Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যান চলাচলের অযোগ্য এক বছরেই!

প্রকল্পে মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুধুই দুর্ভোগ। সড়কের সঙ্গে মালবাহী বাহনের অসামঞ্জস্য, অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল ছাড়াও দুর্ভোগের পেছনে অন্যতম কারণ ত্রুটিপূর্ণ মেরামত। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে উচু নিচু হত্তয়ায় যানবাহন চলছে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হেলেদুলে মন্থরগতিতে। তিশা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক নাইমুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চার লাইনের কাজ শেষ হত্তয়ায় ভেবেছিলাম আরোও কয়েক বছরেও মহাসড়কে ভাঙন ধরবে না। কিন্তু কয়েক মাসেই মহাসড়ক আগের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ নির্মাতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সড়কের ভারবাহী ক্ষমতার কোনো ক্ষতি হবে না, কোনো সংস্কারও করতে হবে না। কিন্তু মাত্র এক বছর পার না হতেই সড়কটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কুমিল্লা অঞ্চলের ১২৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম জোনের ৬৬ দশমিক ৩৮ কিলোমিটারসহ ১৯০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এ প্রকল্পে মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থান বিশেষে মজবুতকরণ, সিগন্যাল ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবও করা হয়েছে পাঠানো ডিপিপিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য সংস্কারের এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা দাবি করছেন, স্কেলে দুর্নীতি, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ভারবাহী যান চলাচল এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর কারণেই হাজার কোটি টাকার সড়কের এই হাল। সওজ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সদ্যসমাপ্ত চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফতাব হোসেন খান বলেন, সড়ক দিয়ে সংখ্যায় বেশি এবং ওভারলোডেড যানবাহন চলাচল করায় সঙ্গত কারণেই প্রতিদিন মেগা এ প্রকল্পের ক্ষতি হচ্ছে। মেরামতও চলছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রায় ছয় মাস আগেই এ সড়কে পাঁচ বছর ধরে সংস্কারের জন্য প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যখন এটি নির্মাণ করছিল তখন প্যানেল অব এক্সপার্টদের পক্ষ থেকেও অত্যধিক ভারবাহী যান চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কটি নিয়মিত পরিচর্যা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চৌদ্দটি পয়েন্টে সারা বছরই লেগে থাকে দুর্ভোগ। চার লেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এই চৌদ্দটি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছিল। এগুলো হল কুমিল্লার দাউদকান্দি, গৌরীপুর, চান্দিনা, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম চট্রগ্রামের ভাটিয়ারী, বাড়বকুন্ড, সীতাকুন্ড সদর, বড় দারোগাহাট, মিরসরাইয়ের হাদি ফকিরহাট, মিরসরাই পৌরসদর, মিঠাছড়া ও বারইয়ারহাট পৌরসদর। ওইসব পয়েন্টে বড় ধরনের মেরামত এবং একাধিকবার বিটুমিনের প্রলেপ দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই অতিরিক্ত গাড়ীর চাপ ও ভাড়ি যানবাহন চলাচলের কারণে বিটুমিনের প্রলেপ এবং মাস না যেতে ফের আগের পরিণতি হয় বড় ধরনের মেরামতও। ফলে যানবাহন বিকল হয়ে সৃষ্ট যানজটে মাইলের পর মাইলজুড়ে সৃষ্টি হয় সড়ক পথের হাহাকার। গত দুদিন ধরে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নানা চিত্র দেখা গেছে। চৌদ্দটি পয়েন্টের কোথাও কোথাও মাটি নষ্ট হয়ে গেছে উল্লেখ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আরিফুর রহমান জিন্নাহ এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছিলেন, এই চৌদ্দটি পয়েন্টে যানবাহন চলাচলের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে মাটি পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এবারের বর্ষার আগে চৌদ্দটি পয়েন্টে যথোপযুক্ত সংস্কার করে মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ দিতে প্রকল্পের উদ্যোগ রয়েছে। তবে নিজেদের ত্রæটির কথা অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, অতিরিক্ত যানবাহন এবং অতিরিক্ত মালবাহী গাড়ির চাপে সড়কের এমন পরিণতি হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, এ সড়কের হার্ড সোল্ডারের পাশে মাটির অংশে পানি জমে থাকে। একই অবস্থা ফেনী রেললাইন এলাকায়ও। নিয়মিত এ মহাসড়ক চলাচল করেন আকরাম উল্লাহ তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সীতাকুন্ডের বারৈয়ারহাটসহ একাধিক পয়েন্টে ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। চার লেন সড়কটির নকশা করার সময় সম্মিলিত আদর্শ স্কেল বা ভারবহন ক্ষমতা ধরা হয় সাড়ে নয় কোটি, যা ২০২৩ সালে অতিক্রম করার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, ২০১৭ সালেই আদর্শ স্কেলের এর ভারবহন ক্ষমতা অতিক্রম করেছে সড়কটি। ২০১৭ সালে চার লেনে ট্রাফিক ও এক্সেল লোড সমীক্ষা থেকে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। এতে দৈনিক প্রায় ৬০ হাজার যান (যেগুলোর মধ্যে ১০-১২ হাজার ওভারলোডেড ট্রাক-কার্ভাডভ্যানও রয়েছে) চলাচল করায় মহাসড়কটিতে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সওজের গাইডলাইন অনুসরণ না করায় মহাসড়কটির আয়ুস্কালও দ্রুত কমে আসছে। এতে আগামী বছরগুলোতে সড়কটির উপরিভাগ স্বাভাবিক রাখা দুস্কর হয়ে উঠবে। বর্ষাকালে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা।



 

Show all comments
  • Shihab Ahmed ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    মহা উন্নয়নের ধকল সইতে পারছেনা - তাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Salim Mahmud Hussain ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    উন্নয়নশীল দেশের চিত্র এটা।
    Total Reply(0) Reply
  • Moshiur Rahman Rahman ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী অবদান।
    Total Reply(0) Reply
  • GM Alamgir hossain Alam ২৪ মার্চ, ২০১৮, ৫:০৫ পিএম says : 0
    Gaari sushu Bangladesh ei chole..
    Total Reply(0) Reply
  • গনতন্ত্র ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:১৭ এএম says : 0
    জনগন বলছেন, মানুষকে আংগুল দিবো না নিজের কাজ দেখবো ?? চাপাবাজ ৷ শেব দিয়া লেপ দিছে, উন্নয়ন কইরা ছিরা ফেলছে ৷হায়রে ! লুট-পাট, আখেরি খাওয়া খাইছে ৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ