পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : সিডর, আইলা ও মহাসেন-এর মত ভয়াল প্রাকৃতিক দূর্যোগে দেশের প্রাণিজ খাতের ব্যাপক ক্ষতির পরেও দেশের প্রাণীসম্পদ এগিয়ে চলেছে। ‘মাছে ভাতে বাঙালী’র আমিষের চাহিদা পূরণ করতে দেশ প্রথমবারের মত গোশত উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তবে ডিম ও দুধ উৎপাদনে এখনো কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে দেশ। পোল্ট্রি খাবার ও পশুখাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ চাহিদানুযায়ী যোগান বাড়লে খুব শীঘ্রই দেশ ডিম-দুধ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। এমনকি বিগত দুটি ঈদ উল আজহায় দেশীয় গবাদি পশুর সাহায্যেই চাহিদা সম্পূর্ণ মেটান সম্ভব হয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর দাবি করেছে। ২০০৭-এর সিডর এবং পরবর্তীতে আইলা ও মহাসেন-এর মত প্রাকৃতিক দূর্যোগে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলভাগে প্রাণীসম্পদ খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা।
‘জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থ-ফাও’-এর হিসেব অনুযায়ী একজন মানুষের দৈনিক ১২০ গ্রাম গোশত খাওয়া উচিত। কিন্তু গত অর্থ বছরে দেশে গোশতের উৎপাদন ছিল মাথাপিছু ১২১.৭৪ গ্রাম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত গোশত উৎপাদন হয়েছে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টন বলে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সে অনুযায়ী দেশে গত বছর গোশতের চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা উদ্ধৃতও ছিল। গত দশ বছরে দেশে গোশতের উৎপাদন ১০.৪০ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৭১.৫৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।
তবে এখনো দেশে দুধ ও ডিম উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন প্রায় চারগুণ ও ডিমের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধির পরেও এ খাতে যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতেই অতিক্রম করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরসহ মন্ত্রণালয়ও। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে দুধের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত অর্থবছরে ৯২ লাখ ৮৩ হাজার টনে উন্নীত হলেও ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টনের মত। আন্তর্জাতিক হিসেব অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ গ্রহণ প্রয়োজন। সে হিসেবে দেশে বর্তমানে দুধের চাহিদা ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টন। অপরদিকে বছরে মাথাপিছু ১০৪টি হিসেবে বছরে দেশে ডিমের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৬৯৪ কোটি ১৬ লাখ। কিন্তু গত অর্থবছরে দেশে মোট ডিমের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ৩১ লাখের মত। ফলে দেশে ডিমের ঘাটতি ছিল ২শ’ কোটিরও বেশী।
তবে দুধের চেয়ে দ্রæততর সময়ের মধ্যে ডিমের চাহিদা মেটান সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন একাধিক দায়িত্বশীল মহল। সে ক্ষেত্রে উন্নতজাতের বাচ্চা আমদানী উৎসাহিত করা সহ পোল্ট্রি ফিড ও এর কাঁচামাল এবং সবধরনের উপকরনের ওপর কর রহিত করে এর দাম খামারীদের নাগালের মধ্যে আনতে পারলে এ খাত আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। এ দাবি একাধিক খামার মালিকদের। এমনকি পোল্ট্রি খামারগুলোর জন্য কর অবকাশ সুবিধা অব্যাহত রাখা সহ এ শিল্পে বাণিজ্যিক হারের পরিবর্তে কিছুটা কম দরে বিদ্যুৎ সরবারহেরও সুপারিশ রয়েছে।
তবে প্রাণীসম্পদ খাতের উন্নয়ন জোরদারসহ তার বর্তমান ধারা টেকসই করার পাশাপাশি আরো উন্নয়নে এখাতের জন্য ‘নিবিড় কার্যক্রম’ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল। একাধিক সূত্রের মতে, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর করার পাশাপাশি কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের মত প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘প্রাণীসম্পদ কর্মী’ নিয়োগ সহ সেবা কার্যক্রম স¤প্রসারণ করতে হবে। অথচ বর্তমানে দেশের বেশীরভাগ উপজেলা পর্যায়েও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারী সার্জন পর্যন্ত নেই। শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের ৫৪২টি পদের মধ্যে এখন সাড়ে ৩শ’ পদই শূন্য বলে জানা গেছে। বিভাগের ৬টি জেলার ১টিতে জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তাসহ ৪২টি উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার ২৩টি শূন্য। এমনকি ১৮টি উপজেলাতে কোন ভেটেরিনারী সার্জন পর্যন্ত নেই। ৪২টি উপজেলার লাইভস্টক এসিস্টেন্ট পদে আছেন মাত্র ৩ জন। অনুরূপভাবে বরিশাল বিভাগের বেশীরভাগ জেলা উপজেলাতে ফিল্ড এসিস্টেন্ট, ভেটেরিনারী ফিল্ড এসিস্টেন্ট ও কম্পাউন্ডারের মত গুরত্বপূর্ণ পদগুলোর সিংহভাগই শূন্য পড়ে আছে মাসের পর মাস ধরে।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের জনবল সঙ্কট বর্তমানে দেশের পশুসম্পদ স¤প্রসারণে একটি অন্যতম প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল মহলও। এমনকি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ উৎপাদন খাতটির জন্য জনবল মঞ্জুরী চাহিদার তুলনায় যথেষ্ঠ কম হলেও সারা দেশেই সেসব পদেরও ২৫-৩০ ভাগ পর্যন্ত শূন্য পড়ে আছে বছরের পর বছর। নতুন নিয়োগ না থাকায় প্রতনিয়ত অবসরে যাওয়া কমকর্তা-কর্মচারীদের শূন্য পদগুলোও সহসা পূরণ হচ্ছেনা। ফলে সঙ্কট ক্রমশ জটিল হচ্ছে। অথচ জিডিপি’তে প্রাণীসম্পদ খাতের অবদান ১.৬০ ভাগ। যা কৃষিখাতের ১৪.৩১%। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৩২ ভাগ। এমনকি প্রাণীসম্পদ খাতে সরাসরি ২০ ভাগ জনশক্তির কর্মসংস্থান হচ্ছে। পরোক্ষভাবে যা প্রায় ৫০ ভাগ। এখনো কৃষিকাজে ৫০ ভাগ ও জ্বালানী কাজে ২০ ভাগ প্রাণীসম্পদ খাতের অবদান রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মতে, দেশে বর্তমানে মোট প্রাণী সম্পদ রয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি ৪০ লাখের মত। যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ, মহিষ ১৪ লাখ ৭৮ হাজার, ভেড়া ৩৪ লাখ ও প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখের মত ছাগলসহ দেশে মোট গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পোল্ট্রি ও দেশীয় সনাতন পদ্ধতিতে পালিত মুরগীর সংখ্যাও ২৭ কোটি ৫২ লাখ, হাঁস ৫ কোটি ৪০ লাখ মিলে পোল্ট্রি শিল্পে মোট প্রাণীজ সংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মতে দেশের জিডিপিতে মোট প্রাণিজ সম্পদের বর্তমান সর্বনিম্ন বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার মত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।