Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামপুরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে যমুনার তীরে বাধঁ নির্মাণ জরুরি

ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জামালপুরের ইসলামপুর যমুনার পূর্বতীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে দীর্ঘদিন পানিবন্দি থেকে জীবনধারণ করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ওই লক্ষাধিক মানুষকে বন্যার পানিবন্দি দশা থেকে বাঁচানোর বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, অকাল বন্যার পানি থেকে বাঁচার রক্ষা কবজ হরিণধার বাঁধটি ভাঙনে বিলিন হওয়ায় ইসলামপুরে বর্তমানে যমুনার পূর্বতীরে কোন প্রকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যমুনা নদী থেকে বাঁধাহীন ভাবে নেমে আসা পানির নিচে অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় উপজেলার সদর ইউনিয়ন, পাথর্শী, কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুুলি ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন সমুহের নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার একর ফসলি জমি। আবার যমুনা নদীতে বন্যার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করতেই ওই ৬টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ওই সময় পানিবন্দিদের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানি ও রান্নাকরা খাদ্যের তীব্র সঙ্কটসহ গো-খাদ্যেরও অভাব দেখা দেয়।
অপরদিকে,বন্যার সময় পানিবন্দি অনেক শিশুদের পানিতে ডুবে মরার ঘটনা ঘটে। অনেকের মাঝেই পানিতে ডুবে মরার আতঙ্ক বিরাজ করে। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগের পাদুর্ভাব ঘটে। বন্যার পানির সাথে নদীর বালি উঠে এসে প্রতিবছরই যমুনা তীরবর্তী এলাকার শতশত একর ফসলি জমি বালি পড়ে অনাবাদী হয়ে যায়। এছাড়াও বন্যার কারণে প্রতিবছরই যমুনা তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের অধিকাংশ পাকা ও কাঁচা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্যায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যমুনার পূর্বতীরে উঁচু বাঁধ না থাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ওইসব রাস্তাঘাট ও লন্ডভন্ড বাড়িঘর মেরামত করতে না করতেই আবারও বন্যা এসে পূর্বের অবস্থা দেখা দেয়। এতে যমুনা তীরের মানুষগুলোর দুর্ভোগ যেন লেগেই থাকে। এ ব্যাপারে নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা জানান, উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ থেকে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাঠমা পর্যন্ত এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রতিবছর বন্যা মৌসুমে বাঁধাহীন ভাবে যমুনার পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম জানান, যমুনার পূর্বতীরে একটি উঁচু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে পারলে চিনাডুলি ইউনিয়নসহ ইসলামপুর ও মেলান্দহের দুই লক্ষাধিক মানুষকে বন্যার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করা পাবে। বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, যমুনার পূর্বতীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় বিগত বছরগুলোর মতো আগামী বর্ষা মৌসুমেও প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবুল জানান,বন্যা মৌসুমের পানিবন্দি দশা থেকে রক্ষার পেতে পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ থেকে কুলককান্দি, বেলগাছা ও চিনাডুলি হয়ে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাঠমা পর্যন্ত যমুনা নদীর পূর্বতীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ জুরুরী। এ ব্যাপারে জামালপুরের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ জানান, বন্যা কবলিত ইসলামপুর বাসীকে বাচাঁতে যমুনা পর্বতীর বাধঁটি নির্মাণ স্থানীয় ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে এ বাধঁ সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলাল জানান,বন্যা মৌসুমে ইসলামপুর উপজেলাবাসীকে পানিবন্দি দশা থেকে রক্ষার জন্য যমুনার পূর্বতীরে একটি উঁচু ও প্রশস্থ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
তাই ইতিমধ্যেই পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ থেকে কুলকান্দি পাইলিং ঘাট এলাকায় যমুনার পূর্বতীরে একটি বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সরকারী অর্থ বরাদ্ধ পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ থেকে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাঠমা পর্যন্ত ২০কিলোমিটার এলাকায় একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলি নব কুমার চৌধুরী জানান, জামালপুরবাসীকে প্রতিবছর বন্যার পানিবন্দি দশা থেকে রক্ষার্থে পরীক্ষামূলক ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে ইসলামপুরের পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ থেকে কুলকান্দি পাইলিং ঘাট পর্যন্ত এলাকায় স্থানীয় এমপির বরাদ্দকৃত অর্থায়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষামুলক একটি বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ সাপেক্ষে যমুনার পূর্বতীরে ৯০কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ভোগ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ