদেরকে যে ধন-সম্পদ দান করেছেন তা শুধুমাত্র বিয়ে-শাদীতে লুটিয়ে দেয়ার জন্য দান করেছেন। এ ছাড়া আর কোন ব্যায়খাত ধার্য করেন নি। অথচ যে পন্থায় আল্লাহর দেওয়া সম্পদকে খরচ করা হচ্ছে এগুলো বিবেক ও ধর্ম উভয়ের বিপরীত এবং পরকালে শাস্তির কারণ। আমাদের সমাজ রাসূল সা. এর কর্মনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছে। প্রচলিত বিয়ে-শাদীর আনুষ্টনিকতা রাসূল সা. এর আনুগত্যমুলক নয়। যা আছে তা একমাত্র ইজাব-কবুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলা যায়। অথচ রাসুল সা. এর স্ত্রী খাদিজা রা.’র ইন্তিকালের পর হযরত আয়েশা রা.’র সাথে রাসূল সা. এর বিবাহ কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সুসম্পন্ন হয়েছিল। ওয়ালিমার দাওয়াত রাসূল সা. মাত্র এক পেয়ালা দুধ দিয়েই সম্পন্ন করেছিলেন। রাসূল সা. যদি ইচ্ছা করতেন এবং এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক থাকতো তাহলে তিনি তাঁর সত্যনিষ্ঠ ভক্ত-অনুরক্ত সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে ধার অথবা উপঢৌকন গ্রহন করে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে পারতেন। কিন্তু তিঁনি তা করেন নি। এবং সমাজের সমালোচনা ও লোকলজ্জার পরোওয়া করেন নি। রাসুল সা. এর কলিজার টুকরা মেয়ে হযরত ফাতিমা রা.’র বিবাহের সময় মাত্র এক প্লেট খেজুর উপস্থিত জনতার মাঝে বন্টন করেন আড়ম্বরপূর্ণ কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। বরের সাথে আগত মেহমানদের আয়োজনে শত শত মানুষকে খাওয়ানোর জন্য মুরগির ফ্রাই, বিফ ভূনা আর রকমারি খাবারের আয়োজন করেন নাই। রাসূল যদি চাইতেন, যদি আনুষ্টানিকতার মধ্যে কোন বরকত নিহিত থাকতো তাহলে রাসূল সা. কখনোই তা পরিত্যাগ করতেন না, বরং আড়ম্বরপূর্ণ ভোজানুষ্টান করতে পারতেন। তিঁনি এগুলি করেন নি যা থেকে পরিস্কার হয় যে, এহেন অনুষ্ঠানের জন্য অপচয় করা, ধার-কর্য করে অথবা হাত পেতে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যয় করা নিতান্ত অনর্থক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিপন্থি।
আর্থিক বিবেচনায় আমাদের সমাজকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত। সমাজের উচ্চবিত্ত সম্পদশালীদের বিয়ে-শাদীর অবস্থা বলাই বাহুল্য। তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মত যা ইচ্ছা সবই করেন। এ ক্ষেত্রে শরিয়তের কোন দিকনির্দেশনার পরোয়া করেন না। সামাজের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো তাদের বিবাহ অনুষ্টানের সময় সমাজে মানহানি ও লোকসমালোচনার পরোয়া করে না। খুব সাধারণভাবেই কার্যসমাধা করে। বলতে গেলে তারাই সুখি। আর যারা মধ্যবিত্ত তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। তারা না পারেন কারো কাছে বলতে, আর না পারেন নিজেরা সইতে। সমাজে মান হানির ভয়ে অনেকে বছরের পর বছর পার হলেও বিয়ে করার সাহস করতে পারছেন না। যারা করছেন, তারা সুস্থ সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিবাহ করতে হচ্ছে ধার-কর্য করে। টিভি, ফ্রীজ, মোটর সাইকেল, কাঠের ফার্নিচার, যৌতুক ইত্যাদি দেয়ার সামর্থ না থাকায় এবং বরের সাথে আগত শত শত অতিথির মেহমানদারির ভোজানুষ্ঠান করতে অক্ষমতার কারণে অনেক পিতা বিয়ে দিতে পারছেন না তার বিবাহ উপযুক্ত মেয়েকে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে পারছেন না তাই লোকসমাজে মানহানি ও সমালোচনার ভয়ে বিবাহ উপযুক্ত ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করতে পারছেন না অনেক অভিভাবকরা। এই হচ্ছে আমাদের সমাজ!
বিয়ে-শাদীতে যৌতুক একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। যৌতুক নারীর প্রতি একটি অভিশাপ। যৌতুক দিতে না পারার কারণে বহু নারীর বিয়ে হয় না। বিয়ে হলেও এই যৌতুকের কারণেই অনেকের সংসার সুখের হয় না। লোভী, সংকীর্ণ মন-মানসিকতা সম্পন্ন স্বামীর ঘরে অপমান ও নির্যাতন সহ্য করতে হয় বহু নারীকে। অনেক নারীকে নরপিশাচ স্বামীর হাতে দিতে হয় জীবনও। ইসলাম নারীর আর্থিক সামর্থ্য দানের লক্ষ্যে এবং তার সম্ভ্রমকে সম্মান জানানোর জন্য ‘মাহর’ নির্ধারিত করে দিয়েছে। কিন্তু উল্টো দেখা যায়, ‘মাহর’-এর স্থলে যৌতুকের অবৈধ আবদারের অর্থ ও স¤পদ দিতে হয় কন্যাপক্ষকে। ইসলাম এ অন্যায়কে অনুমোদন করে না। যৌতুক হচ্ছে একটি জুলুম। নারীর অভিভাবকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার প্রতি যৌতুকের মাধ্যমে অন্যায় করা হয়। যৌতুক নামক অভিশাপ তো আছেই, সাথে আছে বিয়ের দিন কনের বাড়িতে দলবেঁধে খাওয়ার অনুষ্ঠান। এক্ষেত্রে নারীর অভিভাবকের ঘাড়ে যেমন চাপানো হয় শত শত মেহমানের ব্যায়ভার তেমনি বরের পক্ষেও গাড়ী শুভাযাত্রা, ক্যামেরা ইত্যাদিসহ ব্যয়ের মাত্রা মুটেই কম নয়। এটা সম্পুর্ণ অনর্থক এবং অপচয়ও। কুরআনে আল্লাহ তা’লা অপচয় করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং আপচয়কারীদেরকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। অপচয় না করার জন্য নির্ধেশ দিয়ে আল্লাহ তা’লা বলেন- “কিছুতেই অপচয় করো না। অবশ্যই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই; আর শয়তান হচ্ছে তার প্রতিপালকের বড় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বানী ইসরাইল-২৭)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।