Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

“বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারত বা ইন্দিরা গান্ধীর দয়ার দান নয়”

ভারতীয় দূতাবাসে দেয়া স্মারকলিপিতে বিশিষ্ট নাগরিকগণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিজেপি থেকে নির্বাচিত আসামের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিশিষ্টজনরা। ভারতীয় দূতাবাসে দেয়া স্মারকলিপিতে শিলাদিত্যের মন্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানানো হয়। গত ১৯ মার্চ আসামের এমএলএ শিলাদিত্য আসামের একটি সংবাদ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন করাটা ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকারের বিরাট ভুল এবং ভারতের উচিত ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরই বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া”। শিলাদিত্যের মতে, “আসামের প্রতিটা ধর্ষণেই বাংলাদেশী মুসলমানরা জড়িত। সারা বিশ্বেই মুসলমানদের অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি।”
বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এই প্রতিবাদলিপিটি পাঠিয়েছেন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম, সাংবাদিক সাইয়্যিদ মুক্তাদুল হুসাইন ও সাংবাদিক মুহম্মদ আরিফুর রহমান; বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট এস.এম.শফিকুল ইসলাম, ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মুহম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিশিষ্ট ফার্মাসিস্ট এ.বি.এম.রুহুল হাসান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ মুহম্মদ আব্দুল আলী, বিশিষ্ট প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম মিয়া। গত বৃহস্পতিবার সকালে স্মারকলিপিটি ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে হস্তান্তর করা হয়। ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তা সেলিনা।
বিজেপি সাংসদের মন্তব্য প্রসঙ্গে স্মারকলিপিতে বলা হয়, আসাম বা ভারতের অন্য কোনো অঞ্চলে সংঘটিত অপরাধসমূহের সাথে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো একান্তভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যেগুলোর উদ্ভব ও বিকাশ ভারতের ভেতরেই।
বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার চিন্তাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, আপত্তিজনক ও অবমাননাকর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে স্মারকলিপিতে। বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, যদিও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের বিশাল সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের জনগণ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ, তবু শিলাদিত্যের মতো রাজনীতিবিদদের এটা স্পষ্টভাবে জানা উচিত যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারত বা ইন্দিরা গান্ধীর দয়ার দান নয়। বরং বাংলাদেশের জনগণই মুক্তিযুদ্ধ ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয় “সারা বিশ্বেই মুসলমানদের অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি”- শিলাদিত্যের এই মন্তব্যকে ভিত্তিহীন, অসত্য, অপমানজনক ও অশিষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে কম। বরং ভেনেজুয়েলা, পাপুয়া নিউ গিনি, হন্ডুরাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ভারতের মতো অমুসলিম-প্রধান দেশগুলোতেই অপরাধের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর জন্য ভারতের কতিপয় রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তার বাংলাদেশকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়ার প্রবণতাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় স্মারকলিপিতে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, “বাংলাদেশকে জড়িয়ে আসামের বিধায়কের এমন ভিত্তিহীন, নিম্নমানের ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যে বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভারতীয় জনগণের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বের কেবল ক্ষতিই হবে।” এভাবে অন্য দেশের ঘাড়ে দোষ চাপানোটা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্য বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়। স্মারকলিপিতে আসামের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের উল্লেখিত মন্তব্যসমূহ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয় ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ