পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুশির খবর। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আসীন বাংলাদেশ। এই সাফল্য দেশের নাগরিক হিসেবে গৌরবের। এই অর্জনে প্রান্তিক কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-রাজনীতিক- বিভিন্ন পেশাজীবী সবার অবদান রয়েছে। জাতিসংঘের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের পথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এখন মাথাপিছু আয়, সামাজিক উন্নয়নসহ কিছু সূচকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের এই অর্জনের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের পরের বছর ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ। ৪২ বছর পর ২০১৫ সালে এলডিসি দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থায়ী আসন ধরে রাখতে হলে বেশ কিছু সূচকের উন্নতি করা আবশ্যক। সেগুলো করতে সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ধনী-গরিব বৈষম্য, কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি, দক্ষ প্রশাসন বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য আবশ্যক। আমরা কী সে পথে হাঁটছি? আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিই হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’। বঙ্গবন্ধু এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন বলেই দিল্লিসহ সবার বাধা-আপত্তি উপেক্ষা করে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর দেখানো সেই পথে হাঁটছি বলে মনে হয় না। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকতে হলে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে হবে। এ জন্য যে সুচিন্তিত ক‚টনৈতিক প্রাজ্ঞতার প্রয়োজন সেটা কতটুকু করতে পারছি? গ্লোবালাইজেশনের যুগে সবার সঙ্গে সম্পর্ক অপরিহার্য। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক অবধারিত। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ‘আসন স্থায়ী’ করতে তাদের (পশ্চিমা দেশ) অনেক কিছু করার রয়েছে। এ জন্য দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সক্ষমতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিনিয়োগে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনের শাসন সুনিশ্চিত এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ অপরিহার্য। কিন্তু এসবের বদলে আমরা তো পররাষ্ট্রনীতিতে কার্যত দিল্লির দিকে ঝুঁকে গেছি।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ জন্য বছরটি বাংলাদেশের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। দেশের আগামীর কথা চিন্তা-ভাবনায় মনোযোগী হচ্ছি না। ভারতের স্বার্থে দিল্লি যা চাচ্ছে বা সামান্য চাপে আমরা অবলীলায় তাদের দিয়ে দিচ্ছি। কখনো কখনো তোয়াজনীতি গ্রহণ করছি। চীনকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদারিত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তের পরও ভারতের বাধার কারণে কী কান্ডই না হলো! দিল্লিকে খুশি রাখতে গিয়ে আমরা যেন নিজের সার্বভৌমত্ব, স্বকীয়তা, নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছি না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমানের রাশিয়া আমাদের পুরনো বন্ধু। পাবনার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ তাদের সহায়তায় হচ্ছে। এটা করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং কিছু শর্ত পূরণ করা হয়। অথচ দক্ষ জনবল তৈরির অজুহাতে হঠাৎ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ভারতের সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। এ জন্য ভারতের সঙ্গে একটি সম্পূরক চুক্তিও করা হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হঠাৎ করে ভারতের উপস্থিতি বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া কী ভালোভাবে নেবে? চীনের প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং বলেছেন ‘চীন চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় কৌশলগত সমঝোতা’। ইতোমধ্যেই দেশটি বুনিয়াদি অর্থনীতির সুযোগে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক পরাশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকা এখনো দিল্লির ‘দৃষ্টি’ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়াকে দেখতে চাচ্ছে। বাংলাদেশকে দিল্লির মুখাপেক্ষী করে রেখে চীনকে চাপে রাখতে চাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিল্লিকে ‘ভায়া-মিডিয়া’ মানতে হবে? আমাদের কি নিজস্ব সক্ষমতা নেই? ভারত কোন দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে? দিল্লির চোখে আমেরিকার বাংলাদেশ দর্শন মানতে হবে কেন?
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালেই চীন বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হয়ে যাবে। দেশটি আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। কাজের অগ্রগতিও হচ্ছে। সেখানে রয়েছে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। এ ছাড়াও পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্প, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্পে রয়েছে চীনের বিনিয়োগ। শুধু কী বাংলাদেশ! বিশ্বের কোন দেশে নেই চীনের বিনিয়োগ? চীনের অর্থনীতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, বিশ্বের কোনো দেশই এখন দেশটিকে উপেক্ষা করতে পারছে না। দেশটির হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ এত বেশি এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্যের জাল এত বিস্তৃত যে, চীনকে দূরে ঠেলে দেয়া দুরূহ। এমনকি আমেরিকা-চীনের একে অন্য দেশের পণ্য প্রবেশে অধিক করারোপের ঘোষণা দিলেও আমেরিকা রেলওয়ে অবকাঠামো সচল রাখতে চীনের শরণাপন্ন। কারণ সেখানে চীনের ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ যেমন আছে; পাশাপাশি কারিগরি, প্রযুক্তি, দক্ষ জনবলও তাদের ব্যাপক। প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অনেক দেশে চীন অস্ত্র সরবরাহ করছে। প্রতিযোগিতার এই বিশ্ববাজারে চীন এখন বহু দেশের সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগ অস্ত্রের যোগানদাতা। বাংলাদেশের উন্নয়নে যেভাবে বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে সভাবেই সামরিক শক্তি বৃৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। নতুন নতুন ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় সেগুলোতে অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ছে। চীন ক্রমান্বয়ে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয় অস্ত্রের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। চীনের টাকায় অনেক দেশ সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পাকিস্তান অনেক আগ থেকেই চীনের পরীক্ষিত বন্ধু। ওই দুই দেশের মধ্যে আস্থা এবং একে অপরের প্রতি নির্ভরতা ঐতিহাসিক। সে সুবাদে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আরো গাঢ় হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি। মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্কই ছিল না। শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের গভীরতা ছিল কম। কিন্তু ওই সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাজনীতিকরা আগামী দিনে বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা অনুধাবন করে নিজ নিজ দেশে চীনের বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতারা নিজেদের প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন-তুলেছেন। চীনও তাদের হতাশ করেনি। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকান্ডের চীনের এখন বিপুল বিনিয়োগ। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল দেশগুলোর অর্থনীতি চীনের সহায়তায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সম্পর্ক ও উন্নয়নের ধারা এভাবে চললে আগামী ১০ বছরে তারা অনেক ওপরে চলে যাবে। অথচ অধিক সুযোগ থাকা সত্তে¡ও আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি; লাগানোর চেষ্টা করিনি। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে চীন থেকে অস্ত্র কিনছি। আমাদের সামরিক বাহিনীকে এখনো অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন কিনেছি ৪টি। গত বছর দু’টি সাবমেরিন এসেছে। আমাদের বর্ধিত সমুদ্রসীমার নিরাপত্তার জন্য এই সাবমেরিন ক্রয় ছিল অপরিহার্য, যা আমাদের নৌবাহিনীকে করেছে আরো শক্তিশালী এবং আধুনিক। পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ায় কয়েকটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চীনের উপস্থিতি প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে গেছে। ফলে চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও তৈরী পোশাক শিল্প। আমাদের পোশাকের বড় বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। প্রায় ১০ বছর ধরে আমেরিকায় জিএসপি সুবিধা স্থগিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে বিদেশী বিনিয়োগও কমে গেছে। এতদিন প্রচারণা ছিল হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনূসের বন্ধুত্বের জন্যই প্রভাব খাটিয়ে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের ‘জিএসপি’ সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। হিলারির প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। প্রচারণা ছিল ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করার পর পুরনো মার্কিন নীতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাবে এবং বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেবে। বাস্তবতা বাংলাদেশের ব্যাপারে আমেরিকার নীতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, পরমতসহিষ্ণুতা, পরিবেশ, সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদির প্রতি বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বিশ্ব রাজনীতিতে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রিটেন, কানাডা, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কার্যত আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি কৌশলকে অনুসরণ করে থাকে। কাজেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার নীতির বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যাবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশ। এ জন্য আরব দেশগুলোর প্রতি মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কথা। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তেমন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি না। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধ কোটি জনশক্তি উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ করছে। আমাদের এই জনসম্পদ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। বর্তমানে হয়তো ওই মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বৈরিতা নেই। কিন্তু নীতি ও কৌশলের কারণে ওই সব দেশের সঙ্গে মুসলিম দেশ হিসেবে আমরা গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়তে পারিনি। যার জন্য মুসলিম দেশ হিসেবে বাড়তি সুবিধা দূরের কথা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের শ্রমিকরা নানাভাবে বিপদের মুখে পড়ছে। মাঝে মাঝে আমাদের দেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দিচ্ছে। মালয়েশিয়ায় আমাদের প্রায় ৫ লাখ জনশক্তি কাজ করছে। মুসলিম দেশ হিসেবে সেখানেও বাড়তি কোনো সুবিধা আদায় করতে পারিনি।
ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ভারতের প্রয়োজনে ট্রানজিট সুবিধা, সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ, রেল যোগাযোগ চালু, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগসহ দিল্লি যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি, দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কিছুই পাচ্ছি না। ৩০ বছরের ফারাক্কা চুক্তি হয়েছে পানি পাচ্ছি না। ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি দূরের কথা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী (মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদি) এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমত হলেও পানিচুক্তি হচ্ছে না। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে চলতি বছর ভোটের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তিনি যদি বাংলাদেশে আসেন তাহলে আবার আগের মতোই অনৈতিক সুবিধা দাবি করবেন। কারণ ভারত শুধু নিতে জানে, দিতে জানে না। মোদি হয়তো চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃত্ব আরো বাড়ানো এবং মংলা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ চাইবেন। ট্রানজিট ব্যবহারে ছোটখাটো বাধা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চাপ দেবেন। ভারত চাপ দিলেই তো আমরা সব কিছু বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে দিয়ে দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু নিজ দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতকে এভাবে সুবিধা দেয়া উচিত নয়। এটা যেমন ক্ষমতাসীনদের ভাবতে হবে; তেমনি মাঠে যারা রাজনীতি করছেন এবং আগামী দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদেরও ভাবতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা চীনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতা এবং ভারত তোষণনীতিতে ব্যস্ত থাকছি; অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন বাণিজ্যিকভাবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে ফেলেছে। নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তানে অর্থনীতি, শিল্পনীতি, যোগাযোগে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। অথচ উন্নয়ন সহযোগী দেশ বাংলাদেশে তারা যে প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছে সেগুলোতে অর্থ দেয়া কার্যত স্থগিত করে দিয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পে ধীরগতিতে অর্থ ছাড় করছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত বিরোধিতা করলেও চীন তাদের থোরাই কেয়ার করছে। এখানে যে বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য তা হলো বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে চীন ও ভারতের মধ্যে কার অবস্থান কোন পর্যায়ে সেটা সহজেই অনুমেয়। চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান শীর্ষে নেয়ার প্রতিযোগিতা করছে। তারা চায় আমেরিকাকে টপকিয়ে বিশ্বের সেরা হতে। আর ভারতের স্বপ্ন দক্ষিণ এশিয়ায় মোড়লি করা। এ জন্য ভারত লড়াই করছে চীনের বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হলো ভারতকে প্রতিদ্বন্দ্বীই ভাবছে না চীন। প্রতি বছর ভারতের যে পরিমাণ মানুষ চীনে যায়; তার দশ ভাগের এক ভাগ চীনা নাগরিক ভারতে আসেন না। আবার ভারতের মিডিয়াগুলো চীনকে নিয়ে এবং চীনের বিরুদ্ধে যেভাবে খবর-নিউজ প্রচারে গুরুত্ব দেয়; চীনের মিডিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় তার বিপরীত চিত্র। চীনের মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা ভারত নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনবোধই করেন না। তা ছাড়া চীনের সঙ্গে টক্কর দিতে যে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় মোড়লি করতে চায়; যে ভারতের চোখে আমেরিকা দেখতে চায় বাংলাদেশকে; সেই ভারত কোন সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে ছিল? বরং অনেক সূচকে বাংলাদেশ তাদের চেয়ে এগিয়ে।
এখানে আরো একটি চিত্র তুলে ধরতে চাই। চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষে যাওয়ার লক্ষ্যেই ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য এবং ২৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ব্রিকস গঠন ও তাতে চীন ও ব্রাজিলের অবস্থান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য আরো অনুকূল শর্ত তৈরি করেছে। গত দুই দশকে ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশই মার্কিন আধিপত্যের বিপরীতে চীনকে সহযোগী হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করছে; কেউ কেউ ইতোমধ্যেই পথ বেছে নিয়েছে। ওই দেশগুলো মার্কিন সাম্প্রাজ্যবাদী আধিপত্য থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ অনুসন্ধান চীনের বিনিয়োগের জন্য বাড়তি ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। কাজেই চীন তো ভারতকে প্রতিদ্ব›দ্বীই মনে করছে না।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে গেছে। এই অর্জন ধরে রাখতে যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন; তা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রæতা নয়’ নীতি অনুসরণ অপরিহার্য। এ জন্য পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে কূটনীতিকদের কর্মতৎপরতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মুন্সিয়ানা অপরিহার্য। বিদেশে কূটনীতিকদের দেশের (বাংলাদেশ) প্রতিনিধিত্ব করতে হয় সে জন্য মেধাবী ও দক্ষতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয়া উচিত। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সাবেক ঝানু কূটনীতিক ও দক্ষ প্রশাসক। তার বিচক্ষণতা ও মেধা প্রশংসনীয়। বিগত কয়েক বছরে কূটনৈতিকভাবে দেশের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব না করেও বলা যায় দেশে অনেক সাবেক ঝানু কূটনীতিক রয়েছেন। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিদেশে তারা দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। ওই মেধাবীর প্রবীণরা বর্তমানে অবসরে আছেন। মেধা-প্রজ্ঞা দিয়ে তারা সুনাম কুড়িয়েছেন, দেশকে বিশ্ব দরকারে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতি কার্যকরে প্রয়োজনে অবসরে থাকা ওই প্রবীণ সাবেক কূটনীতিকদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। তারা দেশের স্বার্থে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ রক্ষার ফর্মুলা বের করে কৌশল ঠিক করতে পারেন। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে থাকতে হলে কাউকে বাদ দিয়ে আবার কাউকে আঁকড়ে ধরে একচোখা পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বর্জন অপরিহার্য। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রীদের মনে রাখতে হবে সক্ষমতা অর্জন নিজেকেই করতে হবে। কেউ কাউকে উন্নত দেশ করে দেবে না; এমনকি বিদেশীরা এখন আর বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার এবং জনগণের মনন বোঝার যোগ্যতা নিজেদের অর্জন করতে হবে। হিন্দুত্ববাদী নীতির কারণে ভারত অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত। দেশটি কখনোই নিজের স্বার্থের বাইরে কোনো কিছু করেনি; প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখায়নি; এমনকি প্রতিবেশীদের বন্ধুত্বের মর্যাদাও দিতে জানে না। যার জন্য বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশ ভারত থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে গেছে। তারা নিজেদের প্রয়োজনে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কেবল আমরাই দিল্লির চানক্য নীতিকে উপেক্ষা করতে পারছি না। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তবতায় চীনকে উপেক্ষা করা কী বুদ্ধিমানের কাজ? গোটা বিশ্বের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে চীন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে; তাতে ওই দেশটিকে উপেক্ষা করে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতারাও যেখানে শিং জিনপিংকে সমীহ করছেন; চীনের বিনিয়োগ উপেক্ষা করতে পারছেন না; সেখানে আমাদের রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা কী করবেন সেটাই দেখার বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।