Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে

এখনই প্রস্তুতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে ধনী-গরিবের বৈষম্যও বেড়ে যাওয়ার দিকটি তুলে ধরে তা কমিয়ে আনতে মনোযোগী হওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে, তা মোকাবেলায় এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন আলোচকরা। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, নীতি-নির্ধারক, সাংবাদিকরা ঢাকার গুলশানের আমারি হোটেলের এই আলোচনায় অংশ নেন।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রেক্ষাপটে ‘উন্নয়নশীল বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জসমূহ’ শিরোনামে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন। বিশ্ব ব্যাংক নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে তোলার পর জাতিসংঘের মাপকাঠিতেও উত্তরণ ঘটছে বাংলাদেশের; স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উঠতে যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।
আলোচনায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু বৈষম্য কমছে না, বেড়েছে। তিনি অঞ্চলভিত্তিক কর্মসংস্থান ও শিক্ষার বৈষম্য বেড়ে চলার উদাহরণ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের থেকে বৈষম্য দ্বিগুণ হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধুর সময় (১৯৭৪ সাল) জাতীয় আয়ে বৈষম্য ছিল দশমিক ২৪। বর্তমানে সেটা হয়েছে দশমিক ৪৮।’
বৈষম্য সমাজকে ভেঙে ফেলে- মন্তব্য করে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ফাঁকটা হল এখানে, সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে যত টাকা পয়সা এসেছে, তা কি ১৬ কোটি লোকের কাছে না কি কিছু লোকের কাছে গেছে? এখন কিছু লোক বড় লোক হয়েছে, প্রবৃদ্ধি থেকে যা এসেছে, তা পাহাড়ের উপর দিয়ে গিছে, সমতল ভূমিতে পৌঁছায়নি।’
সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম সংবিধান অনুসরণে মানুষের জীবনমান ও বৈষম্য নিরসন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন একটা দ্বায়িত্ব নিয়ে আসে। এটা টেকসই রাখার সক্ষমতা আমাদের আছে কি না?
উন্নয়নের প্রথম দিকে বৈষম্য বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এক্ষেত্রে তিনি চীন, ভারতের উদাহরণ টানেন। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যের লাগাম টেনে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মির্জ্জা আজিজ।
দারিদ্র্য বিমোচনের হার ক্রমশ কমে যাওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বেশি উদ্বেগের বিষয়, দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতির হারটা ক্রমশ কমে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বাজার অর্থনীতির মধ্যে বৈষম্যসহ নানা ধরনের ভঙ্গুরতা থাকার উদাহরণ দেখান। তিনি বলেন, বাজার অর্থনীতির মধ্যে অনেক রকম ভঙ্গুরতা রয়েছে। আমাদের নিজেদের অনেক ক্রিয়েটিভ হতে হবে। আমেরিকায় বৈষম্য অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় শতক ধরে কীভাবে বৈষম্য বেড়েছে, তা একটি বইয়ের বরাত দিয়ে তুলে ধরেন তৌফিক ইলাহী।
প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ‘এখনই’
যে সব মাপকাঠিতে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে, গোলটেবিলে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে তিনটি শর্ত একসঙ্গে পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে পর্যবেক্ষণে থাকার পর অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম উঠবে বাংলাদেশের। স্বল্পোন্নত দেশ হলে বিভিন্ন সংস্থার সহজ শর্তে ঋণ এবং রপ্তানি পণ্যে বিশেষ সুবিধা আর থাকবে না। সভায় আলোচকরা বলেন, তবে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ নানাভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সুযোগ রয়েছে।
সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধিকে আমরা চাইলে দুই অঙ্কে নিতে পারতাম, কিন্তু আমরা পারিনি। কারণ আমাদের বিভিন্ন রকম সমস্যা ছিল। বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি সংস্থাগুলোকে সেবামুখী করা এবং অদক্ষতা দূর করতে সংস্কার চালানোর উপর জোর দেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। তিনি বলেন, সেবা দেওয়ার চেয়ে তারা কর্তৃত্ব করতে বেশি পছন্দ করেন। এই অবস্থাটা বদলাতে হবে।
বাংলাদেশের অগ্রগতিতে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কমবে না বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ। মির্জ্জা আজিজ বলেন, জাতিসংঘের স্বীকৃতির মাধ্যমে জাতি হিসেবে আত্মবিশ্বাস বাড়লেও ভবিষ্যতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেটা ঐকব্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। সরকারি কাজ কীভাবে ‘সমন্বয়ের মাধ্যম’ করা যায়, তার উপর গুরুত্ব দেন তিনি। আমীর-উল ইসলামও আমলাদের মান বাড়ানোর উপর জোর দেন। কোন ক্ষেত্রে কতটুকু উন্নয়ন হচ্ছে এবং কোথায় কতটুকু প্রয়োজন, সে বিষয়ে সরকারকে নিরীক্ষা চালানোর পরামর্শ দেন তিনি। পরিবেশবিদ আতিক রহমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হারুন-অর রশীদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসীদের হাতে ক্ষমতা থাকলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে ব্যারিস্টার আমীর বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কি কোটার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিল? কোটা চালু করে চাকরির জন্য একটা বেচা- কেনার জায়গা করা হয়েছে। সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ