Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়তির ধারায় থাকায় গরিব ও মধবিত্তের নিরাপত্তার অন্যতম মাধ্যম সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কিছুটা নিম্নমুখী। গত ফেব্রুয়ারিতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রসহ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে নিট ঋণ এসেছে চার হাজার ১৫৬ কোটি টাকার বেশি। যেখানে গত জানুয়ারিতে ছিল পাঁচ হাজার ১৩৯ কোটি টাকারও বেশি। তবে সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার বাজেটীয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময়ে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৫৩ হাজার ৮৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৭১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। শুধু মুনাফা পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যা গোটা অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১০৯.৮৫ শতাংশ।
গত জানুয়ারির শেষ দিকে মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনায় অনেক ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে দুই থেকে তিন শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ায় আমানতের সুদহার। এতে কোনো কোনো ব্যাংকের আমানতের সুদহার ১১-১২ শতাংশে পৌঁছায়। তবে ওই মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কিছুটা কমে আসে।
গত ফেব্রæয়ারি মাসে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ আসে ছয় হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ফলে নিট ঋণ দাঁড়ায় চার হাজার ১৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর আগের মাস জানুয়ারিতে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে নিট ঋণ হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) চেয়ারম্যান প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, পরিসংখ্যান দেখলে এটাই মনে হয় যে ব্যাংকের সুদহারকে এখন অনেকেই একটু ভালো মনে করছে। যে কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্র থেকে ব্যাংকে বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে। তবে আগামী মাসগুলোর তথ্য যখন আসবে তখন হয়তো এটা আরো স্পষ্ট করে বোঝা যাবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে এ খাত থেকে নিট ঋণ হয়েছিল দুই হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। গত নভেম্বরে সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে তিন হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, অক্টোবরে চার হাজার ৬২০ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে তিন হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, আগস্টে তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা এবং অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা নিট ঋণ হয়েছিল সরকারের।
কয়েক বছর ধরে সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এ খাতের বিনিয়োগে কিছুটা ভাটার টান দেখা গেলেও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বিনিয়োগ আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে।
জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ৭৭৩ কোটি টাকা নিট ঋণ আসায় পরবর্তী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে উল্লম্ফন দেখা যায়। আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়তে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ হয়েছিল ২৮ ৭৭৩ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতের নিট ঋণ হয় ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে সরকারের নিট ঋণ হয়েছিল ৫২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। যা এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ঋণের রেকর্ড।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, আলোচ্য আট মাসে সঞ্চয় স্কিমগুলোর মধ্যে বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে। এ খাতে গত আট মাসে নিট ঋণ এসেছে ১১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, নিট ঋণ আট হাজার ৯০২ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ এসেছে দুই হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ এসেছে দুই হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। তা ছাড়া মেয়াদি হিসাে
ব জমাকৃত অর্থ রয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। ওয়েজ অর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে নিট ঋণ আছে এক হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে সরকারের ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়ার কথা রয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঞ্চয়পত্র

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ