পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে ভাটিয়ালী, পল্লীগীতি গান এখন আর আগের মত শুনা যায়না। পাল তোলা নৌকা কিংবা দার বেয়ে চলা নৌকার দৃশ্যও দেখা যায় না। মাইক বাজিয়ে নৌ পথে বধূ নিতেও দেখা যায় না। শুনা যায় না নদীর ছল ছল শব্দ। মাঝিরা মনের আনন্দে গান ধরে পাল তুলে নিজ গন্তব্যে ছুটে চলতেও দেখা যায় না। মালামাল পরিবহনের নৌযানও এখন আর আগের মত নদীতে দেখা যায় না। এককালে এ অঞ্চলের একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল নদী পথ। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। এক সময়ের খর¯্রােতা নদীগুলো হারিয়েছে তার যৌবনারুপ। হারিয়েছে তার গর্জন। হারিয়েছে তার গতি পথ। এখন নদীগুলোর দিকে কেউ থাকায়ও না। দ্‘ুএকটি নদী ছাড়া সুনামগঞ্জের অধিকাংশ নদী নাব্য হারিয়ে এখন অস্থিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। অনেক নদী খালের রুপ ধারন করে কালের সাক্ষী হয়ে আছে। কালের বিবর্তনে মাটি ভরাট কিংবা ভারতের পাহাড়ী বালি আগ্রাসনের প্রভাবে নদীগুলো তার যৌবন হারাতে বসেছে। এ জেলার কয়েকটি নদীর উৎপত্তি স্থল ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে। এই পাহাড়ী নদীগুলো দিয়ে পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানির ঢলের সাথে বালি, কঙ্কর, পাথর কিংবা পলিমাটি বয়ে আসে। তাতে নদীগুলো ভরাট হওয়ার পাশাপশি এ অঞ্চলের হাওরগুলোও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীর নাব্য হ্রাস পেয়ে গতিপথ বিলীন হতে চলেছে। পাহাড়ী ঢলের সাথে আসা বালিতে নদীর তল দেশ ভরাট হয়ে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হতে চলছে। নদী পথের নিজস্ব গতি হারিয়ে ফেলায় ভাটির জনপদের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাও দুর্গম হয়ে পড়েছে। এ জেলার ভাটি এলাকার মানুষ ‘না পারছে নায়ে, না পারছে পায়ে‘ যাতায়াত করতে। ভারতের পাহাড় থেকে অন্তত ৫ টি নদী দিয়ে সরাসরি ঢলের সাথে বালি ও কঙ্করযুক্ত মাটি আসায় এ সকল নদীসহ অন্যন্য নদীগুলোর উপর এ প্রভাব পড়েছে। পাহাড়ী নদীগুলো হচ্ছে চিলাই, খাসিয়ামারা, চলতি নদী, যাদুকাটা ও রক্তি। এ নদীগুলো ছাড়াও সীমান্তবর্তী পাহাড়ারের সাথে সংযুক্ত রয়েছে বেশ কয়েকটি ছড়া। এ সকল ছড়া বিভিন্ন নদীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে। পাহাড়ী এ সকল ছড়া দিয়ে ঢলের সাথে বালি, কঙ্কর বয়ে আসে। বয়ে আসা এ সকল বালি, কঙ্কর বিভিন্ন নদী ও হাওরে গিয়ে পড়ে। পাহাড়ী ছড়া দিয়ে ঢল ছুটলে সীমান্তবর্তী এ দেশের মানুষের ঘর বাড়িতে আঘাত হানে। ভারতীয় পাহাড়ী ছড়া দিয়ে বয়ে আসা পাহাড়ী বালি কিংবা কঙ্করে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ আশেপাশের মানুষের ঘর বাড়ির অস্থিত্ব বিলীন হতে চলেছে। মানুষের ঘরবাড়ির পাশাপাশি জমিজিরাতও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ী বালি আগ্রাসনের প্রভাব পড়েছে জেলার উল্লেখযোগ্য সব কয়টি নদীতেই। ি বশেষ করে সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, বৌলাই, কংস, মহাসিং, যাদুকাটা, রক্তি, খাসিয়ামারা, পাটনাই, চলতি, পিয়াইন, সোমেশ্বরী, কাটাগাং, ঘাসি, মোনাই, কামারখাল, ডাউকা, বিবিয়ানা, রুপসাসহ প্রায় সব কয়টি নদীতে ভারতের পাহাড়ী বালির প্রভাব পড়েছে। এক সময়ের খর¯্রােতা পুরাতন সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, কংস, মহাসিং, বৌলাই নদী এখন খালের রুপ ধারণ করে অস্থিত্ব হারাতে বসেছে। এ জেলার বড় নদীগুলোর শাখা প্রশাখাও এখন আগের অবস্থানে নেই। দোয়ারা বাজারের খাসিয়ামারা নদীর বিভিন্ন স্থান ভারাট হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠছে। দোয়ারাবাজার সংলগ্ন নদীরপাড় ভরাট হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ দোকানপাট গড়ে তুলেছেন। ৯০ দশকের আগে কালনী নদীর জৌলুস বয়স্করা অনেকেই দেখেছেন । এ নদী দিয়ে লঞ্চ, কার্গো, বড় বড় নৌকাসহ ছেটবড় সকল নৌযান চলাচল করতো। দিরাই, শাল্লা, আজমীরীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের মানুষ এই নদী পথে যাতায়াত করতো। দিরাই-শাল্লাাসহ আজমীরীগঞ্জ এলাকার মানুষের একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল এই নদী পথ। এই নদীপথের জয়কলস গ্রামে ছিল লঞ্চ ঘাট। এই ঘাটের জেটি থেকে বিভিন্ন স্থানের মানুষ লঞ্চে গন্তব্যে পৌছতেন। এ নদীটি ৯০ এর দশকের পর নাব্য সঙ্কটে পড়ে। এখন এই নদীতে কোন ¯্রােত নেই, লঞ্চ, কার্গো কিংবা কোন নৌযান চলাচল করতে দেখা যায় না। ধীরে ধীরে হয়তো একদিন এ নদীটির অস্থিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এই নদীটি এখন মরা খালের রুপ ধারন করে আছে। পুরাতন সুরমা, কুশিয়ারা ও মহাসিং নদীর অবস্থাও অনুরুপ। পুরাতন সুরমা নদী দিয়ে শাল্লা, আজমীরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ইটনা ও নেত্রেকোনার খালিয়াজুরী পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল। কালনী নদীর অস্থিত্বকে মানুষের মনে ধরে রাখার জন্য ‘কালনী‘ নামে সিলেট-ঢাকা একটি আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস চালু আছে। সেটি এখনও সিলেট- ঢাকা রেল পথে চলাচল করছে। ভারতের পাহাড়ী বালি আগ্রাসনে নদ- নদীর অস্থিত্ব সঙ্কটের পাশাপাশি এ জেলার বোরো ফসলী হাওরগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। আস্তে আস্তে হাওর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও জলাশয়গুলো অস্থিত্ব সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। হাওরে মাছ কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। হাওরে মাছের অভয়ারণ্য বিলুপ্ত হতে চলেছে। সূত্র মতে ১৯৮৯-৯০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০ টি নদী পুনঃখনন এবং বালি ও পলিমাটি অপসারণের লক্ষে একটি প্রস্তাবনা উর্ধ্বতন মহলে পাঠালে সেটি ফাইলবন্দী হয়ে থাকে। তার আগে এই কার্যালয় থেকে কুশিয়ারা ও কালনী নদী খনন প্রকল্প নামে ৩ শত কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা পাঠালে সেটিও ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুবকর সিদ্দিক ভুইয়া ইনকিলাবকে জানান নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ জেলার গুরুত্বপুর্ণ ৪ টি নদী খনন কাজ চলছে। এর মধ্যে রক্তি নদী ১৭ কোটি ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬ কিলোমিটার, আপার বৌলাই ৩০ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার, যাদুকাটা নদী ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ১২ কিলোমিটার, পুরাতন সুরমা ৮৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ কিলোমিটার খনন কাজ চলছে। তাছাড়া চামতি নদীর ২০ কিলোমিটার ও নলজোর নদীর ১০ কিলোমিটার খনন কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ দুটি নদীর খনন কাজে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ ৯২ হাজার এবং ১১ কোটি ৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা। পাউবো সূত্রে জানা যায় জেলার আবুয়া, নাইন্দা, সুরমা, পিয়াইন, পাটনাই, কেন্দুয়া সোমেশ্বরী, কাটাগাং, ঘাসি, মোনাই, কংস, কালনী, কুশিয়ারা, কামারখাল, হেরা, দারাইন, চামতি, মহাসিং ডাউকা, বিবিয়ানা, জিরাক, রুপসা, খাসিয়ামারা, দারাইন, চিলাই, মনাইচড়াসহ ছোট বড় অধিকাংশ নদী ভরাট হয়ে গেছে। এ সকল নদীগুলোর খনন করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নোট শীট উর্ধ্বতন মহলে প্রেরণ করা হলে গত ১১ মার্চ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা কর্তৃক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নকশা সার্কেল-১ বাপাউবো, ঢাকা কে আহবায়ক করে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি গটন করা হয়েছে। কমিটি সুনামগঞ্জ সরজমিন পরিদর্শন করে খননযোগ্য নদীর সম্ভাব্যতা যাচাই করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।