Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে উন্নয়নে গতি

প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:৫৬ পিএম, ২৭ মার্চ, ২০১৮

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দুনিয়াজুড়ে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে গ্রহণ করেছে। মানব উন্নয়ন সূচকের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীলের দেশের পথেও যাত্রা করেছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেজা দ্রæত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বেজা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের জন্য বেজা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জিত হতে যাচ্ছে। বেজা ইতোমধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রি-কোয়ালিফিকেশন পত্র ও ৬টি ইকোনমিক জোনের অনুকূলে লাইসেন্স প্রদান করেছে এবং এর মধ্যে মেঘনা গ্রæপের অনুকূলে ২টি লাইসেন্স ও ১টি প্রি-কোয়ালিফিকেশন পত্র ইস্যু করেছে। কৃষি থেকে ক্রমেই শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক সময় কৃষিতে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেশি থাকলেও এখন তা শিল্পে বাড়ছে। জানা গেছে, দেশব্যাপী ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হলে শিল্পায়নে ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের খরা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশব্যাপী পরিকল্পিতভাবে চীন, জাপান, ভারত ও মালয়েশিয়াসহ বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা আলাদা শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের দুর্ভোগ লাঘবেও নেয়া হচ্ছে উদ্যোগ। একই ছাদের নিচে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের সেবা নিশ্চিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইকোনমিক জোনের কাজ। সরকারি ও বেসরকারি খাতে এখন ২৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। বেসরকারি খাতে কাজ চলছে ১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের। অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নিজস্ব ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। সরকারি খাতে ৩০ হাজার একরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোন (ইজেড)। এর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ এত বেশি যে, এখন সেখানে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে এরই মধ্যে অনুমোদন পাওয়া বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মিরসরাই একসময় বাংলাদেশের বিনিয়োগ রাজধানী হিসেবে পরিচিত হবে বলে মনে করছেন, বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে। দেশের অন্যতম ইকোনমিক জোন হিসেবে ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে মেঘনা গ্রæপ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মেঘনা গ্রæপের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে প্রায় ১০০ একর জমিতে একটি ইস্পাতের ভবন তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে তৈরি করা হচ্ছে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল। এ ছাড়া এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও কয়েকটি কারখানা নির্মাণের কাজ চলছে।
মেঘনা নদীর তীরে ২৪৫ একর জমিতে মেঘনা গ্রæপের আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ। এটির নাম মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল। মেঘনা গ্রæপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মেঘনা গ্রæপ কাগজ ও টিস্যুর মিল, ভোজ্যতেল পরিশোধনাগার, আটার মিল, বিদ্যুকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কারখানা করেছে।লাইসেন্স প্রাপ্তির পর মেঘনা গ্রæপের সহযোগী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ করেছে। ইতোমধ্যে ৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুনঃউদ্যমে উৎপাদন শুরু হলে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
মেঘনা ইকোনমিক জোনে আরও ৩টি শিল্প, পিভিসি রেজিন, সীডস ক্রাশিং,সুগার রিফাইনারী প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। জোনটিতে নৌ পথে বহনকারী মালামাল সহজে লোডিং ও আনলোডিং করার লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মেঘনা ইকোনমিক জোনে ৮২২ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ জোনের উৎপাদিত পণ্য ভারত, নেপাল, ভূটান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানীর আশাবাদ প্রতিষ্ঠানের।
বেসরকারি ইকোনমিক জোনগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, হংকং, জাপান, চীন এবং ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
মেঘনা ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে মোটর সাইকেল সংযুক্তিকরণ শিল্প, ডেনিম, গার্মেন্টস এ্যাকসেসরিস, টেক্সটাইল, ফুটওয়্যার, পেইন্ট ও কেমিক্যাল, ব্যাটারী, ওষুধ, পটেটো চিপস, এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস, এলপিজি বটলিং, প্লাস্টিক কারখানা, প্রিন্টিং রোলিং ইত্যাদি শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগকারীদের পক্ষ হতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে ১০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রত্তর স্থাপণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বিশ্বাস দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকার ঘোষিত বিনিয়োগ প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণ করে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ