Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রত্যাবাসন ও ঠেঙ্গার চরে সরিয়ে নেয়া অনিশ্চিত

আসন্ন বর্ষায় ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচ লাখের মত রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের জনাকীর্ণ বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা এই শঙ্কায় রয়েছেন। তবে সরকার বর্ষার আগেই দু’লাখের মত রোহিঙ্গাকে আশঙ্কাজনক অবস্থান থেকে সরিয়ে নেয়া শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকানে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মগ দস্যুরা পরিকল্পিত সহিংসতা ও গণহত্যা চালিয়েছিল। হত্যা-ধর্ষণসহ সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাড়ে এগার লক্ষাধিক নারী-শিশু-পুরুষ। মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। রোহিঙ্গাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সরকার কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বনভূমিতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের ১৪ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি বরাদ্দ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ৫ হাজার একর বন কেটে ফেলেছে রোহিঙ্গারা। কিন্তু আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অর্ধেক রোহিঙ্গা বৃষ্টিতে ভূমিধস ও পাহাড়ী ঢলের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে গত জানুয়ারি মাসে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো (ইয়াঙ্গুন) প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আরাকানে (রাখাইনে) ফিরিয়ে নেয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ধাপে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে নানা জটিলতা। মিয়ানমারের সেনা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের একজনকেও তাদের ইচ্ছার বাইরে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হবে না মর্মে রয়টার্সকে দেয়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এর সাক্ষাৎকারকে নিয়ে শরু হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে অবশ্যই স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ হতে হবে। তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে নিরাপদে। বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, বন্যা ও ভূমি ধসের ঝুঁকিতে থাকা এক লাখ রোহিঙ্গাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জুন মাসের আগেই সরিয়ে নেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়েছি। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের ১৪ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি বরাদ্দ করেছে বাংলাদেশ’। তাঁর মতে প্রতিদিন চারটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকার বন উজাড় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কারণে। কক্সবাজার সহকারী জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমানের মতে জ্বালানি কাঠের জন্য শরণার্থীরা ইতোমধ্যে ৫ হাজার একর বন কেটে ফেলেছে। তিনি বলেন, বন কাটার ফলে তাতে পাহাড়ের উপরিভাগের শক্তি কমে যায়। তাই ভারী বৃষ্টি হলে ধসের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা এমন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিবছর অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এই এলাকাটি বন্য হাতিরও আবাসস্থল। গত বছর ভারী বর্ষণে এই অঞ্চলে ভূমি ধসে ১৭০ জন নিহত হয়েছেন। বন উজাড় করাকেই এমন বিপর্যয়ের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। ২০১২ সালে ভূমি ধসে এখানে শতাধিক মানুষ মারা যায়। তারও দুইবছর আগে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত হন ৫০ জন ।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থিনিও গুতেরেস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মৌসুমী ঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গারা চরম ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছেন। তাদেরকে উচুঁ জায়গায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামতে বঙ্গোপসাগরের ঠেঙ্গার চরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়া হবে। সেখানে নৌবাহিনী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে। তবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান এর মতে এবছর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ