দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
চার সংখ্যায় সীমিতকরণ প্রসঙ্গ : দ্বিতীয় বিষয়টি অর্থাৎ স্ত্রীর সংখ্যা (৪) চার-এ সীমাবদ্ধ করার বিষয়টি। তার কারণ হল, কুরআন ও হাদীস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, একজন নারী চার মাস পর্যন্ত যৌন চাহিদা সহ্য-সংবরণ করে যেতে পারে। যা পবিত্র কুরআনে ‘ঈলা’র বিধান। পরিভাষায় ‘ঈলা’ মানে, ‘চার মাস বা তদুর্ধ্ব সময় স্ত্রীর কাছে না যাওয়ার বা সহবাস থেকে দূরে থাকার কসম করা; প্রাগুক্ত : পৃ. ৩৭৪। ও স্বামী মৃত্যুবরণকারী মহিলার ইদ্দত পালন-বিধান দ্বারাই সুস্পষ্ট দলীল হিসেবে প্রতীয়মান হয়ে থাকে।
ঈলার ক্ষেত্রে চার মাসের অধিককাল যেহেতু পুরুষের পক্ষে স্ত্রীর কাছে না যাওয়া অবিচারের নামান্তর ছিল। তাই চার মাসের পরে শরীয়ত সংশ্লিষ্ট নারীকে নিজের বেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা প্রদান করেছে। একইভাবে জাহিলিয়্যা যুগে স্বামী মৃত্যু-পরবর্তী ইদ্দত ছিল এক বছর। শরীয়ত সেটিকে অবিচার সাব্যস্ত করে চার মাস দশদিনের অধিক মেয়াদকে বাতিল করে দিয়েছে।
হযরত উমর ফারূক রা. রাতের বেলায় কোন এক গলিপথে অতিক্রম করছিলেন। তাঁর কানে জনৈক নারীর শব্দ ভেসে আসলো, যে নারী এই পঙক্তি পাঠ করছিল : “আল্লাহর শপথ! যদি আল্লাহ-ভীতির প্রশ্ন না হয়ে থাকতো, এ নারী তার পরিণাম বিষয়ে ভয় না করতো; অবশ্যই এ খাটের পার্শ্ব আঁকড়ে হলেও, তা নাড়িয়ে যৌন কামনা মিটানোর চেষ্টা করা হতো”।
হযরত উমর রা. কারণ জানার চেষ্টা করলেন, তাতে বোঝা গেল, ওই নারীর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে জিহাদে বেরিয়ে গিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন। হযরত উমর রা. হযরত হাফসা রা.-কে বললেন, বুদ্ধিমতি মহিলাদের কয়েকজনকে ডেকে পরামর্শ করে এই ফায়সালা দিতে বল যে, ‘একজন নারী কতদিন পর্যন্ত স্বামী-সঙ্গ ব্যতীত নিজেকে সংবরণ করতে পারে’। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বলা হল যে, একজন নারী চার মাস পর্যন্ত নিজেকে সংবরণ করতে পারে। তার উপর ভিত্তি করে হযরত উমর রা. আইন করে দিলেন যে, ‘এর চেয়ে অধিক সময় যেন কোন বিবাহিত সৈনিক জিহাদে অবস্থান না করে’।
তারই উপর ভিত্তি করে গবেষক ফকীহগণ লিখেছেন, ‘প্রতি চার মাসে অন্তত একবার স্ত্রী-সহবাস করা ‘নৈতিক বিবেচনায়’ স্বামীর জন্য ফরয’। ‘আইনগত বিবেচনায়’ ফরয না বলা’র কারণ হল, যা কিছু আইনগতভাবে ফরয করা হয় বা বলা হয়, তা অবশ্যই পালন করতে হয়; সাধারণত তাতে কোন ‘ছাড়’ থাকে না; উপস্থিত সমস্যা থাকলে পরে কাযা করতে হয়, ইত্যাদি। অথচ ‘স্ত্রী-সহবাস’ বিষয়টি দ্বি-পাক্ষিক একটা ব্যাপার হওয়াতে, তাতে উভয়ের সুযোগ-সুবিধা, সম্মতি, দৈহিক-মানসিক সুস্থতা ইত্যাদি অনেক কিছু জড়িত। যে-কারণে এমন একটি বিষয়কে শরীয়া আইন ‘আইনগত ফরয’ হিসাবে বিচেনায় না নিয়ে, ‘নৈতিকতাকেন্দ্রিক ফরয’ এর কাতারে রেখেছে। উল্লেখ্য, ‘আইনগত ফরয’ ও ‘নৈতিকতাকেন্দ্রিক ফরয’ তথা ‘কাযাআন’ ও ‘দিয়ানাতান’ বিষয়টির পার্থক্য বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মুফতী’র লেখা ‘ফাতাওয়া ও গবেষণা সমগ্র’ সিরিজ বইগুলোর ভূমিকায় সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
একজন পুরুষের ক্ষেত্রে সহ্য-সংবরণের মেয়াদ বা সময়সীমা শরীয়তে বর্ণিত হয়নি। তবে কয়েকটি লেনদেন বিষয়ের ক্ষেত্রে একমাসের সময়কালকে অধিক বলে গণ্য করা হয়। যেমন ‘বাইয়ে-সালাম’ এবং কারও কারও মতে, উদয়-অস্তের স্থানের ভিন্নতার ক্ষেত্রে একমাস সময়কালকে বিবেচনা করা হয়। একইভাবে একমাসে চাঁদ তার পরিভ্রমণ পূর্ণ করে নেয়; যার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া মানব রক্তে পড়ে থাকে। এই বিবেচনায় প্রমাণিত হয় যে, পুরুষ মানুষের সংবরণ-শক্তির শেষ একমাস পর্যন্তই গণ্য হবে; এবং নারীর ক্ষেত্রে চার মাস। উভয়টির আনুপতিক হারের সামঞ্জস্য বিবেচনায় জানা গেল যে, একজন পুরুষের জন্য চারজন নারীই যথেষ্ট হতে পারে।
তা ছাড়া, এটিও বলা যায় যে, স্ত্রী-সহবাসের উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান জন্মদান; আর সন্তান জন্মদানের কারণ হয়ে থাকে সেই সহবাস -যা হায়েয-পরবর্তি সময়ে হয়ে থাকে। আর হায়েয বন্ধ হওয়ার পর স্বামীর কামনা-বাসনাও প্রতিফলিত হয়ে থাকে। হায়েয সাধারণত একজন সুস্থ্য নারীর মাসে একবার হয়ে থাকে। এর আলোকে পুরুষ বা স্বামী প্রতি মাসে একবার সহবাসের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে বলা যায় এবং স্ত্রী প্রতি চার মাসে।
সুতরাং প্রমাণিত হল যে, নীতিগতভাবে একজন স্বামীর চারজন স্ত্রীর প্রয়োজন হতে পারে। আহসানুল ফাতাওয়া : প্রাগুক্ত ইত্যাদি দ্র.। বাকী ভরণ-পোষণের সক্ষমতা না থাকলে বা ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে তাঁর দৈহিক, মানসিক, আর্থিক সমস্যা বা অযোগ্যতা থাকলে সেক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে তো একজনকে বিবাহ করাও আইনত বৈধ হবে না; আর সেটি হল ভিন্ন কথা।
লেখক : মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।