পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘদিনের মন্দায় কাটিয়ে আবাসন খাত কিছুটা গতিশীল হয়েছিল। বিক্রি বেড়েছিল ফ্ল্যাট ও প্লটের। উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছিলেন। কিন্তু গেল দুই-তিন মাসে নির্মাণ সামগ্রী রড, সিমেন্ট, পাথর ও ইটের দাম বাড়ায় ফের সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে আবাসন খাত। ফ্ল্যাটের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আবাসন ব্যবসায়ীরাও ইতোমধ্যে এই সঙ্কটের আশঙ্কা করেছেন।
এদিকে গৃহ ঋণে ব্যাংক সুদের হার দুই অংকের ঘরে উঠাও আবাসন খাতের জন্য অশনিসঙ্কেত মনে করছে খাত সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা এ খাতকে বাঁচাতে দ্রæত নির্মাণ সামগ্রীর দাম ও ব্যাংক সুদের হার কমানোর দাবি জানিয়েছে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত রোববার সচিবালয়ে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অবকাঠামো নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললেও এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, রডের দাম বড়ার সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক, পোর্টে জাহাজ আনলোড না হওয়া, পরিবহনে খরচ বেশি হওয়া এসব বিষয় জড়িত। তাই এসব সমস্যা সমাধানে আগামী ৬ থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীরাও থাকবেন বলেও জনান তিনি। সভায় তিনি হঠাৎ করে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন ইনকিলাবকে জানান, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে আবারও অস্থির অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে আবাসন খাত। নির্মাণ সামগ্রীর দাম এবং গৃহ ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাটের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষ করে জমির উচ্চমূল্য, সাইনিং মানির পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের উপর অধিক চাপ পড়বে। অনেকেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, গৃহ ঋণে ব্যাংক সুদের হার দুই অংকের ঘরে উঠায় ফের সঙ্কটে পড়তে পারে আবাসন খাত। এ খাতকে বাঁচাতে দ্রæত নির্মাণ সামগ্রীর দাম ও ব্যাংক সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, রড-সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি শুধু আবাসন খাতকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এর সঙ্গে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ব্যয়ও বাড়াবে, বাধাগ্রস্ত করবে উন্নয়নকাজকেও। একই সঙ্গে প্রকারভেদে রডের দাম টনে অন্তত ১৪ হাজার টাকা কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে অবিক্রিত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে বলেও উল্লেখ করেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, দাম বাড়ার পেছনে তিন-চারটি কারণ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম রডের কাঁচামাল (মেল্টিং স্ক্রাপট) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এ কাঁচামালের উপর ২৫শতাংশ কর বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরেও রডের দাম গড়ে ৫৫ হাজার ছিল। তখন কাঁচামালের আমদানি খরচ ছিল ৩০০ ডলার। এখন ৪৩০ ডলার। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। ব্যাংকে ডলার সঙ্কটে এলসি কমে গেছে। পাশাপাশি দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ ডাবল হয়েছে। মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ব্যাংক সুদের হার আগে ৮শতাংশ ছিল, এখন তা বেড়ে ১৩শতাংশ দাড়িয়েছে। এসব কারণে রডের দাম বেড়েছে। তাছাড়া সিজনাল কারণেও দাম কিছুটা বেড়েছে। এই সময় রডের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে, যে কারণে দাম কিছুটা বাড়ে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির তথ্যমতে, তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ২৪ হাজার টাকা আর সিমেন্টের দাম মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় বেড়েছে প্রায় ৬০ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে ইটের দাম। ইট প্রতি বেড়েছে ১ টাকা। যা ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মন্তব্য খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টদের আশংকা, এটি নির্মাণ শিল্প ও ব্যাংক খাতের জন্য যেমন হুমকি স্বরুপ তেমনি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সরকারি প্রকল্পের কাজেও।
নগরায়ণের সুবাদে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের ভবন নির্মাণ কার্যক্রম। পাশাপাশি প্রতি অর্থবছরেই বাড়ছে মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য ধরনের প্রকল্পের কাজও। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রী রড-সিমেন্টের ব্যবহার। তবে স¤প্রতি লাগামহীন বাড়ছে রড, সিমেন্ট এবং ইটের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল তিন মাসে রড- সিমেন্টের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে গত দশ বছরেও তা বাড়েনি। মূল কারণ হিসেবে পরিবহন খরচ, কাঁচামাল ও ডলারের দাম বৃদ্ধি, পণ্য খালাসে বিলম্ব এবং ব্যাংক সুদের হারকে দায়ী করছেন প্রস্তুতকারকরা। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি-এর তথ্যমতে, তিন মাসে রডের দাম প্রতি টনে প্রায় ২৪ হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৯ হাজার টাকায়। খুচরা পর্যায়ে যেটি ছাড়িয়ে গেছে ৭০ হাজার।
আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঁচটি কারণে কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের হিসেবে ৭ থেকে ৮ শতাংশের বেশি নয়; যেখানে ৭০ হাজার যে বাড়ানো হয়েছে। এটা অযৌক্তিক। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেনÑপুঁজি বেশি লাগছে। পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে যে লাভ করতে পারতাম এখন সেখানে ৬০ বা ৭০ হাজার টাকা লাগছে।
সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে, এক মাস আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ছিল ৫৯ থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ৫০ থেকে ৫১ হাজার টাকা। এখন ৬০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ৬৯ থেকে ৭২ হাজার টাকা। আর ৪০ গ্রেডের দাম ৫৭ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। তবে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন জানান, আজ (গতকাল) বাংলাদেশের বাজারে রডের দাম প্রতিটন ৬৮ হাজার টাকা।
দোকানীরা জানান, প্রথম জানুয়ারি রডের দাম বাড়ানো হয়েছিল ভ্যাটের উপর নির্ভর করে। তখন ৫ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ভ্যাটতো আগের মতোই সরকার নিচ্ছে। তারপরও রড ও সিমেন্টের দাম কেন বাড়ছে এই জবাব দিতে হচ্ছে ক্রেতাদেরকে।
এদিকে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের দামও প্রতি বস্তায় প্রায় ৬০ টাকা বেড়েছে। মাস খানেক আগেও প্রতি বস্তা সিমেন্ট ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেটির দাম ৪২০ টাকা। দাম বাড়ানোর কারণে বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মার্চ মাসের ২/৩ তারিখে প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৩৫০ টাকা, একই মাসের ৬ তারিখে ৩৬০ টাকা, ২০ মার্চ ৩৮৫ টাকা যা বর্তমানে চাওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা।
সেন্টু স্টিল হাউজের ম্যানেজার মো. রাসেল বলেন, এক মাস আগে যে রড ৪৭ টাকা কেজি বিক্রি করেছি সেই রড এখন ৫৭ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন দাম বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি একদিকে যেমন ব্যবসা ও ব্যাংক খাতের জন্য হুমকি অন্যদিকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নেও। তাদের মতে, কম্পানিগুলো দেওলিয়া হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলোও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের কাছে দাবি চলমান যে প্রকল্প আছে সেই প্রকল্পগুলোর যে নির্মাণ সামগ্রি (র-মেটেরিয়ালস-রড ও সিমেন্ট) আছে তা সহনীয় পর্যায়ে আনা। অথবা পিপিআর অনুযায়ী প্রাইস এ্যাডজাস্টমেন্ট ফ্যাক্টর চালু করা। এদিকে উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতিমধ্যেই ঠিকাদাররা বেশ কিছু নির্মাণ কর্মকান্ড স্থগিত করেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বাসি) সভাপতি মুনীর উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে রড, সিমেন্টের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে আমরা। তিনি অভিযোগ করেনÑকয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে রড, সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি করছে। এতে সারা দেশের নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে, এমনকি বন্ধ হয়েও গেছে। নির্মাণ খাত রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ চান তিনি। একই সঙ্গে সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন মুনীর উদ্দিন আহমেদ। এর আগে গত ২০ মার্চ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে রিহ্যাব।
পরিবহন খরচ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যানজটসহ বন্দর অব্যবস্থাপনায় কাজে গতি বাড়েনি। আগে যেখানে দু’দিনে একটি ট্রাক পণ্য নিয়ে ঢাকায় আসতো এখন তা ৩/৪দিন লাগছে। এছাড়া আগে ট্রাকগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করতো যা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। এসব কারণে ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। মো. রুস্তম আলী খান বলেন, পণ্য পরিবহনের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্রগ্রাম। প্রতিদিনই ৫০ কিলোমিটার এলাকা যানজটে আটকা থাকছে। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা। যে কারণে ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ট্রাক ভাড়া ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশও বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।